সর্বশেষ নিউজ

সরকারি খাস জমি লিজ বা বন্দোবস্ত ২০২৫ । ভূমিহীন ও স্বল্প জমির মালিকদের জন্য সুযোগ আছে?

ভূমিহীন ও স্বল্প জমির মালিকদের জন্য সরকারি খাস জমি লিজ বা বন্দোবস্ত নেওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করে একজন নাগরিক সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য এই সম্পত্তি ভোগদখলের অধিকার পেতে পারেন।

জমি লিজ বা বন্দোবস্ত কী?

লিজ বা বন্দোবস্ত বলতে বোঝায়, সরকারের যে খাস (অব্যবহৃত/অর্পিত) সম্পত্তি রয়েছে, তা নির্দিষ্ট শর্ত ও মেয়াদের ভিত্তিতে সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে ভোগদখল করার অনুমতি নেওয়া।

  • সর্বোচ্চ মেয়াদ: সরকারি খাস সম্পত্তি সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেওয়া যায়।

  • জমির পরিমাণ: একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০০ শতক বা ১ একর পর্যন্ত জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিতে পারেন।

খাস জমি খুঁজে পাওয়ার উপায়

আপনার এলাকায় কোন জমিগুলো খাস অবস্থায় আছে, তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

  • প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ৮ নম্বর রেজিস্ট্রার নামে একটি নথি থাকে।

  • এই রেজিস্ট্রারে ওই এলাকার সকল খাস জমির বিস্তারিত তালিকা অন্তর্ভুক্ত থাকে। ভূমি অফিসে গিয়ে এই রেজিস্ট্রার তল্লাশি করে আগ্রহী ব্যক্তিরা খাস জমির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন।

কারা লিজের জন্য আবেদন করতে পারবেন?

১৯৯৭ সালে সরকারি খাস জমি লিজ বা বন্দোবস্ত সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়। বর্তমানে এই নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র তিনটি শর্ত পূরণকারী শ্রেণির মানুষ কৃষি খাস জমি লিজ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন:

  1. আবেদনকারীকে কৃষক হতে হবে।

  2. আবেদনকারীকে ভূমিহীন হতে হবে।

  3. আবেদনকারীর বসতবাড়ী থাকলেও, তার মোট জমির পরিমাণ ১০ শতকের মধ্যে হতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ: ১০ শতকের বেশি জমির মালিক হলে তিনি লিজের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

লিজ নেওয়ার নিয়ম ও প্রক্রিয়া

সরকারি খাস জমি লিজ বা বন্দোবস্ত প্রদানের ক্ষমতা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) হাতে রয়েছে।

  • আবেদন: খাস জমি লিজ নেওয়ার জন্য ইচ্ছুক ব্যক্তিকে তার জেলার ডিসি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর আবেদন করতে হবে।

  • আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া: আবেদন জমা দেওয়ার পর অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে ডিসি অফিস, এসি ল্যান্ড অফিস এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে সম্পন্ন হয়।

  • বন্দোবস্ত প্রদান: সকল তথ্যাদি বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক মহোদয় আবেদনকারীকে সরকারি খাস সম্পত্তির বন্দোবস্ত প্রদান করেন।

এই সুযোগটি বিশেষ করে সমাজের ভূমিহীন ও অসচ্ছল কৃষক শ্রেণির মানুষের জন্য জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

ইজারা বা লীজ নিয়ে ব্যবসা করা যাবে?

হ্যাঁ, ইজারা বা লিজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবসা করা যাবে, তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:

✅ ইজারা বা লিজের ধরন

ব্যবসা করার জন্য সরকারি বা বেসরকারি উভয় প্রকারের জমি বা সম্পত্তি লিজ নেওয়া যেতে পারে:

  1. কৃষি খাস জমি (আপনার পূর্বের আলোচনা অনুযায়ী): সাধারণত এই জমিগুলি ভূমিহীন কৃষকদের কৃষি কাজের জন্য দেওয়া হয়। এই জমিতে সরাসরি বাণিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করা কঠিন হতে পারে এবং এটি লিজের শর্তের উপর নির্ভর করবে। নীতিমালা অনুযায়ী এটি মূলত ভূমিহীনদের জীবিকা নির্বাহের জন্য।

  2. বাণিজ্যিক/শিল্প লিজ (সরকারি): সরকার অনেক সময় নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলির মাধ্যমে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ব্যবসা পরিচালনার জন্য জমি বা প্লট লিজ দেয়। যেমন— দোকান, কারখানা, বা অন্য কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরির জন্য। এই লিজের শর্তেই ব্যবসায়িক ব্যবহার অনুমোদিত থাকে।

  3. বেসরকারি লিজ/ভাড়া: ব্যক্তিগত মালিকানা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো স্থান বা সম্পত্তি লিজ বা ভাড়া নিয়ে আপনি যেকোনো ধরনের বৈধ ব্যবসা (যেমন— দোকান, অফিস, গুদাম, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি) পরিচালনা করতে পারবেন।

⚠️ গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী

আপনি যে সম্পত্তি লিজ নিচ্ছেন, তার লিজ দলিলের শর্তাবলী (Terms and Conditions) ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।

  • ব্যবহারের উদ্দেশ্য: দলিলের মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে যে লিজ নেওয়া সম্পত্তিটি কী কাজে ব্যবহার করা যাবে। যেমন:

    • ‘শুধুমাত্র কৃষি কাজের জন্য’ লিজ নিলে আপনি সেখানে কারখানা বা শপিং মল তৈরি করতে পারবেন না।

    • ‘বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য’ লিজ নিলে আপনি সেখানে দোকান বা অফিস চালাতে পারবেন।

  • সাব-লিজ/হস্তান্তর: অনেক লিজ চুক্তিতে ইজারা নেওয়া সম্পত্তি অন্য কাউকে আবার লিজ দেওয়া (সাব-লিজ) বা লিজের অধিকার হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ থাকে।

  • নির্মাণ বা পরিবর্তন: লিজ নেওয়া জমিতে কোনো স্থায়ী কাঠামো বা বিল্ডিং তৈরির আগে লিজদাতার (সরকার/ব্যক্তি) অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক হতে পারে।

উপসংহার: আপনি যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সম্পত্তি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লিজ নেন এবং সেই চুক্তিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন থাকে, তবে আপনি অবশ্যই লিজ নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।

খাস জমি কিভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা নিতে হয়?

সরকারি খাস জমি দীর্ঘ মেয়াদে (সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য) ইজারা বা বন্দোবস্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপ এবং শর্তাবলীর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:

দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা বা বন্দোবস্তের পদ্ধতি (৯৯ বছর পর্যন্ত)

দীর্ঘ মেয়াদে খাস জমি ইজারা নেওয়ার ক্ষমতা কেবল সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) হাতে ন্যস্ত থাকে।

ধাপ ১: যোগ্যতা নিশ্চিত করুন

দীর্ঘ মেয়াদী কৃষি খাস জমি ইজারা নেওয়ার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ১৯৯৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে:

  • আপনাকে অবশ্যই ভূমিহীন কৃষক হতে হবে।

  • আপনার যদি বসতবাড়ী থাকে, তবে জমির পরিমাণ ১০ শতকের (Decimal) বেশি হওয়া চলবে না।

ধাপ ২: খাস জমি চিহ্নিতকরণ

প্রথমে আপনাকে আপনার এলাকায় কোন কোন জমিগুলো খাস অবস্থায় আছে তা জানতে হবে।

  • এজন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন।

  • সেখানে ৮ নম্বর রেজিস্ট্রার (Register 8) পরীক্ষা করুন। এই রেজিস্ট্রারে এলাকার সকল খাস জমির তালিকা অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ধাপ ৩: জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন

খাস জমি চিহ্নিত করার পর, সেটির ইজারা পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিতে হবে।

  • আবেদনটি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মহোদয় বরাবর করতে হবে।

  • আবেদনে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, জমির বিবরণ (দাগ নম্বর, খতিয়ান, মৌজা ইত্যাদি), এবং আপনি কেন ইজারা পেতে চান তার কারণ উল্লেখ করতে হবে।

ধাপ ৪: অফিসিয়াল প্রক্রিয়া ও যাচাই-বাছাই

আবেদন জমা দেওয়ার পর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে:

  1. যাচাই: ডিসি অফিস থেকে আবেদনটি সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়।

  2. তদন্ত: এসি ল্যান্ড অফিসের কর্মীরা (সাধারণত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা তহসিলদার) সরেজমিনে গিয়ে আবেদনকারীর যোগ্যতা, জমির খাস অবস্থা এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই করেন।

  3. অনুমোদন: সকল তথ্য সঠিক এবং নীতিমালা অনুযায়ী পাওয়া গেলে, ফাইলটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফিরে আসে।

ধাপ ৫: বন্দোবস্ত প্রদান

সকল যাচাই-বাছাই শেষে জেলা প্রশাসক মহোদয় সন্তুষ্ট হলে, তিনি জমিটি আবেদনকারীর নামে দীর্ঘ মেয়াদে (সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য) বন্দোবস্ত (Lease) প্রদান করেন। এরপর প্রয়োজনীয় ফি এবং আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার মাধ্যমে আবেদনকারী জমির ভোগদখলের অধিকার লাভ করেন।

admin

আলামিন মিয়া, একজন ব্লগার, ডিজিটাল মার্কেটার, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার। ব্লগিংকরছি প্রায় ৭ বছর যাবৎ। বিভিন্ন অনলাইন সেবা হাতের কাছে পেতে নির্দেশনা ও পদ্ধতি গুলো ব্যাখ্যা করা হয় যা আপনি খুব সহজেই এই ওয়েবসাইট হতে পেতে পারেন। যদি অতিরিক্ত কোন তথ্য প্রয়োজন হয় বা পরামর্শ থাকে তবে মেইল করুন admin@tricksboss.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *