জ্বালানি তেলের দামে নতুন সমন্বয়, লিটারে বাড়লো ২ টাকা: আজ থেকে কার্যকর
দেশে ভোক্তা পর্যায়ে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ২ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির অংশ হিসেবে ডিসেম্বর মাসের জন্য এই নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে।
গতকাল রোববার (৩০ নভেম্বর) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বার্তায় নতুন এ মূল্য ঘোষণা করা হয়।
⛽ নতুন মূল্যতালিকা (প্রতি লিটার)
| পণ্যের নাম | পূর্বের দাম (টাকা) | নতুন দাম (টাকা) | বৃদ্ধির পরিমাণ (টাকা) |
| ডিজেল | ১০২ | ১০৪ | ২ |
| অকটেন | ১২২ | ১২৪ | ২ |
| পেট্রোল | ১১৮ | ১২০ | ২ |
| কেরোসিন | ১১৪ | ১১৬ | ২ |
স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি
মন্ত্রণালয়ের বার্তায় বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস/বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে সংশোধিত প্রাইসিং ফর্মুলার (Pricing Formula) আলোকে এই মূল্য পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করা হয়েছে।
সরকার গত বছরের (২০২৪ সালের) মার্চ মাস থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশে জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা শুরু করেছে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে নতুন দর ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচ সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম সরকার বৃদ্ধি করছে কেন?
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করা। সরকার এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে, তার প্রধান কারণগুলি নিচে তুলে ধরা হলো:
১. স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি (Automatic Pricing Formula)
-
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়: সরকার গত বছর (২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে) আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি মাসে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের একটি সংশোধিত ফর্মুলা চালু করেছে।
-
নিয়মিত সমন্বয়: এই পদ্ধতির ফলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে বা কমলে দেশের বাজারেও সেই অনুযায়ী দাম সমন্বয় করা হয়। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি এই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ারই অংশ।
-
আইএমএফ-এর শর্ত: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসেবেও এই স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কার্যকর করা হয়।
২. বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি
-
আমদানি ব্যয়: বাংলাদেশ তার জ্বালানি তেলের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সরকারের আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়।
-
মূল্য সমন্বয়: আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশীয় বাজারে সেই দামের সমন্বয় না করলে সরকার বা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-কে বিশাল অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়। বিপিসিকে লোকসান থেকে রক্ষা করতে এই মূল্য সমন্বয় করা হয়।
৩. ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি
-
আমদানি খরচ বৃদ্ধি: যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম মাঝে মাঝে কমেছে, তবুও ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়ায় (ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি) সরকারকে আগের চেয়ে বেশি টাকায় তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এটিও মূল্যবৃদ্ধির একটি বড় কারণ।
৪. পাচার হওয়ার আশঙ্কা
-
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মূল্য পার্থক্য: যদি বাংলাদেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে, তবে সীমান্ত দিয়ে তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই পাচার রোধ করার জন্যও সরকার মূল্য সমন্বয় করে থাকে।
সুতরাং, সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি মূলত বিশ্ববাজারের অস্থিরতা এবং স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির ফলস্বরূপ।

