ইসলামিক কথা

কোরআন ও হাদিস আলোকে ২০২৩। আল্লাহ তাআলা কোন গুনাহ ক্ষমা করেন না কোরআন ও হাদিস আলোকে ব্যাখ্যা

শিরক এবং গীবত কি? আল্লাহ তাআলা কোন গুনাহ ক্ষমা করেন না কোরআন ও হাদিস আলোকে

 

 

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না।

 

গীবত কাকে বলে? 

গীবত হচ্ছে কোন মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমনভাবে কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। তার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা যদি সত্য হয় তবে তা গীবত আর যদি মিথ্যা হয় তবে তা মিথ্যা অপবাদ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জান গীবত কি? সাহাবীরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভাল জানে। অতপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, গীবত হচ্ছে তোমার (মুসলিম) ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, যা বলেছি আমার (মুসলিম) ভাই যদি তাই হয়ে থাকে? তিনি বললেন, তুমি যা বলেছো সে যদি তাই হয়ে থাকে তবে তা গীবত। কিন্তু তার মধ্যে যদি তা না থাকে তবে তা মিথ্যা অপবাদ।রিয়াদুসসালিহীন হাদিস নং ১৫২৩

গীবতের কাফফারা হলো-

যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, গীবতের কাফফারা হলো,

তুমি যার গীবত করেছো, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে করবে, হে আল্লাহ তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও

গীবত তোমার তাহাজ্জুদ ছিনিয়ে নেবে,তাহাজ্জুদ না থাকলে সুন্নাত আমল নিয়ে নেবে,আর সেটাও না থাকলে তোমার ফরয ইবাদতের আমল নিয়ে নেবে,সবগু‌লোর কোনটা না থাক‌লে ছোট ছোট নেক আমলগু‌লো হ‌লেও নেবে,নে‌বেই।

গীবত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন,

وَیْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةِ

অর্থ- ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য,যে লোক-সম্মুখে বদনামী করে এবং পৃষ্ঠ-পেছনে (অগোচরে) নিন্দা করে।(সূরা হুমাযাহ্ – ১)

তাই,নিজের আমল অন্য কাউকে ফ্রিতে দিতে না চাইলে পরনিন্দা করা এখন হ‌তে বন্ধ করতে হবে।

গীবত সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য কুরআনুল কারীমে সুরাতুল হুজরাতে আল্লাহ বলেন,

وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا

أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ

তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে?

আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।গীবত সম্পর্কে- সহীহ বুখারী- ৪৮৮০

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন।

 

শিরক কি ? 

শিরক হচ্ছে সকল পাপের চাইতে বড় পাপ। যা আল্লাহ তা’আলা যা কক্ষনো ক্ষমা করবেন না। যদি কোন ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায় তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হবে। শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, যে শিরক মানুষের সব আমাল নস্ট করে দেয়, মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর ইহা ব্যতীত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। (সূরা আন-নিসা ৪ ৪৮)

হাদিসের বর্ণিত আছে ,যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মুসলিম-৯৩)

কুরআনে ‍আল্লাহ বলেন,

وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

যখন লোকমান তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বললেন হে বৎস আল্লাহর সঙ্গে শিরক করনা কেননা শিরক সবচেয়ে বড় অন্যায় (সূরা লোকমান ৩১-১৩)।

মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়িদাহ -৫-৭২)

আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় নাবীকে সাবধান করে বলেন,

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। (সূরা যুমার-৩৯-৬৫)

অতএব এ আয়াৎ থেকে আমরা জানতে পারি নাবী (সা) যদি শিরক করতো তাহলে তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যেত অতএব আমরা উম্মতরা কোথায় আছি। সুতরাং শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান। হে আল্লাহ, হে বিশ্বজগতের পালনকর্তা তোমার কাছে আমরা যাবতীয শিরক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমীন। ছুম্মা আমীন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *