জার্মানির ভিসা ২০২৩। জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসা কি ভাবে পাওয়া যায়? আবেদনের নিয়ম
জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ও পাওয়া নিয়ম
১। জার্মানির ভিসা আবেদনের নিয়ম
শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যপূর্ণ এই দেশটিতে যেতে হলে অবশ্যই যৌক্তিক কারণ ও বৈধ ভিসা থাকতে হবে। বৈধ ভিসা ছাড়া কেউই জার্মানিতে যেতে পারবেন না। জার্মানি যাওয়ার কয়েক ধরনের ভিসা রয়েছে। এদের মধ্যে ট্যুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (কাজের ভিসা)। কর্মসংস্থানের সুযোগ, শিক্ষা, উদ্যোক্তা, পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া এবং বাসিন্দা হওয়া এসব কারণে মূলত দেশটিতে যেতে চায় অভিবাসন প্রত্যাশীরা। ভিসা প্রত্যাশীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা, হেলথ ইন্সুরেন্স ও জার্মান ভাষায় ন্যূনতম দক্ষতা থাকতে হবে।
পাঁচ ধরনের ভিসার আবেদনের পদ্ধতি আলাদা।
২। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
আপনি যদি দক্ষ কর্মী হয়ে থাকেন তবে জার্মানির উদ্যোক্তা বা চাকরিদাতা আপনাকে স্পন্সরের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশটিতে নিয়ে যেতে পারেন। এভাবে আপনি মর্যাদাকর জার্মান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’র মাধ্যমে দেশটিতে যেতে পারবেন। জার্মানিতে ব্যবসা পরিচালনা করে এমন কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পাবেন আপনি। এই ভিসার আওতায় সেই দেশটিতে থাকা ও কাজ করার অনুমতি পাবেন আপনি। এই ক্ষেত্রে ওই কোম্পানির দেয়া অফার লেটারটা সঙ্গে থাকা ভীষণ জরুরি। জার্মানিতে প্রায়ই দক্ষ অভিবাসী কর্মীর প্রয়োজন হয়৷ তাই জার্মান সরকার এই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু করে। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিক দেশটিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে যেতে পারেন।
জার্মানিতে ভালো বেতনের পাশাপাশি ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা নিচে দেয়া হলো। জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট কাজের ওপর দক্ষতা থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি কার্ড) ফটোকপি থাকতে হবে। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা আইএলটিএসে ভালো স্কোর থাকতে হবে। নির্দিষ্ট কাজের উপরে প্রশিক্ষণ সনদ থাকতে হবে।
বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সাক্ষরিত সনদপত্র ও বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি কার্ড) ফটোকপি লাগবে। জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে এই সব ডকুমেন্ট/ নথিপত্র প্রয়োজন হয়। তাছাড়া, আপনি যদি জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট বা ওয়ার্ক ভিসা পেতে চান তাহলে আপনাকে ন্যূনতম সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস হতে হবে। তাছাড়া জার্মান ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পর জার্মানিতে যেতে হবে। এই সব যৌগ্যতার সমন্বয়ে আপনি হাতে পেয়ে যেতে পারবেন স্বপ্নের ওয়ার্ক পারমিট ভিসাটি।
৩। চাকরিপ্রার্থী ভিসা (জব সিকার ভিসা)
চাকরিপ্রার্থী ভিসার (জব সিকার ভিসা) মাধ্যমে দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি জার্মানিতে এসে চাকরি/কাজ খোঁজার অনুমতি পেয়ে থাকে। এই বিশেষ ভিসার মেয়াদ ৬ মাস। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি যদি চাকরি বা কর্মসংস্থান করে ফেলতে পারেন তবে তাহলে জব সিকার ভিসাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় উন্নীত হবে। অন্যদিকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি তিনি কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
৪। জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা কি ভাবে পাওয়া যায়?
জার্মান সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা সুবিধা দিয়ে থাকে। কেউ যদি দেশটিতে পড়তে যেতে চান, তাহলে তারা সরাসরি জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো অর্থ আয় করা যায়।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করলে, ভিসা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ মাত্র তিন মাস। এর পর এটি বৈধতা হারাবে। তবে ওই শিক্ষার্থী জার্মানিতে আসার পর যদি আরও বেশি সময় তার শিক্ষা কার্যক্রম সেখানে চালিয়ে যেতে চায় তবে তাকে আলাদাভাবে রেসিডেন্স পারমিটের (বসবাসের অনুমতি) জন্য আবেদন করতে হবে। এর পর সেই নির্ধারিত কোর্সের (শিক্ষা কার্যক্রম) মেয়াদ শেষ হবার পর চাকরি খোঁজার জন্য রেসিডেন্স পারমিটে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময় জার্মানিতে অবস্থান করা যাবে। চাকরি পাওয়ার পর ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করার পর আপনি সহজেই স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করে জার্মানিতে যেতে পারেন। তবে জার্মানিতে যাওয়ার আগে আপনার ইংরেজি এবং জার্মান ভাষায় ভালো অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, তাহলে সেখানে ভালো করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা চাইলে স্টুডেন্ট ভিসায় জার্মানিতে পার্ট-টাইম কাজ করে ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে জার্মানির যে ইউনিভার্সিটিতে আপনি ভর্তি হয়েছেন তাদের দেয়া অ্যাডমিশন লেটার হাতে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পড়াশোনা চালানোর মতো যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
৫। ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসা
আপনি যদি জার্মান বাসিন্দার পরিবারের সদস্য অথবা তার ওপর নির্ভরশীল (স্পাউজ বা সন্তান) হয়ে থাকেন তবে ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। জার্মানিতে বসবাসরত পরিবারের মূল সদস্যের সঙ্গে থাকার আবেদন করতে হলে সন্তানদের বয়স ১৬ বছরের নীচে হতে হবে। তবে এমন নির্ভরশীল সদস্যের বয়স ১৬ এর বেশি হলে তাকে জার্মান ভাষার ওপর দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।
৬। ট্যুরিস্ট ভিসা
যারা জার্মানি পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করতে চান তাদের অবশ্যই জার্মানির ট্যুরিস্ট ভিসা (পর্যটক) নিতে হবে। জার্মানির ট্যুরিস্ট ভিসাকে অনেকেই ভিজিট ভিসা বলে থাকেন। জার্মান ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে প্রায় ১৫ দিন সময় লাগে৷ জার্মান দূতাবাস থেকে সরাসরি এই ভিসার জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
কোন কাজে কত বেতন
জার্মানিতে একজন কর্মীকে কত বেতন দেয়া হয়ে থাকে তা জানার আগ্রহ অনেকেরই আছে। জার্মানিতে একজন কর্মী মাসে সর্বনিম্ন দুই থেকে ৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ বেতন পান। অর্থাৎ সেখানে ন্যূনতম মাসিক বেতন বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ টাকা। জার্মানিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজ (পার্টটাইম) করেও মাসে এক লাখ টাকার বেশি আয় করতে পারেন।
জার্মানিতে মোট কাজের সময় ৮ ঘণ্টা এবং অনেকেই এই সময়ে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারেন।
৬। জার্মানিতে কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি
বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি এই দেশটিতে কাজ করছেন। সেখানে দক্ষ শ্রমিক ও কর্মীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে বেশি চাহিদা রয়েছে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য চাকরি হলো সিকিউরিটি গার্ড, ফুড প্যাকেজিং, শপিং মল, ড্রাইভিং, মেকানিক্যাল, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ক্লিনিং ম্যানের।
৭। জার্মানির ভিসা পেতে কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে?
জার্মানি ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে অর্থাৎ জব ভিসার মাধ্যমে জার্মানি যেতে হলে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
এই কাগজপত্রগুলো জার্মান দূতাবাসে জমা দেওয়ার পরে তারা কোম্পানির কাছে পাঠাবে এবং সবকিছু যাচাই করার পরে কোম্পানি আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য যোগ্য বিবেচনা করলে ভিসা ইস্যু করবে।
৮। জার্মানি ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?
কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নির্দিষ্ট কাজের উপর দক্ষতার সার্টিফিকেট, ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং চেয়ারম্যানের সত্যায়িত সনদ। জার্মান দূতাবাসে সত্যায়িত করা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে।
সর্বনিম্ন ছয় মাস মেয়াদ রয়েছে এরকম একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। নিজের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ছাড়াও বাবা-মার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে। জার্মান দূতাবাস থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে সেটি পূরণ করতে হবে। উপরে উল্লিখিত সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করার পরে, জার্মান ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর কোন কিছুতে ভুল থাকলে তা সংশোধন করে নিতে হবে।
৯। জার্মানির ভিসা প্রসেসিং হতে কতদিন সময় লাগে?
জার্মানির ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। তবে কারো কারো জন্য সময় বেশি লেগে যেতে পারে।
জার্মানি যেতে কত টাকা লাগতে পারে
জার্মানিতে যেতে কত খরচ হয় বা জার্মানিতে ভিসার জন্য বর্তমানে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকা জরুরি। যারা ওয়ার্ক ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে জার্মানি যেতে চান তাদের খরচ হবে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। কেউ স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে জার্মানিতে যেতে চাইলে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হবে।
জার্মানিতে থাকার সময় প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ ইউরো অতিরিক্ত খরচ হবে খাবার এবং বাসস্থানসহ মাসে খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ৪০০ ইউরো।