দলিল রেজিস্ট্রেশন। সরকারি ভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন ক্ষেত্রে কোন কোন দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হয়?
সরকারি ভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশনে
১. রেজিস্ট্রেশন কি?
রেজিস্ট্রেশন হল একটি কানুনি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি ব্যক্তি, জন্ম, জমি, গাড়ি, সম্পত্তি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য সরকারী বা বেসরকারী অথবা অন্য কোনও সংস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়া মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ এবং নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সঠিক প্রমাণ প্রদান করা হয় যাতে পরবর্তীতে যে কোনও আইনি অথবা আইনতন্ত্র সাধারণ ও নিশ্চিতভাবে অনুসরণ করা যায়।
২. জমি দলিল রেজিস্ট্রেশন কি?
জমি দলিল রেজিস্ট্রেশন হল একটি কানুনি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জমির মালিকানা অধিকার স্থাপন এবং স্থানীয় সরকারের সাথে জমির সঠিক তথ্য দাখিলে সেই জমির স্বাধীন মালিকানা সনদ প্রাপ্ত করা যায়। এটি সাধারণভাবে জমির মূল্য নির্ধারণ, সীমানা, বৃদ্ধি এবং মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া সাধারণভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী অথবা বেসরকারী অফিস দ্বারা পরিচালিত হয়।
৩. জমি রেজিস্ট্রেশন করা কি বাধ্যতামূলক ?
উত্তর রেজিস্ট্রেশন আইন ২০০৪ (সংশোধিত) অনুযায়ী, সকল দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। আইন অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রি করা হলে মালিকানা নিয়ে বিরোধ এড়ানো যায়। এছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করা থাকলে পরবর্তীতে বিক্রি, দান, উইল করতে সহজ হয়। স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় দলিল অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
৪. দলিলের ক্ষেত্রে কোন কোন দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হয় ?
উত্তর বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যেমন
বিক্রয় দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে।
জমি ক্রয় করার পূর্বে বায়না দলিল সম্পাদন করলে তা ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। রেজিস্ট্রি ছাড়া বায়না দলিলের আইনগত মূল্য নেই।
বায়না চুক্তি প্রবলের জন্য ফৌজদারি আদালতে প্রতারণার অভিযোগ এনে দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা করা যায়।
বায়না দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ হতে ১ বছরের মধ্যে বিক্রয় দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে।
হেবা বা দানকৃত সম্পত্তির দলিলও রেজিস্ট্রি করতে হবে।
বন্ধককৃত জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে।
কোন ভূমি সম্পত্তি মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাটোয়ারা করা এবং উক্ত বাটোয়ারা বা আপোষ বণ্টন নামা রেজিস্ট্রি করতে হবে।
৫. রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কি কি প্রয়োজন হয় ?
উত্তর রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কিছু তথ্যের প্রয়োজন হয়। জমি রেজিস্ট্রি করতে বিক্রিত জমির পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ থাকতে হবে।
দলিলে দাতা-গ্রহীতার পিতা-মাতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সাম্প্রতিক ছবি সংযুক্ত করতে হবে। যিনি জমি বিক্রয় করবেন তার নামে অবশ্যই নামজারী (মিউটেশন) থাকতে হবে (উত্তরাধিকার ছাড়া)। বিগত ২৫ বছরের মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সম্পত্তি প্রাপ্তির ধারাবাহিক ইতিহাস লেখা থাকতে হবে।
সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য, সম্পত্তির চারদিকের সীমানা, নকশা দলিলে থাকতে হবে।
দাতা কর্তৃক বিক্রিত সম্পত্তি অন্য কারো কাছে বিক্রি করেনি মর্মে হলফনামা থাকতে হবে।
জমির পর্চাসমূহে (সি.এস, এস. এ, আর.এস) মালিকানার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।
বায়া দলিল (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) থাকতে হবে।
৬. বিভিন্ন প্রকার দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য কি পরিমাণ ফিসের প্রয়োজন হয় ?
উত্তর দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় রেজিস্ট্রেশন আইন,স্ট্যাম্প আইন, আয়কর আইন, অর্থ আইন ও রাজস্ব সংক্রান্ত বিধি এবং পরিপত্রের আলোকে। সকল দলিলের রেজিস্ট্রি ফিস সমান নয়। সরকার বিভিন্ন সময় সমসাময়িক বিবেচনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রি ফিস নির্ধারণ করে থাকেন।
৭. কর দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ম ?
উত্তর ভ্যাট ও উৎস কর সব সময়ই জমির বিক্রেতা প্রদান করবে। আয়কর আইন মতে, এই দুই ধরণের কর বিক্রেতার আয়ের ওপর ধার্য হয়। এই কর বিক্রেতার নামে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। উৎস কর ও ভ্যাট ছাড়া অন্যান্য সকল ধরণের কর জমির ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে।
সাব রেজিস্ট্রারের পরামর্শে ফজর আলী তার জমি রেজিস্ট্রি করে। এর ফলে তিনি জমি বেদখল হবার জটিলতা থেকে রক্ষা পায়।
১. কিছু জমি রেজিস্ট্রেশনের প্রশ্ন
প্রশ্ন-১. জমি রেজিস্ট্রেশন কোথায় করা হয়?
উত্তর প্রতিটি উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস আছে। সেখানে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়।
প্রশ্ন-২. জমি ক্রয় করলে যাচাই বাছাইয়ের জন্য কোথায় যেতে হবে?
উত্তর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসে বিক্রিত জমির তফসিল নিয়ে জমিটি আগে বিক্রি হয়েছে কিনা, আগে অন্য কারো নামে নামজারী আছে কিনা, বিক্রয়ে উল্লেখিত দাগ, খতিয়ান, নকশা ঠিক আছে কিনা এবং সর্বোপরি সরেজমিনে বিক্রিত জমি আছে কিনা তার খোঁজ পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে ভূমি অফিস থেকে সার্ভেয়ার (আমিন) নিয়ে জমি মেপে জমি ক্রয় করতে হবে।
প্রশ্ন-৩. জমি বিক্রয় করতে জমি বিক্রেতার নামে নামজারী কি জরুরি?
উত্তর উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি ছাড়া সকল সম্পত্তি বিক্রয় করার ক্ষেত্রে দাতার নামে নামজারী বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন-৪. মৌখিক দান কি আইন সম্মত?
উত্তর ২০০৪ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন সংশোধনের পর মৌখিক দান বৈধ নয়।