নাবালকের অভিভাবক নিযুক্তির নিয়ম ২০২৩ । নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম কি?
পিতা-মাতার মৃত্যুর পর অভিভাবক নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়-আদালত একটি মামলা রুজুর মাধ্যমে অভিভাবক নির্ধারণ করে থাকে – নাবালকের অভিভাবক নিযুক্তির নিয়ম ২০২৩
অভিভাবক বলতে কি বুঝায়? –“নাবালক” বলতে ১৮৭৫ সালের (১৮৭৫ সনের ৯নং আইন) সাবালকত্ব মর্ম মতে যে এখনো সাবালকত্ব লাভ করে নাই তাকে বুঝায়। “অভিভাবক”বলতে যে ব্যক্তি কোন নাবালকের শরীর অথবা সম্পত্তি অথবা সম্পত্তি ও শরীর উভয়ের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত তাকে বুঝায়। মুসলিম আইনে পিতা জীবিত থাকলে তিনিই নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির স্বাভাবিক ও আইনানুগ অভিভাবক৷ নাবালকের পক্ষে কোন কাজ সম্পন্ন করতে হলে পিতাকে আদালতের হুকুমের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
ছেলের ৭ বছরের পরে ও মেয়ের বয়ঃসন্ধির পর পিতা নাবালকের অভিভাবকত্বের অধিকার পান। তবে পিতার এই অধিকার চূড়ান্ত নয়। সবক্ষেত্রেই আদালত সন্তানের কল্যাণকে প্রাধান্য দেবেন। পিতার আচরণের কারণে (যেমনঃ পিতা যদি কখনই সন্তানদের ভরণপোষণ না দেয়) সন্তানদের মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কারণ বাবা তার আচরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন যে সে সন্তানের কল্যাণে আগ্রহী নয়। আবার মা যদি বাবার আর্থিক সাহায্য ছাড়াই সফলভাবে সন্তানদের নিজ খরচে লালন পালন করে, সেক্ষেত্রে আদালত সন্তাদের পিতার কাছে দিতে অস্বীকার করতে পারেন।
মা কখন জিম্মাদার হতে পারে না? সন্তানের বয়স শর্ত অনুযায়ী থাকলেও মা জিম্মাদার থাকতে পারবেন না নিচের কারণগুলো জন্য। আদালতের আদেশ ছাড়া মাকে জিম্মাদারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। (১) অসত্ জীবন যাপন করলে; (২( মা পুনরায় বিয়ে করলে; (৩) সন্তানের প্রতি অবহেলা করলেও দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে এবং বিয়ে থাকা অবস্থায় বাবার বসবাসস্থল থেকে দূরে কোথাও বসবাস করলে মা জিম্মাদার হতে পারে না। উপরোক্ত কারনগুলো ব্যতীত আদালতের আদেশ ছাড়া মাকে জিম্মাদারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তালাক হওয়ার কারণে মা জিম্মাদারিত্বের অধিকার হারান না। কিন্তু, মা যদি অনাত্নীয় এমন কাউকে বিয়ে করেন যিনি সন্তানের সাথে রক্ত সম্পর্কের কারণে নিষিদ্ধ স্তরের কেউ নন, এরকম ক্ষেত্রে মা পুনরায় বিয়ে করায় জিম্মাদারিত্বের অধিকার হারাবেন। অবশ্য আদালত যদি মনে করে দ্বিতীয় বিয়ে করা সত্ত্বেও মার সাথে থাকলেই সন্তানের কল্যাণ হবে, তবে আদালত মাকে অনেক সময় সন্তানের অভিভাবকত্ব দিতে পারেন।
আদালত কর্তৃক অভিভাবক নির্ধারিত হতে অভিভাবক কর্তৃক নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে আদালতের নাম, মামলা নম্বর ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে / পিতা বা মাতা অভিভাবকের ক্ষেত্রে আদালতের প্রয়োজন পড়ে না
“অভিভাবক” শব্দটি বাংলা ভাষায় “শিশুর জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি” অর্থাত্ পিতা মাতা বা শিশুর সম্পর্কে দায়িত্বশীল কেউ বোঝায়। “অভিভাবক” শব্দটি সাধারণত শিশু পালন পোষনের জন্য দায়িত্বশীল পিতা মাতা বা অন্য যে কেউ বোঝায় যারা একটি শিশুর সম্পর্কে দায়িত্বশীল হন। এছাড়া সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর পিতা মাতা বা অভিভাবকদেরও অভিভাবক বলা হয়।
Caption: Source of information
মা মারা গেলে কারা নাবালকের অভিভাবকঃ যখন কোন নাবালকের মা মারা যায় বা অন্য কোন কারণে অভিভাবকত্বের অধিকার হারিয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে নিচের মহিলা আত্নীয়রা তার জিম্মাদারিত্বের অধিকার পাবে৷
- মা এর মা, যত উপরের দিকে হোক (যেমনঃ নানী, নানীর মা);
- পিতার মা, যত উপরের দিকে হোক (দাদী, দাদীর মা);
- আপন বোন (যাদের বাবা মা একই);
- বৈপিত্রেয় বোন (মা একই কিন্তু বাবা ভিন্ন);
- আপন বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক);
- বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক);
- আপন খালা (যত উপরের দিকে হোক);
- বৈপিত্রেয় খালা (যত উপরের দিকে হোক) এবং
- পূর্ণ ফুফু (যত উপরের দিকে হোক)৷
- উপরের উল্লিখিত মহিলারা না থাকলে নাবালকের যারা অভিভাবক হতে পারে তারা জিম্মাদারিত্বের অধিকার পাবে। ১৯৮০ সালের গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এক্ট অনুযায়ী যে ব্যক্তি কোন নাবালকের শরীর অথবা সম্পত্তি অথবা সম্পত্তি ও শরীর উভয়ের তত্বাবধানে নিযুক্ত থাকে তাকে অভিভাবক বলে।
পিতা কখন সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য?
মুসলিম আইনে একজন বাবা তার নাবালক পুত্র-কন্যার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। শুধু যখন পুত্রসন্তান বয়ঃসন্ধিতে পদার্পণ করে সে সময় থেকে পিতা তার পুত্রের ভরণপোষণ দিতে আর বাধ্য নন। কণ্যাসন্তানের ক্ষেত্রে এ সময়সীমা যতদিন না তার বিয়ে হচ্ছে, সে সময় পর্যন্ত বহাল থাকে। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকেও বাবা ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। তবে বিধবা পুত্রবধূর ভরণপোষণে তিনি বাধ্য নন। যদি কোনো বাবার যুবক সন্তান পঙ্গু বা অসমর্থ হয়ে থাকে, তবে বাবা তাকে ভরণপোষণ প্রদান করবেন। নাবালক পুত্র ও অবিবাহিত কন্যা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বাবার কাছ থেকে পৃথক বসবাস শুরু করলে, বাবা সে ক্ষেত্রে তাদের ভরণপোষণে বাধ্য নন। যে শিশুসন্তানের নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে, বাবা তার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন।