গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাদ্য তালিকা। গর্ভ অবস্থার শেষ ৩ মাসের সতর্কতা ও নির্দেশনা
গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাদ্য তালিকা। গর্ভ অবস্থার শেষ ৩ মাসের সতর্কতা ও নির্দেশনা
১। গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি আদর্শ খাবার রুটিন
উপরোক্ত উপাদানগুলো গর্ভবতী মায়ের নিত্যদিনের খাবার তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত। কিন্তু একই সাথে গর্ভাবস্থায় মায়ের নানারকম শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে কিছু হলো সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বমি ভাব যাকে বলে মর্নিং সিকনেস, ক্ষুধামন্দা, অরুচি, কোষ্ঠকাঠিন্য। এগুলো বিবেচনা করে নিচে গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি আদর্শ খাবার রুটিন দেয়া হলো-
গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি আদর্শ খাবার মধ্যে
সকালে
মর্নিং সিকনেসের জন্য সকালে ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো। উঠেই সামান্য বিস্কুট বা মুড়ি এ জাতীয় শুকনা খাবার ও পানি খেয়ে কিছুক্ষন হাঁটাচলা করে নেওয়া ভালো। এরপর ১-২টি রুটি সাথে ১ বাটি সবজি/ডাল/ তরকারি এবং একটি ডিম খাওয়া যেতে পারে।
সকাল ১১ টার দিকে ১ গ্লাস দুধ বা ফলমূল খেতে পারেন। গম ও ভুট্টার তৈরী ছাতুতে প্রচুর ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলস আছে। হালকা নাস্তা হিসেবে এটা খেতে পারেন।
দুপুর
দেড় থেকে ২ কাপ ভাত বা ৩-৪ তা রুটি খাওয়া উচিত ভারী খাবার হিসেবে। এর সাথে সবজি/ ডাল/ তরকারি এবং অবশ্যই ৫০-৭০ গ্রাম মাছ/ মাংস খাওয়া উচিত। সাথে সালাদ খেতে পারেন। তবে একটি কাঁচা মরিচ খেতে ভুলবেননা। খাওয়ার পরে দই খেলে তা হজমে সাহায্য করবে।
বিকেল
বিকেলে খেতে পারেন স্যুপ, কাস্টার্ড বা বাড়িতে তৈরী যেকোনো নাস্তা। বাহিরের খাবার কিংবা চা-কফি খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
রাত
রাতের খাবার দুপুরের খাবারের অনুরূপ। তবে শাক জাতীয় খাবার রাতে খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই রাতে শাক না খাওয়াই উত্তম।
সতর্কতা– গর্ভাবস্থায় কাচা পেপে রান্না করে বা সালাদে না খাইয়াই উত্তম। তা ছাড়া আনারস ও অপাস্তুরিত যে কোন প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অপাস্তুরিত খাবার হলো প্যাকেট জাত কাচা খাবার বা কাচা দুধ ইত্যাদি।
২। প্রসূতীকালীন পরিচর্যা ও প্রসূতি মায়ের পুষ্টি
প্রসবোত্তর সেবা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি অপরিহার্য অংশ। প্রসবের পর থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কে প্রসবোত্তর কাল বলা হয়। এ সময় মায়ের বিশেষ সেবা প্রয়োজন। কারণ এই সময় শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের শরীরের ক্ষয় হয়। শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান মায়ের দুধে বিদ্যমান যা শিশু মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। এজন্য এ অবস্থায় মায়ের শরীর সুস্থ রাখার জন্য সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার এবং বাড়তি যত্নের প্রয়োজন।
প্রসব পরবর্তী যত্ন
প্রত্যেক বার খাবারের সময় প্রসূতি মাকে স্বাভাবিকের তুলনায় কমপক্ষে ২ মুঠ বেশি পরিমানে খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত খাবার শিশুর জন্য মায়ের দুধ তৈরী করতে সহায়তা করে এবং মায়ের নিজের শরীরের ঘাটতি পূরণ করে
১. দুগ্ধদানকারী মাকে সব ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ (আয়রণ, ভিটামিন-এ, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি) খাবার খেতে হবে
২. দুগ্ধদানকারী মায়ের কাজে পরিবারের সকল সদস্যদের সহযোগিতা করতে হবে
৩. গর্ভবতী ও প্রসূতি মহিলাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পরিবারের সবার (স্বামী, শাশুড়ী) করণীয়:
৪. গর্ভকালীন সেবা গ্রহনের জন্য গর্ভবতী মহিলার সাথে সেবা কেন্দ্রে যাওয়া এবং আয়রণ ফলিক এসিড খাওয়ার জন্য গর্ভবতী মহিলাকে মনে করিয়ে দেয়া
৫. গর্ভবতী মহিলা / দুগ্ধদানকারী মাকে অতিরিক্ত খাবার খেতে উৎসাহিত করা
৬. ঘরের দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজে গর্ভবতী মহিলাকে সাহায্য করে তার কাজের বোঝা কমানো
৭. হাসপাতালে প্রসব করানোর বিষয়ে গর্ভবতী মহিলাকে উৎসাহিত করা এবং সহযোগীতা করা
৮. হাসপাতালে প্রসবের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থার প্রস্তুতি নেয়া
৯. জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য গর্ভবতী মহিলাকে উৎসাহিত করা এবং সহযোগীতা করা
১০. জন্মের সাথে সাথে শিশুকে মায়ের শালদুধ খাওয়ানোর জন্য গর্ভবতী মহিলাকে উৎসাহিত করা এবং সহযোগীতা করা
১১. মা শিশুকে যথেষ্ট সময় নিয়ে দুধ খাওয়াত পারে তার জন্য দুগ্ধদানকারী মাকে সুযোগ করে দেয়া
৩। গর্ভবতী মহিলার ৫ টি বিপদ চিহ্ন
একজন গর্ভবতী নারীর যে কোন সময় যে কোন বিপদ দেখা দিতে পারে। পরিবারের সবার গর্ভকালীন ৫ টি বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে এবং যে কোন একটি দেখা দেয়া মাত্র তাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
১. রক্ত ক্ষরণ
২.প্রচন্ড জ্বর
৩. তীব্র মাথা ব্যথা এবং চোখে ঝাপসা দেখা
৪. খিচুনী
৫. অনেকক্ষণ ধরে প্রসব বেদনা/ বিলম্বিত প্রসব (১২ ঘন্টার অধিক সময় ধরে থাকলে)
৪। প্রসবকালীন বিপদ লক্ষন
১. প্রসবের সময় মাথা ব্যতিত অন্য কোন অঙ্গ বের হয়ে আসা
২. বিলম্বিত প্রসব
৩. অতিরিক্ত রক্তক্ষন
৪. খিচুনী
৫. গর্ভফুল বের হতে বিলম্ব হওয়া
৫। গর্ভকালীন যত্ন
গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে (মায়ের ওজন, রক্তস্বল্পতা, রক্তচাপ, গর্ভে শিশুর অবস্থান পরীক্ষা করা)
১ম স্বাস্থ্য পরীক্ষা = ১৬ সপ্তাহে (৪মাস)
২য় স্বাস্থ্য পরীক্ষা = ২৪-২৮ সপ্তাহে (৬-৭ মাস)
৩য় স্বাস্থ্য পরীক্ষা = ৩২ সপ্তাহে (৮মাস)
৪র্থ স্বাস্থ্য পরীক্ষা = ৩৬ সপ্তাহে (৯মাস)
টিটেনাস টিকার ৫টি ডোজ সম্পন্ন করা (প্রথম টিকা নেবার ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় টিকা, ৬ মাস পরে তৃতীয় টিকা, ১ বছর পরে ৪র্থ টিকা এবং তার ১ বছর পরে ৫ম টিকা)। টিটি টিকার কর্মসূচীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত হলে ৫ টি টিকা সম্পন্ন করা উচিত। যদি ৫ টি টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে আর নিতে হবেনা। যদি সে ১ম ডোজ নেয়া থাকে তাকে ২য় ডোজ দিতে হবে, যদি ২য় ডোজ নেয়া থাকে তাকে ৩য় ডোজ দিতে হবে (২য় ডোজ নেয়ার অন্তত ৬ মাস পর), যদি সে ৩য় ডোজ নেয়া থাকে তাকে ৪র্থ ডোজ দিতে হবে (৩য় ডোজ নেয়ার কমপক্ষে ১ বছর পর), যদি সে ৪র্থ ডোজ নেয়া থাকে তাকে ৫ম ডোজ দিতে হবে (৪র্থ ডোজ নেয়ার কমপক্ষে ১ বছর পর)
যদি আপনি কোন টিটি টিকা না দিয়ে থাকেন তাহলে টিকা শুরু করতে হবে এবং গর্ভাবস্থায় ৫ মাস পর ২ টি টিটি টিকা নিতে হবে, সিডিউল অনুযায়ী বাকি টিকাগুলো নিতে হবে।
৬। দীর্ঘস্থায়ী ইমিউনিটির জন্য ৫ টি টিটি টিকার নির্ধারিত সময়সূচী
১ম ডোজ (TT1): ১৫ বছর বয়সে অথবা প্রসব পূর্ববর্তী প্রথম ভিজিটে
২য় ডোজ (TT2): ১ম ডোজ নেয়ার অন্তত: ১ মাস (৪ সপ্তাহ) পর
৩য় ডোজ (TT3): ২য় ডোজ নেয়ার অন্তত: ৬ মাস পর
৪র্থ ডোজ (TT4): ৩য় ডোজ নেয়ার কমপক্ষে ১ বছর পর
৫ম ডোজ (TT5): ৪র্থ ডোজ নেয়ার কমপক্ষে ১ বছর পর
৭। গর্ভ অবস্থার শেষ ৩ মাসের সতর্কতা ও নির্দেশনা
যদিও অনেকটাই বোঝা যায় না, কিন্তু গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস যে কোন মায়ের কাছেই ভীষণ জাদুকরি বলেই মনে হয়। নতুন প্রাণের আগমনের খবর উদ্বেলিত করে তোলে নতুন মায়ের জীবন। শুধু মায়ের জন্য নয়, সন্তানের জন্যও এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তাই দরকার সচেতনতার। যেহেতু সন্তানের একদম প্রথম পর্যায় এটি, তাই মাকে হতে হবে অনেক বেশি সতর্ক।
কিন্তু বললেই তো আর সতর্ক হওয়া যায়না, কারন অনেক ক্ষেত্রেই মায়েরা বুঝতে পারেন না যে কি হচ্ছে বা কি হতে পারে। অনেকেরই নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকেনা, জানা থাকেনা কিসে সন্তানের ভাল বা খারাপ হতে পারে। তাই সন্তান গর্ভধারণের এই প্রথম পর্যায়টি অনেকের জন্যই হতে পারে ক্ষতিকারক, যদি সঠিক যত্ন না হয়। সন্তান গর্ভধারণের প্রথম পর্যায়ের মায়েদের শারীরিক অবস্থা্র সবকিছু নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।
প্রথমেই জেনে নিন আপনি প্রেগন্যান্ট কি না। আজকাল প্রেগন্যান্সি কিট কিনতে পাওয়া যায়। তা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এসব কিট দিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় তার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ পরীক্ষাই সঠিক হয় বলে ধরা হয়। তবে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। নিশ্চিত তো হওয়া গেল, এখন জানা যাক পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে।
১. একবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে গেলে এর পরে থেকে সাবধানে চলাফেরা করুন। এলকোহল, ক্যাফেইন, ধুমপান থেকে দূরে থাকুন, তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেমনই হোক না কেন। কারন এই সময় এসব জিনিস অন্য যে কোন কিছুর থেকেই সবচাইতে বেশি ক্ষতি করে বাচ্চার।
২. যেহেতু আপনি অন্তঃসত্ত্বা, তাই আপনাকে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। অতিসত্বর একজন ডাক্তার নির্বাচন করুন। ডাক্তার নির্বাচন করার আগে কিছু জিনিষ মনে রাখবেন। যেমন- ডাক্তারের সাথে যে কোন সময় যোগাযোগ করা সম্ভব কি না, যে কোন দরকারে তাকে
৮। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা/চেকআপের সময়সূচি
১মঃ ৪র্থ মাসের মধ্যে (১৬ সপ্তাহ)
২য়ঃ ৬ষ্ঠ মাসে (২৪ সপ্তাহ)
৩য়ঃ ৮ম মাসে (৩২ সপ্তাহ)
৪র্থঃ ৯ম মাসে (৩৬ সপ্তাহ)
গর্ভকালীন সেবা/চেকআপে যা যা করা হয়
1)গর্ভকালীন ইতিহাস নেয়া হয়
2) শারীরিক পরীক্ষা করা
3) স্রাব পরীক্ষা
4) চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
5) প্রতিরোধক বাবস্থাপনা
6) মাকে পরামর্শ প্রদান করা
7) স্বাস্থ্য শিক্ষা
Pingback: Online age calculator । অনলাইনে বয়স বের করার উপায় দেখুন - Tricksboss