জমি বা সম্পত্তি বণ্টন কি? জমি বণ্টনের মামলা করতে হয় কিভাবে?
জমি বণ্টনের মামলা করার নিয়ম
১. জমি বা সম্পত্তি বণ্টন কি?
জমি বণ্টন বা জমির আইনগত বিভাজন হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে জমি দুই বা ততোধিক অংশে বিভক্ত করা হয়। জমি বণ্টনের ক্ষেত্রে আপনি জমি সংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে একটি মামলা করতে পারেন।
ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে যার যার প্রাপ্ত স্বত্ব বুঝে নেবার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে বণ্টন। স্থানীয় বা পারিবারিকভাবে বণ্টনের আইনগত ভিত্তি দুর্বল। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করার জন্য আইনানুগ পদ্ধতি অবলম্বন করাটাই শ্রেয়। এ জন্য সকল শরিককে এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানী আদালতে একটি মামলা করতে হয় যা বণ্টন মোকদ্দমা বা বাটোয়ারা মামলা বা পার্টিশন স্যুট নামে পরিচিত।
সম্পত্তির শরিক দুই প্রকার। (ক) উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স (খ) খরিদ সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই পারচেজ।
বণ্টনের মামলা করার সময় সকল শরিকগণ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হবেনা। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বণ্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বণ্টনের জন্য আদালতে উক্ত সম্পত্তির বণ্টন চেয়ে মামলা করতে পারেন।
২. জমি বণ্টনের মামলা করতে হলে নিম্নলিখিত কদমগুলো অনুসরণ করতে হবে
জমি পরিচিতি সংগ্রহ
প্রথমে আপনার বাসায় অথবা স্থানীয় অফিসে গিয়ে জমির বণ্টনের জন্য আবেদন করতে হবে। এই আবেদনপত্রে জমির মালিকানাধীন তথ্য, জমির পরিমাণ, অবস্থান, বাড়ির তথ্য ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।
জমি সম্পর্কিত দলিল সংগ্রহ
জমির মালিকানাধীনতা সম্পর্কিত সমস্ত দলিল সংগ্রহ করতে হবে। এটি মধ্যে থাকতে পারে জমির দস্তাবেজ, মালিকানাধীনতা সনদ, রেজিস্ট্রেশন সনদ, বসতভিটার কাগজপত্র ইত্যাদি।
৩. বণ্টন মামলা করার জন্য কি কি প্রয়োজন?
বণ্টন মোকদ্দমা দায়েরের জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। পাশাপাশি সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ পত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারী খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে।
মামলা করার জন্য কোর্ট ফি দিতে হয় ১০০ টাকা কিন্তু ছাহাম চাইলে প্রতি ছাহামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ফি জমা দিতে হয়।
বাটোয়ারা মামলায় সাধারণত প্রত্যেক দাগের জমি সকল সহ-শরীক এর মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে ৷ বাটোয়ারা বা বণ্টন মামলায় ২ বার ২টি ডিক্রী হয় ৷
১. প্রাথমিক ডিক্রী
এ ডিক্রীতে হিস্যানুযায়ী বণ্টন আদেশ দেয়া হয়৷
২. চূড়ান্ত ডিক্রী
এ ডিক্রীতে প্রয়োজনে আমিন কমিশন পাঠিয়ে সরেজমিনে সম্পত্তির দখল দেয়া হয় এবং সীমানা পীলার দ্বারা বিভাজন (জমির ভাগ) চিহ্নিত করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ডিক্রী প্রচার করা হয় ৷ আদালত প্রয়োজনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করে সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে ডিক্রী প্রাপককে সম্পত্তির দখল দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন ।
৪. বণ্টনের শর্ত সমূহ
বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জড়িত যেমন
- পরিমাপ করে শরীকদের ভূমির বা জমির সীমানা চিহ্নিতকরণ করতে হবে। এবং
- বণ্টন তালিকায় প্রত্যেক সহ-মালিকের বরাদ্দকৃত সম্পত্তির উল্লেখ থাকতে হবে
- তালিকায় মালিকানার বিভাজন সকল সহ-মালিক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে
- বণ্টনের বিবরণ সুস্পষ্ট হতে হবে
- প্রত্যেকটি তালিকা সহ-মালিকবৃন্দ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে
- যথাযথভাবে স্ট্যাম্প শুল্ক দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে
- সহ-শরীকগণ আপোষ বণ্টন করে পরবর্তীতে তাদের কেউ তা না মানলে দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যায় ৷
৬. বণ্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রি ফি
রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ আইনের ১৭(১) ধারার বিধান অনুসারে বাটোয়ারা বা আপোষ-বণ্টননামা রেজিস্ট্রি করতে হবে, অর্থাৎ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক। সকল সহ-শরিকের মধ্যে জমি হিস্যানুযায়ী (স্ট্যাম্প এর উপর) বণ্টন করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করে বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় ৷ এ দলিল রেজিস্ট্রির জন্য স্ট্যাম্প খরচ লাগবে জমির যে মূল্য লেখা হবে তার ২% হারে ৷ এছাড়া অন্যান্য ফিস কবলা দলিল রেজিস্ট্রিতে যেমন লাগে অনুরূপ লাগবে ৷ (তবে এই হার সরকার কর্তৃক সময় সময় পরিবর্তনযোগ্য)
৭. বণ্টন হওয়ার পর করণীয় কি?
আদালতের মাধ্যমে বণ্টন হওয়ার পর এবং বণ্টন দলিল রেজিস্ট্রি পর অবশ্যই নিজ নামে নামজারী, জমাভাগ খতিয়ান করে নিতে হবে। পাশাপাশি খাজনা প্রদান করতে হবে। মনে রাখবেন, নামজারী হচ্ছে সরকারিভাবে সম্পত্তিকে নিজ নামে রেকর্ড করা।
৮. যারা কখনেই উত্তরাধিকার হতে বাদ যায় না
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নিচের ৬ জন যদি জীবিত থাকে তবে তার কোন অবস্থায়ই উত্তরাধিকার হতে বাদ যায় না।
১. পিতা
২. মাতা
৩. স্বামী
৪. স্ত্রী
৫. ছেলে
৬. মেয়ে
৯. উত্তরাধিকারী হয়েও সম্পত্তি পাবে না
জেনে রাখা ভালো, কোন উত্তরাধিকারীকে সাধারণত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যায় না। যেমন ইসলাম ধর্মে ত্যাজ্য করা যায় না, কেউ কেউ মুখ করলেও তার আইনগত কোন ভিত্তি নেই। তাই ত্যাজ্য করলেও সম্পত্তি পাবে। অন্যদিকে ইসলামে এডাপশন বা পালক পুত্র বলে [আইনগত ভাবে] কিছু নেই তাই তেমন কেউ থেকে থাকলে সে স্বাভাবিক ভাবে সম্পত্তি পাবে না। তাকে বিশেষ ভাবে উইল বা দান করতে হবে।
১০ . কিছু ব্যতিক্রম আছে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন
কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম আছে যখন কেউ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। যেমন, যদি তিনি যার কাছ থেকে সম্পত্তি পাবেন তাকে খুন করেন কিংবা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন বা বিশেষ বিবাহ আইনে বিবাহ করেন।
১১. জমি সম্পর্কিত দলিল সংগ্রহ
জমির মালিকানাধীনতা সম্পর্কিত সমস্ত দলিল সংগ্রহ করতে হবে। এটি মধ্যে থাকতে পারে জমির দস্তাবেজ, মালিকানাধীনতা সনদ, রেজিস্ট্রেশন সনদ, বসতভিটার কাগজপত্র ইত্যাদি।