ফিতনা কী? কি ভাবে ফিতনা হয় বুঝার উপায় কি? কোরআন ও হাদীসের আলোকে
ফিতনার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা
ফিতনার সময় করণীয় কী?
১. কোরআন ও সহীহ হাদিসের দিকে ফিরে আসা।
২. রব্বানী আলেমদের সম্পর্ক রাখা।
৩. নিজের নফসের বেশি বেশি হিসাব করা।
৪. ঈমান মজবুত করার জন্য বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।
৫. নিজের জবানকে হেফাজত করা।
৬. ফিতনার স্থান, লোকজন, দল থেকে দুরে থাকা।
৭. সব সময় হক ও হকপন্থিদের সাথে থাকা।
৮. আল্লাহুম্মা ইন্না নাউজুবিকা মিনাল ফিতনা মা যাহারা মিহা ওয়ামা বাতানএ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।
৯. এ ছাড়া ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।
১০. আখেরাতকে অগ্রধিকার দেওয়া।
১১. বেশি বেশি মৃতুকে স্বরণ করা।
১২. দুনিয়ায় যা পাচ্ছেন না তা জন্নাতে পাবেন এ ব্যাপারে একিন রাখা।
১৩. সবুর করা।
১৪. জালিমের জন্য হেদায়েতের দোয়া করা।
১৫. বেশি বেশি তওবা ও এস্তেগফার ও দান খয়রাত করা।
ফিতনায় আক্রান্ত ব্যক্তি
১. কুরআন ও হাদীস পড়ে মজা পায়না। সে মানুষের মন ভুলানো কথা-বার্তা খুঁজে বেড়ায় আর তাতে মজা পায়।
২. দ্বীনের কাজের বিনিময়ে দুনিয়া কিংবা মানুষের প্রশংসা কামনা করে।
৩. প্রকাশ্যে নিজেকে ধার্মিক হিসেবে প্রদর্শন করে। লোক চক্ষুর আড়ালে পাপ করতে আনন্দ বোধ করে।
৪. মৃত্যু অনেক দূরে- সর্বদা এই ধোকায় পড়ে থাকে।
৫. অসৎ এবং পাপী এমন লোকদের সাথে সময় কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নেককার লোকদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে।
নারী ফিতনা থেকে বাঁচার উপায় কি?
উসামা বিন যায়দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমার গত হওয়ার পরে পুরুষের পক্ষে নারীর চেয়ে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা অন্য কিছু ছেড়ে যাচ্ছি না।
আহমাদ, বুখারী ৫০৯৬, মুসলিম ৭১২২, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ
১ . আল্লাহকে ভুলে যাওয়া ও ঈমান বিলুপ্ত হওয়া।
২. নারী আসক্তি ও গুনাহের কারণে অন্তর মরে যায় যার ফলে সে আল্লাহর সঙ্গে মুনাজাতের স্বাদ আস্বাদন করতে সক্ষম হয় না।
৩. পবিত্র কোরআন তার অন্তরে অবস্থান করে না।
৪. ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) সহ অন্যান্য ইবাদত তার কাছে অর্থহীন মনে হয়।
৫. আরো অনেক ধর্মীয় অবক্ষয় রয়েছে, যা তাকে আস্তে আস্তে গ্রাস করে নেয়, যা সে নিজে অনুধাবনও করতে পারে না।
৬. তার অন্তরের দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত হয় গুনাহের অন্ধকার।
৭. নষ্ট হয়ে যায় তার অন্তর দৃষ্টি, যার প্রভাব পড়ে তার শরীরেও। যেমন, চোখের দৃষ্টি চলে যায়, স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে ইত্যাদি।
তাই অন্তরের মধ্যে গুনাহের আসক্তি উপলব্দি করার সাথে সাথে তওবা করা উচিৎ, হয়তোবা এর দ্বারা আসন্ন বিপদ দূরীভূত হয়ে যাবে।
নারীর ফিতনা থেকে বাচার অন্যতম বাস্তব মাধ্যম হচ্ছে বিবাহ
আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেন,
তোমরা নারীদেরকে বিবাহ করো যাকে তোমাদের ভালো লাগে।
সূরা নিসা আয়াত ৩
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্রে বলেন,
তোমরা নারীদেরকে বিবাহ করো তাদের অভিবাবকের অনুমতি নিয়ে।
সূরা নিসা আয়াত ২৫
আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহের বিধান দিয়েছেন বিশেষ হেকমত সামনে রেখে। সেসব হেকমত থেকে এখানে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে
১. মানববংশ বিস্তার করা ও ধ্বংসের হাত থেকে মানববংশকে হেফাজত করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে -তোমরা কুমারী ও অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীদের বিয়ে করো। কেননা কেয়ামতের দিন আমি আমার উম্মতের সংখ্যার আধিক্য দিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করব। (আবু দাউদ, হাদিস ২০৫০)
২. বিবাহ চক্ষু শীতল করে। হাদিস শরিফে এসেছে – হে যুবসমাজ তোমাদের মধ্যে যারা (আর্থিক ও দৈহিকভাবে) বিবাহ করতে সক্ষম, সে যেন বিয়ে করে। কেননা এটি চক্ষু শীতল করে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে অক্ষম, তার জন্য রোজা রাখা জরুরি। এই রোজা তার জন্য জৈবিক চাহিদা প্রতিরোধক। (বুখারি, হাদিস ১৯০৫ মুসলিম, হাদিস – ১৪০০)
৩. বিবাহের মাধ্যমে অন্তরের অসওয়াসা ও অবৈধ কামনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে এসেছে – তারা তাদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তাদের পত্নী বা অধিকারভুক্ত দাসিদের ছাড়া। এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।(সুরা – মাআরেজ, আয়াত ২৯-৩০)
৪. বিবাহের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। বিবাহের মাধ্যমে লজ্জাস্থান হেফাজত হয়। এতে জান্নাতে যাওয়া সহজ হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই ঠোঁটের মাঝখান (জিহ্বা) ও দুই রানের মাঝখান (লজ্জাস্থান) নিরাপদ রাখার বিষয়ে গ্যারান্টি দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের গ্যারান্টি দিচ্ছি। (বুখারি শরিফ, হাদিস- ৬৪৭৪)
৫. যে ব্যক্তি নেককার নারীকে বিয়ে করল, সে ইসলামের পথে ক্রমাগ্রসর হলো। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা যাকে একজন নেককার স্ত্রী দান করেছেন, তিনি তাকে ইসলামের পথে অর্ধেক অগ্রসর করে দিয়েছেন। এবার অবশিষ্ট অর্ধেকের জন্য তার উচিত আল্লাহকে ভয় করা। (মুসতাদরাক হাকেম – ২/১৬১) ইমাম জাহাবি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
৬. বিবাহের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি বাড়ে। কর্মমুখর দিন শেষে ক্লান্তশ্রান্ত দেহে স্বস্তি আসে স্ত্রীর মাধ্যমে। জাগতিক জীবনের শত কোলাহল, কষ্ট মানুষ সহ্য করে প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখপানে চেয়ে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন ব্যক্তি থেকে। তা থেকেই তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। (সুরা আরাফ, আয়াত ১৮৯)
৭. অনেকগুলো পরিবারের সমন্বয়ে সমাজ গঠিত হয়। তাই সমাজের অন্তর্গত পারিবারিক বলয় যত সুদৃঢ় হবে, সমাজও তত সুদৃঢ় হবে। মহানবী (সা.)-এর আচার-আচরণ, চালচলন নিজের জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে সহানুভূতি ও স্নেহময় ছিল। বর্ণিত আছে, ‘আয়েশা (রা.) পেয়ালার যেখানে মুখ রেখে পান করতেন, রাসুল (সা.) সেখানে মুখ রেখে পান করতেন এবং একই হাড্ডির গোশত আয়েশা (রা.) খেয়ে রাসুল (সা.)-এর হাতে দিলে রাসুল (সা.) সেখান থেকেই খেতেন, যেখান থেকে আয়েশা (রা.) খেয়েছেন। ’ (নাসাঈ – হাদিস – ৭০)
৮. নেক সন্তান জন্ম দিলে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পাওয়া যাবে। মৃত্যুর পরও এর সুফল ভোগ করা যাবে। হাদিস শরিফে এসেছে -মানুষ যখন মারা যায়, তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ব্যক্তির আমল চলমান থাকে। এক. সদকায়ে জারিয়ামূলক কাজকর্ম (যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা করা, রাস্তাঘাট করা, মানবসেবায় কোনো কাজ করা)। দুই. তাঁর রেখে যাওয়া জ্ঞান, যা থেকে মানুষ উপকৃত হয়। তিন. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসলিম শরিফ, হাদিস ১৬৩১)