বিশ্ব দিবস তালিকা

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ২০২৩ । ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়

বাংলাদেশের মানুষ ও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিনটিকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে – ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ২০২৩

৭ই মার্চ কি?–আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ । বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহারাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন । ঐতিহাসিক দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন কর্তৃক জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

সাতই মার্চের ভাষণ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত এক ঐতিহাসিক ভাষণ। তিনি উক্ত ভাষণ বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করে বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ করেন। উক্ত ভাষণ ১৮ মিনিট স্থায়ী হয়।

এই ভাষণে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। এই ভাষণের একটি লিখিত ভাষ্য অচিরেই বিতরণ করা হয়েছিল। এটি তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক কিছু পরিমার্জিত হয়েছিল। পরিমার্জনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। ১৩টি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দিনই সেই ভাষণ দেন / ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষন দিবস

মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ২০২৩ । ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়

Caption: Source of information

৭ই মার্চ এর ভাষণের সারমর্ম । ভাষণের বৈশিষ্ট কি?

  1. বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল নির্যাতিত একটি জাতির করণীয় ও নির্দেশনামূলক ভাষণ। যার মাধ্যমে একটি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উজ্জীবিত হয়েছিল। 
  2. এই ভাষণে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- এর কাব্যিকতা; শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাসে তা হয়ে উঠেছে গীতিময়ী ও শ্রবণে চতুর্দিকে অনুরণিত। তাই বিশ্বখ্যাত নিউজউইক ম্যাগাজিন ৭ই মার্চের ভাষণের জন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। 
  3. ১ হাজার ১০৫টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত ও মাত্র ১৮ মিনিট, মতান্তরে ১৯ মিনিটের বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি ছিল সম্পূর্ণই অলিখিত। এই ভাষণটি ছিল তার বিশ্বাস ও লক্ষ্যের প্রতিফলন। 
  4. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২টি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়। 
  5. বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসের ম্যাগনাকার্টার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সে ভাষণটি পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভাষণ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে জায়গা করে নিয়েছে। 
  6. আড়াই হাজার বছরের বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে অধিক প্রভাব বিস্তারকারী ৪১ জন সামরিক-বেসামরিক জাতীয় বীরের বিখ্যাত ভাষণ নিয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ Jacob F Field, ২০১৩ সালে লন্ডন থেকে ‘We Shall Fight on The Beaches: The Speeches That Inspired History’ শিরোনামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, যেখানে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (মেসিডোনিয়া, প্রাচীন গ্রিস), জুলিয়াস সিজার (রোম), অলিভার ক্রমওয়েল (ইংল্যান্ড), জর্জ ওয়াশিংটন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (ফ্রান্স), আব্রাহাম লিংকন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ভ্লাদিমির লেনিন (রাশিয়া), মাও সেতুং (গণচীন) প্রমুখ নেতাদের বিখ্যাত ভাষণের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 
  7. এছাড়া ২০১৫ সালে কানাডার একজন অধ্যাপক সারা বিশ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে একটা গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও ছিল। 
  8. সর্বশেষে ইতিহাসের পাতায় ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টরি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। ফলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি এখন শুধু বাঙালি জাতিরই নয় বরং পুরো বিশ্ব মানবতার সম্পদ। 
  9. বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল কালোত্তীর্ণ। এ ভাষণ কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়। এটি সর্বকালের, সকল সময়ের। কেননা, যুগে যুগে এই ভাষণ পৃথিবীর যেকোনো স্থানের স্বাধীনতাকামীদের প্রেরণাদায়ী। 
  10. বলা হয়, সারা বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত ও শ্রবণকৃত ভাষণ হলো ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণ।

৭ই মার্চের পটভূমি কি?

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *