বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং ভ্রমণে কত খরচ লাগে? এবং দার্জিলিং ভ্রমণের নিয়ম

ঢাকা থেকে দার্জিলিং এবং কলকাতা থেকে দার্জিলিং

ঢাকা থেকে দার্জিলিংয়ে 

মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের থেকে দার্জিলিং যাওয়া যায়। দার্জিলিং পশ্চিমবাংলার এক অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ি শহর। দার্জিলিং ভারতে অবস্থিত। পাহাড় পর্বত যদি এই প্রতিমার মুকুট হয় তবে পাহাড়ের রানী দার্জিলিং সেই মুকুটের অন্যতম সেরা পালক । বাঙালির সাথে দার্জিলিংয়ের নাড়ির যোগ, প্রত্যেক বাঙালি চান একবার অন্তত দার্জিলিং ভ্রমণ করতে, তাই পাহাড়ে বারো মাসই ভিড়, আর এই ভিড়কে হাতিয়ার করে চলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। তবে চিন্তার কিছু নেই আজ আমি আপনাদের কে দেবো দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড 23টি দর্শনীয় স্থানের।

কীভাবে যাবেন দার্জিলিং?

মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের থেকে দার্জিলিং যাওয়া যায়  খুব সহজেই এবং কলকাতা থেকে খুব সহজেই দার্জিলিং যাওয়া যায়, দার্জিলিং শহরের নিকটবর্তী রেল স্টেশন হল নিউজলপাইগুড়ি , এছাড়া নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল বাগডোগরা বিমানবন্দর । মূলত তিন ভাবে দার্জিলিং যাওয়া যায় ট্রেনে বিমানে ও সড়ক পথে ।

দার্জিলিং কোথায় অবস্থিত এবং কোথায় কি আছে

.দার্জিলিং কোথায় অবস্থিত

দার্জিলিং পশ্চিমবাংলার এক অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ি শহর। সমুদ্রতল থেকে 6700 ফুট উঁচুতে নেপাল ও সিকিম সীমান্তে 7.43 কিমি অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত এই দার্জিলিং শহর। শিলিগুড়ি (সমতল শহর) থেকে প্রায় 60 কিমি দূরে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই শহর।

২.দার্জিলিংয়ের ইতিহাস 

উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ব্রিটিশরা এই এলাকায় একটি স্যানেটরিয়াম ও একটি সামরিক ডিপো স্থাপন করেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনার প্রায় 15 বছর পর 1815 সাল নাগাদ এই দার্জিলিং শহরে মানুষ বসবাস শুরু করেন । ধীরে ধীরে লেপচা শেরপা গোর্খা ভুটিয়া বাঙালি জাতির মানুষ এই শহরে বসতি গড়ে তোলে । তারা কালো চায়ের শংকর উৎপাদন করতে থাকে ও এক বিশেষ ধরনের গাঁজন প্রক্রিয়ার উদ্ভাবনা করেন ও যার ফলে দার্জিলিং চায়ের উদ্ভব ঘটে। যা পরে আন্তর্জাতিক স্তরের মর্যাদা লাভ করে ।

.দার্জিলিং কিসের জন্য বিখ্যাত | কেন যাবেন দার্জিলিং?

দার্জিলিংয়ের সৌন্দর্য পাহাড়ের গায়ে পাইন গাছের সারি আর পাইন গাছের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাওয়া নীল আকাশ আর তার মধ্যে দিয়ে মেঘের আনাগোনা, এই মেঘ তো এই বৃষ্টি আবার রোদ প্রকৃতির এমন বিচিত্র সৌন্দর্য দেখতে আসতেই হবে দার্জিলিং।

৪.উন্নত মানের চা

উন্নত মানের চা উৎপাদনের জন্য দার্জিলিং শহর টা বেশ জনপ্রিয়। তাই চা প্রেমিদের কাছে দার্জিলিং সবচেয়ে প্ৰিয় জায়গা।

৫.নস্টালজিয়া

এই দার্জিলিং শহর টি সমস্ত বাঙালির মনে এক নস্টালজিয়া। আমরা ছোট্ট থেকে বিভিন্ন লেখকের গল্পে কিংবা বাড়ির বড়দের মুখে দার্জিলিং শহরের কথা শুনে আসছি। প্রতিটি বাঙালি কম বেশি দার্জিলিং নিয়ে জানেন। আর আমার মত ফেলুদা প্রেমিকরা জানেন এখান থেকেই কিন্তু ফেলুদার গোয়েন্দাগীরি শুরু দার্জিলিং জমজমাট দিয়ে

৬.একঘেয়েমি জীবনযাপন থেকে মুক্তি

দার্জিলিং আমাদের মতো ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির কাছে প্রতিদিনের একঘেয়েমি জীবনযাপন থেকে কম খরচে মুক্তি পাবার ও চিন্তা মুক্ত হবার জন্য সেরা জায়গা।

এছাড়াও দার্জিলিং বিখ্যাত তার আরও 27 টি সুন্দর সাইট সিন এর জন্য, যার মধ্যে আছে বাতাসিয়া লুপ, টাইগার হিল ও কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট ইত্যাদি।

৭.দার্জিলিং দর্শনীয় স্থান

দার্জিলিঙে অনেক কিছু দেখার আছে, পুরো দার্জিলিং শহর টা সৌন্দর্যে ভরপুর । তো এবার বলি কোন কোন জায়গা দেখবেন। দার্জিলিঙে বা সিকিম বা বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলের গাড়ি চালকরা নিজেদের সুবিধা মত 5 ভিউ পয়েন্ট 7 ভিউ পয়েন্ট মিক্স ভিউ পয়েন্ট এই ভাবে বিভিন্ন প্যাকেজ করে থাকেন, সেটি নিঃসন্দেহে খারাপ না তবে আরো ভালো হবে যদি আপনি আপনার ড্রাইভার কে রাজি করিয়ে বা আপনার পছন্দ মত ট্যুরটা সাজাতে পারেন ।

৮.টি গার্ডেন চা বাগান

ড্রাইভারকে বলে দিন যেকোনো একটা চা বাগান ঘুরে দেখাতে। পাহাড়ের কোলে ঘুরতে এসে হাতে চায়ের কাপ থাকবে না তা কি হয় ? তবে খুব কাছ থেকে চা চাষ, চা খেয়ে দেখতে ও বাগানের ভিতরে প্রবেশ করে ছবি তুলতে সব থেকে ভালো গোপাল ধারা টি গার্ডেন যা ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন এবং কাছের হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেন।

৯.দার্জিলিং রঙ্গমঞ্চ ভবন

দার্জিলিং স্টেশন থেকে মাত্র 15 মিনিটের পথ এই দার্জিলিং রঙ্গমঞ্চ ভবন বা গোর্খাল্যান্ড রঙ্গমঞ্চ ভবন, সাইড সিন করার সময় এক ফাঁকে দেখে নিন এই দার্জিলিং রঙ্গমঞ্চ ভবন ।

১০. দার্জিলিং এর খাবার ? এবং দার্জিলিংয়ে কি কি খাবেন?

দার্জিলিঙে বর্তমানে আপনি সব ধরনের খাবার পাবেন, বাঙালী খাবার থেকে শুরু করে চাইনিজ, জাপানিস, মুঘলাই, তিব্বতিয়ান সব রকম খাবারই পাবেন। তবে দার্জিলিঙে গিয়ে অবশ্যই দার্জিলিং এর মোমো, Vegetable Soup, থুকপা Nepali and Tibetan noodle soup , চুরপি Traditional cheese, সেকুয়া Meat roasted, নুডুলস, দার্জিলিং চা, অবশ্যই খাবেন।

১১.দার্জিলিং এর ভালো কিছু রেস্তোরাঁ

  •  কেভেন্টার্স- কেভেন্টার্সের ইংলিশ ব্রেকফাস্ট আর হট চকোলেটের ভক্ত ছিলেন আমাদের ফেলুদাও । কেভেন্টার্সের আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে তোলে কেভেন্টার্সের ছাদ, যার ভিউ অসাধারণ।
  • গ্লেনারিজ- কন্টিনেন্টাল খাবার সাথে এদের নিজস্ব বেকারির কেক পেস্ট্রি আর সঙ্গে অবশ্যই এক কাপ গ্লেনারিজ স্পেশাল চা।
  •  নাথমুলস- অসাধারণ ভিউ আর স্পেশাল চা এই রেস্তোরার বৈশিষ্ট্য, তার সঙ্গে হালকা নিরামিষ স্ন্যাকস নিয়ে বসে যান আর জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে কাটান বিকেলটা।
  • কঙ্গা রেস্তোঁরা- তিব্বতি এবং চিনা খাবার বলতে যার কথা মাথায় আসে সেটি কঙ্গা রেস্তোরা, এদের থুপ্পা আর মোমো মুখে দিলেই আপনার দার্জিলিং জমজমাট।

দার্জিলিং ভ্রমণে কত খরচ লাগে ?

মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের থেকে দার্জিলিং এসি বাস প্রতি বলার ৮৭ টাকা হিসেবে ৪৯০৫ টাকা, নন এসি ৩৮০৫ টাকা 

দার্জিলিং ভ্রমণ কত খরচ লাগবে সেটা নির্ভর করে আপনি কোন সময় যাচ্ছেন ও কি ধরনের হোটেল নিচ্ছেন তার উপরে তবে ন্যূনতম ২০০০০ টাকার মধ্যে খুব ভালোভাবে দার্জিলিং ঘুরে আসা যায় । এছাড়া যদি কম বাজেটের হোটেল নেন ও শিলিগুড়ি থেকে বাসে দার্জিলিং পৌঁছান তাহলে আরো কমে হয়ে যেতে পারে । ঢাকা থেকে বিমানে দার্জিলিং যেতে পারেন 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *