গর্ভপাতের কারণ ও গর্ভপাত রোধের করার উপায় ২০২৩ । গর্ভপাত পরবর্তী গর্ভধারণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে

অকাল গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ শব্দটির সাথে কম বেশী আমরা সবাইই পরিচিত। নতুন গর্ভবতী মায়েদের কাছে এটি একটি ভীষন আতঙ্কের দুঃস্বপ্নের নাম।পরপর দুটি, কোন কোন ক্ষেত্রে তিন বা তার বেশি গর্ভস্থ সন্তান এমন এক অবস্থায় নষ্ট হয়, যখন যে বাইরের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মত উপযুক্ত তা অর্জন করতে  না পারে তখন তাকে গর্ভপাত বলে। বিশ্বে গর্ভপাতের হার ১-৩ শতাংশ।যদিও উন্নত দেশে ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহে ভূমিষ্ঠ শিশু নিবিড় পরিচর্যায় বেঁচে থাকতে পারে।আমাদের দেশে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া  ২৮ সপ্তাহের আগে ভূমিষ্ঠ শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তাই এর আগে যদি গর্ভস্থ শিশু নষ্ট হয় সেটাকে গর্ভপাত বলে। গর্ভধারণের অনুযায়ী গর্ভপাতের কারণ ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

গর্ভপাত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জেনে নিন।

১। গর্ভপাতের হার আপনার ধারনার চেয়েও বেশীঃসাধারনত আমরা মনে করি, গর্ভপাত একটি দূর্ঘটনা এবং তা খুব কমক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন প্রায় ১৫% গর্ভধারণই শেষ পর্যন্ত রূপ নেই গর্ভপাতে। এবং যদি প্রাথমিক প্রেগন্যান্সি টেস্টের আগের সময় থেকে ধরা হয়, তবে এই হার প্রায় ৩০%।

২। গর্ভধারণের শুরুর দিকেই গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনা বেশীঃসাধারনত ডাক্তাররা হবু বাবা মা কে বলে থাকেন যাতে ২০ সপ্তাহের আগে প্রেগন্যান্সির খবর সবাইকে না বলা হয়, এমনকি গ্রামেও এটি সাংস্কৃতিক ভাবেই প্রচলিত। কারণ, সাধারনত গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভপাত হবার আশংকা বেশী থাকে। এর পরবর্তীতে রিস্ক কমে আসে।

৩। গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে আপনার অজান্তেইঃগর্ভধারনের প্রথম ১০ দিনের মাথায়ই আপনার অজান্তেই মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে। রক্তপাত এর একটা খুব সাধারণ লক্ষণ। নারীরা একে পিরিয়ড ভেবে ভুল করতেই পারেন। কিন্তু যদি কখনো অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, তবে ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। গর্ভপাত না ঠেকাতে পারলেও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ও সংক্রমণ এড়াতে পারবেন।

৪। গর্ভপাতে মায়ের কোন দোষ নেইঃঅকাল গর্ভপাত ঘটে মূলত ভ্রুণের অস্বাভাবিকতার কারণে, এটা আগে থেকে নির্ণয় করা কঠিন আর এতে মায়ের কোন দোষ নেই।

৫। বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশীঃবয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে মিসক্যারেজের ঝুঁকি বেশি। কেননা ডিম্বানুর বয়েসের কারণে জিনগত অস্বাভাবিকতার হার বেড়ে যায়।

৬। যৌনতার সাথে সম্পর্ক নেইঃআপনার যৌন জীবন, ব্যায়াম বা নিয়মিত হালকা কাজের সাথে অকাল গর্ভপাতের তেমন কোন সম্পর্কে নেই। তবে একটু সাবধান থাকা ভালো। কারণ, গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে আনপ্রোটেকডেট সেক্স করলে গর্ভপাতের হার বাড়ে।

৭। গর্ভপাত একাধিকবার হতে পারে গর্ভপাত একবার হলে আবারো হতে পারে।তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

৮। ফার্টিলিটির চিকিৎসা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারেঃসন্তান ধারনের জন্যে বেশি বয়েসে ফার্টিলিটির চিকিৎসা ও ঔষধ সেবনের কারনেও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৯। ধূমপান, প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষঃপ্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানের কারনেও হতে পারে গর্ভপাত। তাই নিজে ধূমপান তো করবেনই না এবং কোন ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা থেকে বিরত থাকুন।

১০। অতিরিক্ত ওজনের কারণে হতে পারে গর্ভপাতঃ অতিরিক্ত ওজনের কারণে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি হতে পারে গর্ভপাত।

প্রতিকার কি?

বারবার গর্ভপাত হলে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঝুঁকির কারণ শনাক্ত করতে হবে। যেমন ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা, জরায়ুর মুখ সেলাই করা, প্রোজেস্টেরন-জাতীয় ওষুধ ও রক্ত তরলীকরণের ওষুধ ব্যবহার করা। আশার কথা, গবেষণা বলছে, পরপর দুই বা তিনবার গর্ভপাতের পরও ৭০% ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়া সম্ভব। তাই পরিবার ও পারিপার্শ্বিক সবার মানসিক সমর্থন এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

গর্ভপাতের নিয়ম কি?

গর্ভপাতের নিয়ম হলো গর্ভধারণ করা একটি গর্ভবতী মহিলার গর্ভ বা ভ্রূণের অপূর্ব স্থিতি থেকে মারা যাওয়া পর্যন্ত যে সকল পদক্ষেপ ঘটে। এই পদক্ষেপগুলো হতে পারে নিম্নলিখিত মধ্যে কোনো একটি বা একাধিক সমন্বয়ের মাধ্যমে: একটি চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ ছাড়াও অবিলম্বে মেডিকেল প্রক্রিয়া করা। মানসিক চাপ বা স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক কানুনের কারনে একটি গর্ভপাত পরিকল্পনা করা হলো। ভ্রূণের উন্নত বিকাশ বা স্বাভাবিক উপস্থিতির বিপরীত স্থিতি উদ্ধৃত হলো যেমন ভ্রূণের মৃত্যু, গর্ভকালীন অস্বাভাবিক বা ব্যস্ত জীবনযাপন সম্পর্কিত সমস্যা, অন্যকে হ্যাপি রেখে মা একক পালন করতে চাই এবং অন্যান্য কারণের জন্য। যেকোনো কারণে গর্ভপাত করা হলে, এটি একটি সম্পূর্ণ চিকিৎসামূলক প্রক্রিয়া।

ইচ্ছামূলক গর্ভপাত নারীর কি কি ক্ষতি করে?

ইচ্ছামূলক গর্ভপাত করার কারণে নারীর স্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনে একটি পরিবর্তন হয়ে যায়। এটি নিম্নলিখিত ক্ষতিগুলি করতে পারে:

  1. মানসিক সমস্যা: গর্ভপাত নারীদের মানসিক অবস্থা প্রভাবিত করতে পারে। গর্ভপাত করার পর নারীর মনে ভয় ও উদাসীনতা থাকতে পারে।
  2. শারীরিক ক্ষতি: গর্ভপাত করার সময় নারীর শারীরিক ক্ষতি হতে পারে যেমন রক্তস্রাব এবং ইনফেকশন। এছাড়াও গর্ভপাতের ক্ষেত্রে স্ক্যান, এক্স-রে, এবং অন্যান্য সাধন ব্যবহার করা হতে পারে যা শারীরিক ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে।
  3. পরিবারের প্রভাব: গর্ভপাত করার পরিণামে নারীর পরিবারে দ্বিধা এবং অস্থিরতা হতে পারে। পরিবারের অন্যতম সদস্যরা গর্ভপাত করার বিরুদ্ধে হতাশ ও আঘাতপূর্ণ মনোভাব রাখতে পারেন।
  4. প্রকৃত জন্মনাশক ব্যবহারের পরিণাম: ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত ভবিষ্যত গর্ভধারণকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই এ ধরনের স্টেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যান্ত চিন্তা ভাবনা এবং ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *