জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম । জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পর দলিল পাওয়া যায়?
জমি বায়না করার পর রেজিস্ট্রি করতে হবে এবং রেজিস্ট্রি বায়না দলিল মাত্র ০৩ মাস কার্যকর থাকে – জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম
জমি দলিল করার নিয়ম-আপনি মাঠ পর্চা, হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের রশিদ (দাখিলা), ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), প্রয়োজনীয় বায়া দলিল সমুহ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট অথবা জন্ম সনদপত্র এবং দু’পক্ষ অর্থাৎ দাতা গ্রহীতা ভেন্ডারের কাছে গিয়ে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ক্রয় করে সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট প্রিন্টকৃত দলিল উপস্থাপন করে এবং স্বশরীরে হাজির ও শুনানি জবাবের মাধ্যমে দলিল সম্পন্ন করবেন।
জমি বায়না করার কত দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হবে? জমি বিক্রির জন্য জমির বায়নানামা (বিক্রির চুক্তিপত্র) সম্পন্ন করা হলে তা রেজিস্ট্রি করতে হবে। জমির বায়নানামা সম্পাদনের তারিখ থেকে এক মাসের (৩০ দিন) মধ্যে বায়নাটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। আর শর্ত অনুযায়ী বায়নার চুক্তি অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করার সব পদ্ধতি মেনে সাব-কবলা দলিলটি সম্পাদিত হলে সম্পাদনের পর থেকে (০৩) তিন মাসের মধ্যে সাব-কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রি করাতে হবে। আইন অনুযায়ী, তিন মাস পার হয়ে গেলে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। তবে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করার সুযোগ আছে।
বিক্রেতার নিকট হতে কি কি কাগজ নিতে হবে? বিক্রেতার নিকট থেকে জমির মালিকানা সম্পর্কিত কাগজপত্র যেমন, প্রয়োজনীয় বায়া দলিল, খতিয়ান (সি,এস, এস,এ, আর,এস, বা বি,এস, নামজারি বা খারিজ ইত্যাদি আপনার জন্য যেটি প্রযোজ্য), ভূমি উন্নয়ন কর (পূর্বে খাজনা নামে পরিচিত ছিল) পরিশোধের রশিদ, মৌজা ম্যাপ, টিআইএন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র/ পাসপোর্ট/ জন্মসনদপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। আপনি না পারলে কোন দলিল লেখকের সাহায্য নিন।
মূল দলিল সময়মত সংগ্রহ করুন / দলিল দাবীবিহীন অবস্থায় ২ (দুই) বছরের বেশি রেজিস্ট্রি অফিসে পরে থাকলে ধ্বংস করা হতে পারে
ম্যাপে জমি আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে। কোনভাবে ভিন্ন দাগের জমি রেজিস্ট্রি করলে হবে না। যে দাগে ক্রয় করবেন ঐ দাগে বিক্রেতার জমি থাকতে হবে।
Caption: Land Registry rule
জমি রেজিস্ট্রিকরণ ধাপ । যে ধাপগুলো মেনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন
- দলিল প্রস্তুতকরণ- বিক্রেতার নিকট থেকে সংগৃহীত কাগজ-পত্র সঠিক পাওয়া গেলে খতিয়ান ও ম্যাপ অনুসারে জমির অবস্থান ঠিক আছে কিনা তা একজন আমিন দ্বারা মেপে দেখতে হবে। এরপর একজন দলিল লেখক বা আইনজীবীর মাধ্যমে দলিলের সরকার নির্ধারিত ফরমেট অনুসরণ করে দলিল প্রস্তুত করতে হবে।
-
প্রস্তুতকৃত দলিলটি যাচাইকরণ-প্রস্তুত হয়ে গেলে দলিলটি ভালভাবে পড়ে দেখতে হবে যে, দলিলের ‘তফশীল’ অংশে মৌজার নাম, জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমান সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা এবং ‘হাত নকশা’ অংশে সঠিকভাবে জমির ম্যাপ অনুসারে হাত অংকন করা হয়েছে কিনা।
- দলিল সম্পাদন- সম্পত্তি হস্তান্তর দলিলের ১৭ নং কলামে নাম স্বাক্ষর এবং ৩ নং কলামের ক্রেতা/গ্রহিতার ছবি ও স্ট্যাম্পে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির টিপ এবং নাম-স্বাক্ষর করতে হয় (এমনভাবে টিপ ও নাম-স্বাক্ষর করতে হয় যাতে টিপ ও নাম অর্ধেক ছবিতে ও অর্ধেক স্ট্যাম্পে পড়ে) এগুলো খেয়াল করতে হবে। মোট কথা আপনি অথবা দক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে লেখা ভাল করে ডকুমেন্টের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।
- দলিল সম্পাদনের পর মূল দলিল- এল,টি নোটিশ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একসেট ফটোকপি এবং বিভিন্ন খাতে রেজিস্ট্রেশন ফি, কর ও শুল্ক পরিশোধের মূল পে-অর্ডার (একসেট ফটোকপিসহ) সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মূল কাগজপত্র সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক দলিল পরীক্ষা এবং সম্পাদনকারী (দাতা/বিক্রেতা বা অন্য পক্ষ) কর্তৃক সম্পাদন স্বীকার করার পর রেজিস্ট্রি অফিসে রক্ষিত ‘টিপের বহি’তে সম্পাদনকারীর বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির টিপ গ্রহণ করা হয়। এভাবে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল গ্রহণ করার পর দলিলের দাখিলকারী বা দাখিলকারী কর্তৃক মনোনীত অন্য কোন ব্যক্তিকে ‘৫২ ধারার রশিদ’ প্রদান করা হয়। এই রশিদ সযত্নে সংরক্ষণ করতে হবে কেননা রেজিস্ট্রির পর মূল দলিল ফেরত নেওয়ার সময় এই রশিদ রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দিতে হয়।
- দলিল রেজিস্ট্রি- রেজিস্ট্রি অফিসে ‘রেজিস্ট্রির জন্য দলিল গ্রহণ’ ও ‘দলিল রেজিস্ট্রি’ একই বিষয় নয়। রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে যে দলিলটি গৃহিত হলো তা রেজিস্ট্রি করতে অফিসভেদে দুই-তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। রেজিস্ট্রির জন্য গৃহিত দলিলে প্রথমে দলিল দাখিলকারী, সম্পাদনকারী, সনাক্তকারী, দলিল দাখিলের সময়-তারিখ, পরিশোধকৃত ফি, কর ও শুল্ক ইত্যাদি বিষয়ে পৃষ্টাঙ্কন ও সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষরের পর দলিলটি বালাম (ভলিউম) বহিতে ধারাবাহিকভাবে নকল করা হয়। এরপর মূল দলিলের শেষ পৃষ্টার উলটো পার্শ্বে ‘দলিলটি কত সালের, কত নম্বর বালাম বহির, কত পৃষ্টা থেকে কত পৃষ্টায় নকল করা হয়েছে’ তা লিখে সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করা হয়। দলিলটি বালাম বহিতে নকলকরা এবং সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করার নাম দলিল রেজিস্ট্রি। দলিলটির রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হলে দলিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ (দাতা/বিক্রেতা-গ্রহিতার নাম, মৌজার নাম, দাগ নম্বর ইত্যাদি) নিয়ে ‘সূচিবহি’ তৈরি করা হয়, যাতে দলিলটি ভবিষ্যতে সহজেই খুজে পাওয়া যায়।
- মূল দলিল ফেরত- দলিলের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিলের সময় প্রদানকৃত ‘৫২ ধারার রশিদ’ জমা দিয়ে দাখিলকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তি মূল দলিল গ্রহন করতে পারেন। দলিল ফেরত গ্রহনের নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে মুল দলিল ফেরত না নিলে পরবর্তী প্রতি মাস বা তার অংশ বিশেষের জন্য ৫ টাকা হারে জরিমানা আদায় করা হয়। তবে বিলম্ব যত মাসই হোক না কেন, জরিমানা ১০০ টাকা এর বেশী আদায়ের বিধান নাই।
-
রেজিস্ট্রি শেষ হওয়ার পর কোন দলিল দাবীবিহীন অবস্থায় ২ (দুই) বছরের বেশি রেজিস্ট্রি অফিসে পরে থাকলে “রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮” এর ৮৫ ধারার বিধান মতে, রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের পূর্ব অনুমোদনক্রমে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা যায়।
জমির মূল দলিল কতদিন পর হাতে পাওয়া যায়?
সহকারী ভূমি কমিশনারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি কার্য সম্পন্ন হওয়ার পরের দিন অর্থাৎ মাত্র একদিন পরই আপনি অবিকল দলিলের নকল পেতে পারেন। আগামী সাত (০৭) দিনের মধ্যেই আপনি মূল দলিল পেতে পারেন। গাজীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস এখন একদিনেই নকল ও ৭ দিনে জমির মূল দলিল পাচ্ছেন জমি ক্রেতারা। শত বছরের পুরোনো দলিল হলেও মাত্র তিনদিনেই দেয়া হচ্ছে তল্লাশি দলিল। দেশের আর কোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এমন সেবার কাজের নজির নেই-সূত্র দেখুন। কোন কোন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে মূল দলিল পেতে ২-৩ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তাই রেজিস্ট্রি কাজ শেষ হলেই একটি নকল এবং রশিদ সংগ্রহ করে রাখুন।