সুদের হার সীমা ২০২২ । বাংলাদেশ ব্যাংক এ সপ্তাহে সুদহার সীমা তুলে দিতে পারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আমানতের উপর সর্বোচ্চ ৬% এবং ঋণের উপর সর্বোচ্চ ৯% সুদের বেধে দেওয়া হয়-মূল্যস্ফিতির বাজারে এ হার কোনভাবে ধরে রাখা যাচ্ছে না – ৯/৬ সুদের হার সীমা ২০২২
Interest Rate with no bound – Bangladesh Bank is unlikely to lift the interest rate cap on bank loans anytime soon. “We are waiting for a good time. The interest cap will be lifted but this is not the right time to withdraw it,” BB Governor Abdur Rouf Talukder said at a conference organised by Bangladesh Institute of Development Studies (BIDS) in the capital today 01/12/2022- The Daily Star.
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক খাতে সুদের হার ঋণে সর্বোচ্চ ৯ ও আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ কার্যকর আছে। ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে সুদহার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এটিই এখন কাল হয়ে দাড়িয়েছে, ব্যবসায়ীরা এ থেকে সুফল পেলেও আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ব্যাংকগুলো মাত্র ২.৫% থেকে ৩% সুদে গ্রাহকের আমানত ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং ক্রমাগত মূল্যস্ফিতির ফলে ব্যাংক আমানত ও বিনিয়োগ নিম্নমূখী হয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। আইএমএফ প্রতিনিধি আমানত ও ঋণের উপর সুদ সীমা বা বেধে দেওয়া সীমা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে এবং অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এমন সিদ্ধান্তে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সরকার যখন ওই সুদহার বেঁধে দেয়, তার আগে ২০২০ সালের মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর পর থেকে মূল্যস্ফীতির পারদ শুধু উপরের দিকেই উঠতে দেখেছে বাংলাদেশে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী এ বছর অগাস্টে এই হার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে যায়। সেপ্টেম্বরে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ হয়। এ অবস্থায় ব্যাংকে টাকা রেখে লোকসান হচ্ছে আমানতাকারীদের, কারণ তারা যে হারে সুদ পাচ্ছেন, মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি।
সঞ্চয়পত্র যেখানে এখনও ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানতে ১১.৫% পর্যন্ত মুনাফা দিচ্ছে সেখানে ব্যাংকগুলো আমানতের উপর মাত্র ২.৫ থেকে ৩% সুদ প্রদান করছে তাতে গ্রাহক হারাচ্ছে ব্যাংকগুলো
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছিল, তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির উপরে থাকতে হবে আমানতের সুদের হার। কিন্তু বাস্তবে তার কার্যকারিতা নেই। গত সেপ্টেম্বর শেষেও ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৪ শতাংশের ঘরেই ছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
Caption: Interest Rate Of Scheduled Banks (Deposit Rate)
নির্ধারিত সুদ হার ২০২০ । সুদের হার বেধে দেওয়ার কারণ কি ছিল
- ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পসহ ব্যবসা ও সেবা খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড়ায় ফলে এটি বেধে দেওয়া হয়।
- ব্যাংক ঋণের সুদ উচ্চমাত্রার কারণে সংশ্লিষ্ট শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
- ফলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এতে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতারা যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে করতে পারেন না।
- এতে ব্যাংক খাতে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এমন প্রেক্ষাপটে সুদ হার বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
- শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক সক্ষমতা অর্জন, শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় সুদ হার বেধে দেওয়া ফলেই।
- অবশ্য সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা ব্যবসায়ী মহলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।
আমানতকারীদের জন্য সুবিধা হয়েছিল কি?
না। বর্তমানে আমানতকারীগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তার সঞ্চিত অর্থ কোথায় রাখতে সে একটু সুবিধা ভোগ করতে পারবে সে সোর্স যেন তারা খুজেই পাচ্ছে না। এফডিআর বা যে কোন সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে মাত্র ৬% পর্যন্ত মুনাফা বা সুদ পাচ্ছে ফলে ব্যাংক রাখা অর্থ হতে আয় কোন ভাবে টাকা বৃদ্ধি ঘটাতে পারছে না। ব্যাংকগুলো মুনাফা করলেও গ্রাহকের টাকা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্রাহক যদি মূল্যস্ফিতির চেয়ে কম অর্থ মুনাফা বা সুদ হিসেবে পায় তবে টাকা মান কমে প্রতি বছর তার টাকা কমতে থাকবে। তাই গ্রাহক কোনভাবে ব্যাংকে টাকা রাখা লাভজনক বা মুনাফা প্রবন মনে করছে না। কেউ কেউ তো টাকা তুলে নিয়ে ঘরে রেখে দিচ্ছে তবুও ব্যাংক রাখতে চাইছে না।