সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ২০২৫ । বরাদ্দ বাড়লেও সুফল পাচ্ছে না প্রকৃত দরিদ্ররা?
সরকার প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ালেও এর কার্যকারিতা ও সুফল নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, সুবিধাভোগীর তালিকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে কর্মসূচির একটি বড় অংশ প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, বরং ভূতুড়ে বা সচ্ছল ব্যক্তিদের পকেটে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলে আনা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের তথ্যানুসারে, রাজনৈতিক বিবেচনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ সুবিধা এমন মানুষের হাতে যাচ্ছে, যারা এর যোগ্য নয়। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিপর্যস্ত প্রকৃত হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে।
ভূতুড়ে সুবিধাভোগী ও বাস্তবায়নে দুর্বলতা
দেশের ২৫টিরও বেশি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শতাধিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলেও, এসব কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয়হীনতা একটি বড় সমস্যা। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, একই ব্যক্তি যেমন একাধিক সুবিধা পাচ্ছে, তেমনি বহু যোগ্য ব্যক্তি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে সুবিধাভোগী নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা এই অদক্ষতার প্রধান কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেট থেকে সরকারি কর্মচারীদের অবসর ভাতা, সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ এবং কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকির মতো বিষয়গুলো বাদ দিলে দরিদ্রদের জন্য প্রকৃত বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। এই অপ্রতুল বরাদ্দও যদি অযোগ্যদের হাতে চলে যায়, তবে দারিদ্র্য নিরসনে টেকসই প্রভাব ফেলা কঠিন।
সমাধানে সরকারের ডিজিটাল উদ্যোগ
এই সমস্যা নিরসনে সরকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পর্যায়ে একটি জনসংখ্যা রেজিস্টার তৈরির কাজ, যা সম্পন্ন হলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরিদ্রদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। এছাড়া, জিটুপি (Government to Person) পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি ভাতাভোগীর মোবাইল হিসাবে অর্থ বিতরণ প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে, যা প্রতারণা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সহায়ক হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই ডিজিটাল উদ্যোগের পাশাপাশি উপকারভোগীর তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা, স্থানীয় সরকারকে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে শক্তিশালী করা এবং মনিটরিং ও সুপারভিশন আরও কঠোর করা জরুরি। কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা গেলে তা কেবল দারিদ্র্য দূর করবে না, বরং দেশের অর্থনীতির চাকাকেও আরও গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে।

