ঈদে বেড়ানোর জায়গা । ঘুরাঘুরির সময় ও খরচ কত হবে?
ঈদে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার যেসব জায়গা-ঢাকায় ঈদে ঘুরতে যাওয়ার জায়গাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির বিস্তারিত এখানে তুলে ধরা হল-যা আপনার পছন্দের তালিকায় রাখা যেতে পারে- ঈদে বেড়ানোর জায়গা
জাতীয় চিড়িয়াখানা- মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঈদের সময় দর্শনার্থীর ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গত দুই বছর করোনার কারণে বিশেষ এ দিনে অনেকে বেড়াতে যেতে পারেননি। করোনা সংক্রণ পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠায় এবার চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের সমাগম বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঈদের দিন না হলেও ঈদের পরের দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের ঢল নামবে চিড়িয়াখানায়। প্রতিদিনের মতই সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা।
জাতীয় জাদুঘর ও স্বাধীনতা জাদুঘর- ঈদের দিন জাতীয় জাদুঘর ও এর আওতাধীন স্বাধীনতা জাদুঘর বন্ধ থাকবে। তবে ঈদের পরদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই দুই বিনোদন কেন্দ্র। এদিন শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না।
হাতিরঝিল- ইটপাথরের এই ব্যস্ত শহরে ক্লান্তিকর নাগরিক জীবনে রাজধানীর হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র। দিনে কিংবা রাতে যে কেউই ঘুরে আসতে পারেন হাতিরঝিলে। সন্ধ্যা হলেই বেশি জমে ওঠে পুরো হাতিরঝিল এলাকা। বিভিন্ন নকশায় তৈরি এসব ব্রিজের নিচের রঙিন আলো পুরো পরিবেশকে দিয়েছে অন্য এক রূপ। পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখতে চাইলে রয়েছে চক্রাকার বাস সার্ভিসও। এছাড়া হাতিরঝিলের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য রয়েছে ওয়াটারবাস।
লালবাগ কেল্লা- রাজধানীর বিনোদন প্রেমী মানুষদের অন্যতম পছন্দের জায়গা পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা। প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী এই কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে পরী বিবির মাজার। এখানে রয়েছে দরবার হল, নবাবের হাম্মামখানা। আছে শাহি মসজিদ। রয়েছে একটি জাদুঘরও। লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রাচীন দুর্গ। মোগল আমলে স্থাপিত দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত। আর সে কারণেই এর নাম হয়েছে লালবাগের কেল্লা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ঈদে লালবাগ কেল্লা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা। তবে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের টিকেট লাগে না।
ফ্যান্টাসি কিংডম- থিমপার্কগুলোর মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি কিংডম। ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্র ঈদের প্রথম সাতদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বড়দের প্রবেশমূল্য ৪০০ টাকা। ছোটদের (৪ ফুটের নিচে) ২৫০ টাকা এবং শিশুদের (৩ ফুটের নিচে) প্রবেশ একদম ফ্রি। এতে রয়েছে নানা রকমের রাইড। এসব রাইডে চড়ার জন্য কোনো প্যাকেজ থাকছে না। তবে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে রাইডে চড়তে হবে। সাঁতার কাটার ব্যবস্থা রয়েছে ওয়াটার কিংডমে।
নন্দন পার্ক- সাভারের নবীনগরের অবস্থিত নন্দন পার্কে নানা রকম রাইড আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি আছে ছোট চিড়িয়াখানাও। ঈদ উপলক্ষে কনসার্টের ব্যবস্থা থাকছে এখানে। নন্দন পার্ক খোলা থাকবে প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
দিয়াবাড়ি- রাজধানীর বিনোদন প্রিয় মানুষদের কাছে একটি প্রিয় নাম উত্তরায় অবস্থিত দিয়াবাড়ি। শরতে কাশবনের সৌন্দর্য দেখতে দিয়াবাড়িতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। এছাড়া বছরের অন্য সময়গুলোতেও দিয়াবাড়ির বটগাছ, প্রাকৃতিক শোভা দেখতেও মানুষের ঢল নামে। দর্শনার্থীদের জন্য দিয়াবাড়ির অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে চলা তুরাগ নদের শাখায় বেশকিছু নৌকা আছে। এসব নৌকায় চড়ে ঈদের ছুটিতে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন ব্যস্ত নগরীর মানুষেরা।
সাগুফতা- কালশী নতুন সড়ক ধরে মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলে ফাঁকা জায়গায় পাবেন নাগরদোলা। আছে ঘোড়ার পিঠে চড়ার ব্যবস্থাও। বেলুন, খেলনার দোকান মিলিয়ে পুরো জায়গায় থাকে গ্রামীণ মেলার আমেজ। রাস্তার পাশে কিছুটা ফাঁকা জায়গা এবং ঝিল থাকায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন এখানে। ঘোরাঘুরি শেষে দেশি-বিদেশি খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগও আছে সাগুফতা এলাকায়। মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে নেমে কিংবা কালশী নতুন রাস্তার মোড়ে নেমে রিকশায় যাওয়া যাবে সাগুফতায়।
শিশুমেলা- শিশু-কিশোরদের অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলা। এখানে আছে ৪০টির মতো রাইড। পরিবারের সবার চড়ার মতো আছে ১২টি রাইড। শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের প্রথম সাতদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এটি। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।
বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক- বৈশাখের তীব্র গরমে বইছে মৃদু হাওয়া। এই সময়ে শানবাঁধানো নদীর ঘাটে বাঁধা নৌকার দৃশ্য সত্যিই মনোরম। তেমনি পরিবেশ বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে। চাইলে এখানে নৌকায় করে ঘুরতে পারবেন ভ্রমণ প্রিয় মানুষ। সেখানে একপাশে পাতা বেঞ্চে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মশগুল হওয়ার সুযোগও রয়েছে। গাছগাছালিতে ভরপুর সুশীতল জায়গা এটি। গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে পাকা রাস্তা। শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি। সবুজ বৃক্ষরাজি আর বুড়িগঙ্গা নদী পার্কটিকে করে তুলেছে নয়নাভিরাম।
আহসান মঞ্জিল- পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোগল আমলের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহসান মঞ্জিল। ঈদের ছুটিতে এটি খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশমূল্য ১৫ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা আর প্রতিবন্ধীদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত।
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক- ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক ঢাকার সায়েদাবাদ রেলক্রসিংয়ের পাশে অবস্থিত। এটি খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এখানে ১৩টি রাইডের মধ্যে রয়েছে ফ্লাওয়ার কাপ, মিনি ক্যাব, বেবি কার, টয় ট্রেন, ভয়েজার বোর্ড, টুইস্টার, সুপার চেয়ার, মেরি-গো-রাউন্ড, ওয়ান্ডারল্যান্ড হুইল ইত্যাদি। প্রবেশমূল্য ছোট-বড় সবার জন্য ৫০ টাকা। আর সব রাইডের মূল্য ৫০ টাকা করে।
বলদা গার্ডেন- যাত্রাবাড়ী যাওয়ার আগে ওয়ারী প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত বলদা গার্ডেন। গাছগাছালিতে এক মনোরম পরিবেশ গড়ে উঠেছে সেখানে। ঈদের দিন চাইলে বন্ধু বা পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর একটি উপযুক্ত জায়গা এটি। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিনা টিকিটে বেড়ানো যাবে বলদা গার্ডেনে।
তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক- নতুন নতুন চমকপ্রদ রাইড ও মজার সব খেলনা উপভোগ করে ঈদের আনন্দকে আরও প্রাণবন্ত করতে তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। তাই সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন এই পার্ক থেকে। এটি ঢাকার মিরপুর-১ এ অবস্থিত। তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান- মিরপুরে অবস্থিত সুবিশাল প্রকৃতিক পরিবেশে ঘেরা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি প্রেমীরা চাইলে এখানে ঘুরে আসতে পারবেন সপরিবারে।
ঢাকার কাছে দর্শনীয় স্থান- সোনারগাঁ- বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁ। এখানে ঘুরতে গেলে দেখতে পাবেন লোকশিল্প জাদুঘর,পানাম নগরী ও কারুশিল্প মেলা। এর অবস্থান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। যাত্রাবাড়ি থেকে (কাঁচপুর হয়ে যেতে হয়) ২০ মিনিটের পথ।
বাসাইল এর বাশুলিয়া, টাঙ্গাইল সদর , টাঙ্গাইল
ড্রিম হলিডে পার্ক- নরসিংদী জেলার পাঁচদোনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ড্রিম হলিডে পার্ক (Dream Holiday Park) এর অবস্থান। প্রায় ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত পার্কটিতে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার বাম্পার কার, রাইডার ট্রেন, বাইসাইকেল, রকিং বর্স, স্পিডবোট, সোয়ানবোট, জেড ফাইটার, নাগেট ক্যাসেল, এয়ার বাইসাইকেল রয়েছে। এখানে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ইমু পাখি, মায়াবি স্পট,কৃত্রিম অভয়্যারণ্য, ডুপ্লেক্স কটেজ এবং কৃত্রিম পর্বত তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও এই পার্কে ওয়াটার পুল স্থাপন করা হয়েছে। এট্রি ফি ৩০০+ টাকা।
ঢাকার বাইরে পর্যটন কেন্দ্র ও ঘুরতে যাওয়ার জায়গা- ঈদের লম্বা ছুটিতে শহরের বাইরে থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির মতো বৈচিত্র্যময় জায়গায় ঘুরলে আনন্দ পাবেন।
চট্টগ্রাম- বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রয়েছে ফয়েজ লেক, পতেঙ্গা সৈকত, ওয়ার সিমেট্রি, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, ভাটিয়ারী, মিরসরাই মহামায়া লেক ও কালুর ঘাট মিনি বাংলাদেশ।
কক্সবাজার- যারা সমুদ্র ভালোবাসেন তারা যেতে পারেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। এ ছাড়া ঘুরতে যেতে পারেন হিমছড়ি, কুতুবদিয়া, ইনানী, রামু, মহেশখালীর মতো জায়গায়।
বান্দরবান- বান্দরবানকে পাহাড়িকন্যার সঙ্গে তুলনা করা হয়। এখানে স্বর্ণমন্দির, নীলগিরি, মেঘলা, শৈল প্রপাতের মতো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
খাগড়াছড়ি- প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি খাগড়াছড়ি। এখানে রয়েছে আলুটিলা গুহা ও ঝর্না, রিছাং ঝর্না, পানছড়ি অরণ্য কুঠির, চা-বাগান, মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি ও রামগর লেক।
রাঙামাটি- ভ্রমণবিলাসী মানুষের অনেক প্রিয় রাঙামাটি। এই জেলার জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে আছে কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, বৌদ্ধবিহার ঝর্না, সাজেক ভ্যালি, কাপ্তাই বাধ, পেদা টিং টিং রেস্তোরাঁ।