ইফতারে যা খাওয়া উচিত এবং যা খাওয়া উচিত নয়

রোজায় দীর্ঘ সময় পর ইফতার করতে হয় বলে খাবারটা হতে হবে সহজ ও সুপাচ্য। অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই উচিত। এগুলো খেলে ওজন তো বাড়বেই সেই সঙ্গে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। সরাদিন রোজা রাখার পর ইফতার এ এমন খাবার রাখতে হবে যা আমাদের পরের দিনের রোজা পর্যন্ত সারা রাত শরীরকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে। এই ব্লগে আমরা ইফতারের সময় যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ঢুবো তেলে ভাজা খাবার-

ভাজা খাবার যেমন সমোসা, পাকোড়া এবং স্প্রিং রোল জনপ্রিয় ইফতার স্ন্যাকস, কিন্তু এগুলো মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। ভাজা খাবারে চর্বি এবং ক্যালোরি বেশি থাকে, যা পেট ফুলে যাওয়া এবং অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে। প্রচুর ভাজা খাবার খাওয়ার ফলে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

চিনিযুক্ত খাবার-

ইফতারের সময় মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন ক্যান্ডি, কেক এবং মিষ্টি পানীয়, জিলাপি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রায়শই লবণ এবং প্রিজারভেটিভের পরিমাণ বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত খাওয়া হলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ইফতারের সময় প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, টিনজাত স্যুপ এবং স্ন্যাকস এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাবারগুলিতে প্রায়শই পুষ্টির পরিমাণ কম এবং ক্যালোরি পরিমাণ বেশি থাকে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।

কার্বনেটেড পানীয়-

ইফতারের সময় কার্বনেটেড পানীয় যেমন সোডা এবং এনার্জি ড্রিংকস এড়িয়ে চলতে হবে। এই পানীয়গুলিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে যার ফলে পেট ফোলাভাব এবং অস্বস্তি হতে পারে। এর বদলে প্রচুর পরিমাণে পানি , দুধ, বা তাজা জুস রাখুম আপনার ইফতার এ। যা আপনাকে উজ্জীবিত থাকাতে সাহায্য করবে।

উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার-

ইফতার এ উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। চর্বিযুক্ত খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এর পরিবর্তে, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দই বা দুধ বেছে নিন, যা হজম করা সহজ এবং ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

মশলাদার খাবার-

মসলাযুক্ত খাবার যেমন মরিচ এবং গরম সস ইফতারের সময় পেটের আস্তরণে জ্বালাতন করতে পারে এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া, মশলাদার খাবার পানিশূন্যতা এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স হতে পারে। আপনি যদি মশলাদার খাবারগুলি উপভোগ করেন তবে সেগুলি পরিমিতভাবে খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং তাদের প্রভাবের ভারসাম্য বজায় রাখতে অন্যান্য খাবারের সাথে যুক্ত করুন।

ক্যাফিন যুক্ত পানীয় পরিহার করুন –

ক্যাফিন একটি উদ্দীপক যা ঘুমের ক্ষতি করে এবং ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই ইফতারের সময় চা এবং কফির মতো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে শরীর কে হাইড্রেটেড রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য ভেষজ চা বা ডিক্যাফিনেটেড কফি বেছে নিন।

টক জাতীয় খাবার-

টক ফলে যদিও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে তারপরেও টক জাতীয় ফলে সাইট্রিক অ্যাসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল বেশি খাবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় রাতের খাবার শেষ করে ফল খেলে।

স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার নিশ্চিত করতে ইফতারের সময় নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা অপরিহার্য। ইফতারের সময় ভাজা খাবার, চিনিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বনেটেড পানীয়, উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, মশলাদার খাবার এবং ক্যাফেইন পরিহার করা উচিত বা পরিমিতভাবে সেবন করা উচিত। পরিবর্তে, আপনার ইফতারের খাবারে খেজুর, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন, ফল এবং শাকসবজির মতো খাবার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন যাতে টেকসই শক্তি সরবরাহ করা যায় এবং স্বাস্থ্যকর হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। ইফতারের সময় সচেতন খাদ্য পছন্দ করার মাধ্যমে, আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার শরীর রমজান মাসে সুস্থ ও শক্তিমান থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *