জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে সংশোধন করতে বা নতুন করতে যা যা করবেন?
NID সংশোধন করতে যা যা করতে হবে
১. নাম সংশোধন করতে
কেউ যদি জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম, পিতা / মাতার নাম, স্বামী অথবা স্ত্রীর নাম সংশোধন করতে চায় তাহলে আবেদনপত্রের সঙ্গে কি কি জমা দিতে হবে
১। এসএসসি বা সমমান সার্টিফিকেট।
২। নাগরিকত্ব সনদ এর কপি।
৩। জন্মনিবন্ধন সনদ এর কপি।
৪। চাকরির প্রমাণ পত্রের কপি।
৫। পাসপোর্ট এর কপি।
৬। নিকাহনামা এর কপি অথবা
৭। পিতা / মাতা বা স্বামী স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত কপি অবশ্যই ১ম শ্রেনির কর্মকর্তার / হাইস্কুল বা কলেজের প্রধান শিক্ষক এর সত্যায়িত হতে হবে। উপরে উল্লেখিত ১–৭ নং এর ১টি কপি যেটি আপনার কাছে রয়েছে, শুধুমাত্র সেটি সত্যায়িত করে দিলেই চলবে।
২. স্বামীর নাম সংযোজন বা বাদ দিতে
বিয়ের পর যদি কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রে তার স্বামীর নাম যুক্ত করতে চায় তাহলে তাকে কাবিননামা ও স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। আর যদি বিবাহবিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ চায় তাহলে আবেদনকারীকে তালাক নামার সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
৩. পিতা বা মাতার নাম পরিবর্তন / সংশধন
পিতা বা মাতার নাম পরিবর্তন / সংশোধন করতে হলে আবেদনপত্রের সঙ্গে এসএসসি / এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদ অথবা রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কপি জমা দিতে হবে। পিতা বা মাতার জীবিত থাকলে তাদের পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি। পিতা বা মাতা বা উভয়ে যদি মৃত হয় তাহলে ভাই বা বোনের পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। পিতা বা মাতার নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নিতে পারেন।
৪. জন্মতারিখ সংশোধন করতে
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্মতারিখ সংশোধন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। বয়সের পার্থক্য অস্বাভাবিক না হলে (দিন, মাস বা বছর যদি বেশি পরিবর্তন না হয়, যেমন ০১-০১-২০০০ থেকে পরিবর্তন হবে ০১-১০-২০০২/৩ , ০১-১০-১৯৯৮/৯ এটি স্বাভাবিক) প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লেখিত তারিখেই আপনি নতুন সংশোধিত পরিচয়পত্র পেয়ে যাবেন। আর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে (০১-০১-২০০০ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ২৫-০৯-২০১০/৯/৮, ২০-০৮-১৯৯১/২ ইত্যাদি) আপনার সার্টিফিকেটের মূল কপি প্রদর্শন কিংবা ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিয়ে তা পরিবর্তন বা সংশোধন করতে হতে পারে। যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি / সমমানের কম, তাদের ক্ষেত্রে জন্মতারিখ সংশোধন করার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে সার্ভিস বুক বা এমপিও এর কপি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স / জন্ম সদন / নিকাহনামা / পাসপোর্টের কপি ইত্যাদি (তারা আপনাকে বলে দিবে কি প্রয়োজন হবে)। অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রকল্প কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা প্রকল্প পরিচালক আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নিবেন। এছাড়াও বিশেষ প্রয়জনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সরেজমিনে আপনার তথ্য তদন্ত করাবে।
৫. ঠিকানা সংশোধন করতে
জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা বর্তমান ঠিকানা বা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। তবে তদের দেয়া কিছু নির্দিষ্ট সময়ে এই কাজটি করা সম্ভব। এই কাজটি শুধুমাত্র ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময়ে করা যাবে। বর্তমানে
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজ করা হয় শুধু জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে। তাই সারা বছর ভোটার এলাকা বদলের সুযোগ থাকে না। এর একটি কারণ ও রয়েছে তা হচ্ছে আমাদের দেশে প্রায় সকল ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। বলা যায়, একই বছর একাধিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কেউ যেন ভিন্ন ভিন্ন ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে বা ভোট দিতে না পারেন, তাই সারা বছর ভোটার এলাকা বদল করার সুযোগ দেওয়া হয় না।’ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় ভোটার এলাকা বদলাতে হলে নতুন ঠিকানার উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিস থেকে ফরম-১৩ অথবা ফরম-১৪ পূরণ করে জমা দিতে হবে। তবে ঠিকানা পরিবর্তন না করে সংশোধন (যেমন বানান ভুল, বাড়ির নম্বর ভুল, সড়ক নম্বর / নাম ভুল থাকলে) করার সুযোগ ঢাকার প্রকল্প কার্যালয়ে রয়েছে। ঠিকানার ছোটখাটো ভুল সংশোধন বা স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ সারা বছরই রয়েছে। এই কাজের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে পরিবারের অন্য কোন সদস্যের পরিচয়পত্রের কপি, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল অথবা টেলিফোন বিল এগুলোর যেকোনো একটির কপি প্রকল্প কার্যালয়ের নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা করতে হবে সাথে চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র এবং স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত নতুন ঠিকানায় নিজের নামে / পিতা বা মাতার নামে থাকা জমি বা ফ্ল্যাটের দলিলের সত্যায়িত কপিও জমা দিতে হবে।
৬. রক্তের গ্রুপ সংশোধন করতে
রক্তের গ্রুপ সংশোধন করতে হলে অবশ্যই মেডিকেল থেকে পাওয়া সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
৭. বিবিধ সংশোধন
জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নামের আগে কোন পদবি / উপাধি / খেতাব ইত্যাদি সংযুক্ত করা যাবে না। পিতা / মাতা বা স্বামীকে মৃত উল্লেখ করতে চাইলে মৃত্যুর সনদের কপি জমা দিতে হবে। জীবিত পিতা / মাতা বা স্বামীকে ভুলক্রমে মৃত হিসেবে উল্লেখ করার কারণে যদি পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।
৮. পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয়
পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে অবশ্যই আপনার নিকটবর্তী থানায় ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর / ভোটার আইডি নম্বর উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। এরপর সাধারণ ডায়েরির (জিডির) মূল কপিসহ প্রকল্প কার্যালয় থেকে নেওয়া আবেদনপত্র পূরণ করে নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র গ্রহন করতে হবে। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লেখিত তারিখে ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র নিতে পারবেন।
৯. যারা এখনো পরিচয়পত্র পাননি তাদের জন্য
ঢাকা সিটি করপোরেশনের যেসকল বাসিন্দা পরিচয়পত্রের জন্য সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন, ভোটার স্লিপ পেয়েছেন, কিন্তু ভোটার আইডি / পরিচয়পত্র কোন কারনে হাতে পাননি, তারা প্রকল্প কার্যালয়ে গিয়ে ভোটার স্লিপ / প্রাপ্তি রসিদ এর মুল কপি জমা দিয়ে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের / ডিসিসির বাইরে ঢাকা জেলা / অন্যান্য উপজেলা বা থানার বাসিন্দা কিংবা দেশের অন্য যে কোনো জেলার বাসিন্দারা নির্দিষ্ট সময়ে পরিচয়পত্র হাতে পাননি বা না উঠিয়ে থাকলে, তাঁদের ভোটার স্লিপ / প্রাপ্তি রসিদ সংশ্লিষ্ট উপজেলা, থানা বা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট জমা দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। এজন্য মূল ভোটার স্লিপ / প্রাপ্তি রসিদ প্রকল্প কার্যালয়ের নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র গ্রহণ করে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে উল্লেখিত তারিখে পরিচয়পত্র নিতে হবে।
১০. অভিবাসীরা যেভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন
অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার উপায় হচ্ছে তাঁদের অবশ্যই দেশে আসতে হবে। পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্টে বাংলাদেশে আসার অ্যারাইভাল সিল থাকতে হবে। কারও যদি পাসপোর্ট না থাকে, তাহলে তাকে এমন কোনো কাগজ দেখাতে হবে যেটার মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে, তিনি বিদেশ ছিলেন। পাসপোর্ট বা প্রমাণপত্র নিয়ে তার থানা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে ভোটার হওয়ার আবেদনপত্র পূরণ করে সকল নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফরম ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যেতে হবে। এরপর নির্বাচন কার্যালয়ের সকল আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ও ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে, তবে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে কাগজপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষ করে আবেদনকারী চাইলে সেগুলো নিয়ে সরাসরি প্রকল্পের কার্যালয়ে গিয়ে জমা প্রদান করলে কাজটি তারাতারি সম্পাদন হবে। তারপর আবেদনকারীর ছবি তোলা, হাতের ছাপ ও চোখের (আইরিশ) স্ক্যান করার পর আবেদনকারীকে একটি প্রাপ্তি রসিদ দেওয়া হবে। তাতে বলা থাকবে আবেদনকারীকে ১৫ দিন পর আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের সপ্তম তলায় গিয়ে প্রকল্পের দপ্তর থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করার জন্য। তখন অবশ্যই প্রাপ্তি রসিদ আবেদনকারীর সাথে নিয়ে যেতে হবে।
১১. নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে
বাংলাদেশের সকল নাগরিক যার বয়স ১৮ বছর হয়েছে তারা অবশ্যই ভোটার তালিকায় নাম ওঠাতে পারবেন। বর্তমানে দেশের প্রতিটি উপজেলায় সার্ভার স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। এই কাজ সম্পন্ন হলে সার্ভার স্টেশনেই ভোটার তালিকা তৈরি করা ও বিতরণের কাজ করা যাবে। সার্ভার স্টেশনের কার্যক্রম শুরু হলে যখন কারো বয়স ১৮ বছর হবে, তখন তিনি খুব সহজেই ভোটার তালিকায় নাম ওঠাতে পারবেন। এখন যে কারো ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া মাত্রই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে, নতুন আবেদন করতে হলে এনআইডি উইং ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার সকল তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে।
১২. যোগাযোগ
ভোটার তালিকা সংক্রান্ত যে কোন তথ্যের বিস্তারিত জানার জন্য যোগাযোগ করতে হবে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের সপ্তম তলায় অথবা কল করুন ১০৫ নাম্বারে।