জমি-জমা সংক্রান্ত

জমি পরিমাপ প্রক্রিয়া ২০২৫ । নিজে জানুন জমির পরিমাপের প্রাথমিক ধারণা, প্রতারণা থেকে বাঁচুন

জমি কেনা বা বিক্রি করার সময় জমির পরিমাপ বা পরিমাণ জানা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত আমরা এই কাজের জন্য একজন আমিন বা সার্ভেয়ারের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করি। তবে জমি পরিমাপের ব্যাসিক ধারণা ও সূত্রগুলো জানা থাকলে এই নির্ভরতা কমে আসে এবং প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই দূর হয়। সেই সঙ্গে জমি কেনার সময় আপনি নিজেই পরিমাণের একটি প্রাথমিক হিসাব বের করতে পারবেন।

জমি পরিমাপকে স্বচ্ছ ও সহজ করে তোলার জন্য বিভিন্ন একক, সূত্র এবং হিসাব পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

জমির মাপের বিভিন্ন একক

জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে কিছু বহুল ব্যবহৃত একক এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক জেনে রাখা প্রয়োজন।

একক সমপরিমাণ
১ শতাংশ ১০০০ বর্গলিংক
১ শতাংশ ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
১ শতাংশ ১৯৩.৬০ বর্গহাত
১ শতাংশ ৪৮.৪০ বর্গগজ
১ শতাংশ ৪০.৪৭ বর্গমিটার

বিভিন্ন পরিমাণের জমির হিসাব

একক সমপরিমাণ
১ একর ১০০ শতক
১ একর ৬০.৬০ কাঠা
১ একর ৩.০৩ বিঘা
১ একর ৪৩৫৬০ বর্গফুট
১ একর ৪৮৪০ বর্গগজ
১ হেক্টর ২.৪৭ একর
১ কাঠা (৩৫ শতাংশের মাপে) ১.৭৫ শতক
১ কাঠা (৩৩ শতাংশের মাপে) ১.৬৫ শতক
১ কাঠা (৩০ শতাংশের মাপে) ১.৫০ শতক
১ বিঘা (স্ট্যান্ডার্ড) ৩৩ শতাংশ

বিশেষ দ্রষ্টব্য: বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে বিঘার হিসাবে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। সরকারিভাবে ৩৩ শতাংশে ১ বিঘা ধরা হলেও কোথাও কোথাও ৩৫ শতাংশে ১ বিঘা, আবার ইদানীং ৩০ শতাংশে ১ বিঘা প্রচলিত আছে। তবে ২০ কাঠায় ১ বিঘার হিসাব সর্বত্র প্রচলিত।


ক্ষেত্রফল আকৃতির জমির মাপার সহজ সূত্র

জমির আকৃতি বর্গাকার, আয়তাকার বা অন্য কোনো সুষম আকৃতির হলে এই সূত্রগুলো ব্যবহার করা যায়:

পরিমাপ সূত্র
ক্ষেত্রফল (বর্গাকার) বাহু বাহু
কর্ণ (বর্গাকার) ১ বাহু ১.৪১৪
পরিসীমা (বর্গাকার) ১ বাহু

উদাহরণ: একটি বর্গাকার জমির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১২০ লিংক করে হলে, উহার ক্ষেত্রফল ও জমির পরিমাণ কত?

১. ক্ষেত্রফল: বাহু বাহু = বর্গলিংক। ২. জমির পরিমাণ: আমরা জানি, ১ শতাংশ = ১০০০ বর্গলিংক। সুতরাং, জমিটির পরিমাণ হবে: শতাংশ।


অসম বা বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপের পদ্ধতি

যে জমির বাহুগুলো অসম, সে ক্ষেত্রে জমিটির গড় দৈর্ঘ্য ও গড় প্রস্থ বের করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে হয়।

উদাহরণ: একটি জমির উত্তর আইল ৫০ ফুট, দক্ষিণ আইল ৫৪ ফুট, পশ্চিম আইল ৩০ ফুট এবং পূর্ব আইল ৪০ ফুট। এছাড়া ভিতরে এক অংশে ৩৪ ফুট ও অন্য অংশে ৩৮ ফুট প্রস্থ পরিমাপ নেওয়া হয়েছে। জমিটির পরিমাণ কত?

১. গড় দৈর্ঘ্য নির্ণয়: জমির দুই পাশের দৈর্ঘ্য যোগ করে ২ দিয়ে ভাগ করতে হবে। গড় দৈর্ঘ্য = ফুট। ২. গড় প্রস্থ নির্ণয়: জমিটি প্রস্থে অসম হওয়ায় চার দিকের বাউন্ডারি ও ভিতরের দুটি পরিমাপের মোট ৬টি প্রস্থের পরিমাপ নিয়ে গড় করা যেতে পারে, অথবা শুধু চারটি বাউন্ডারির প্রস্থের গড়ও করা যায়। এই উদাহরণে আমরা চারটির গড় নেব। গড় প্রস্থ = ফুট। ৩. ক্ষেত্রফল: দৈর্ঘ্য প্রস্থ = বর্গফুট। ৪. জমির পরিমাণ: আমরা জানি, ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট। জমির পরিমাণ = শতাংশ।


ভূমি সংক্রান্ত কিছু জরুরি শব্দ ও জরিপ পদ্ধতি

জমি সংক্রান্ত কাগজপত্রে ব্যবহৃত কিছু শব্দ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার:

  • পরচা: জরিপ শেষে তৈরি করা স্বত্ব ও দখলিস্বত্ব রেকর্ড। এটি খতিয়ানের পূর্বরূপ।
  • দাখিলনামা/দাখিলা: ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের পর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত রসিদ।
  • জমাবন্দি: খাজনা বা করের হিসাবের খতিয়ান।
  • দাগ নাম্বার: মানচিত্রে জমির অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য দেওয়া নম্বর।
  • ছুটদাগ: জরিপের সময় ভুলবশত বাদ পড়া দাগ বা নম্বর।
  • বি.এস. (BS) খতিয়ান: ভূমি সংস্কার কমিটির সিদ্ধান্তে ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে শুরু হওয়া বাংলাদেশ সার্ভে (জোনাল সেটেলমেন্ট) জরিপে সৃষ্ট খতিয়ান। এটি আর.এস. (RS) খতিয়ান নামেও পরিচিত।
  • দিয়ারা জরিপ: নদী বা সাগরের কারণে যে সকল এলাকায় জমির ভাঙা-গড়া বেশি হয়, সে অঞ্চলে পরিচালিত জরিপ।

জমি মাপার যন্ত্র ও পদ্ধতি

ঐতিহাসিকভাবে এবং আধুনিক পরিমাপে ব্যবহৃত কিছু উপকরণ:

  • গ্যান্টার জরিপ (Gunter’s Chain): ইংরেজ বিজ্ঞানী গ্যান্টার আবিষ্কৃত ২২ গজ বা ৬৬ ফুট দীর্ঘ চেইন, যাতে ১০০টি লিংক থাকে। বর্তমানে ফিতা/টেপও ব্যবহৃত হয়।
  • ডায়াগনাল স্কেল বা গান্টার স্কেল: তামা বা ব্রোঞ্জের তৈরি চার কোনা বিশিষ্ট স্কেল, যা ১৬”=১ মাইল স্কেলে নকশা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • আভার অফসেট বা গুনিয়া: প্লাস্টিকের তৈরি স্কেল, যা নকশার সংকোচিত দূরত্ব পরিমাপ ও গুনিয়া পদ্ধতিতে সংখ্যা হিসাব করতে সহায়ক।
  • ডিভাইডার বা কাটা কম্পাস: জ্যামিতিক কম্পাস, যা দিয়ে নকশার দূরত্ব নিয়ে ডাইগোনাল স্কেলে মাপা যায়।

এই মৌলিক ধারণাগুলো জানা থাকলে আপনি সার্ভেয়ারের পরিমাপের সঙ্গে নিজের প্রাথমিক হিসাব মেলাতে পারবেন এবং জমি পরিমাপের পুরো প্রক্রিয়াটি আপনার কাছে অনেক স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।

admin

আলামিন মিয়া, একজন ব্লগার, ডিজিটাল মার্কেটার, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার। ব্লগিংকরছি প্রায় ৭ বছর যাবৎ। বিভিন্ন অনলাইন সেবা হাতের কাছে পেতে নির্দেশনা ও পদ্ধতি গুলো ব্যাখ্যা করা হয় যা আপনি খুব সহজেই এই ওয়েবসাইট হতে পেতে পারেন। যদি অতিরিক্ত কোন তথ্য প্রয়োজন হয় বা পরামর্শ থাকে তবে মেইল করুন admin@tricksboss.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *