খুলনা জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান যা খুলনা নামকরণের ইতিহাস মনে করে দেয় এবং সেই দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি?

খুলনা জেলার দর্শনীয় স্থান এবং নামকরণের ইতিহাস

 

১. লাল দালান, খুলনা জিলা স্কুল

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে অষ্টাদশ শতকের শেষ দিক হতে সুন্দরবন রায়মঙ্গল বিভাগের লবণচৌকী স্থাপিত হয় শহরের কয়লাঘাটা নামক স্থানে। একে বলা হত নিমক মহল বা লবণচৌকী। ঐ সময় এ লবণচৌকীর দারোগা ছিলেন পূর্বোক্ত সাতুরাম মজুমদার। এ ভবন নির্মাণে তিনি অনেক অর্থ সাহায্য করেন বলে জানা যায়। এখন ভূতের বাড়ি নাম নিয়ে বাড়িটি আছে তবে ভূত নেই। সিটি কলেজ বর্তমানের রিকুউজিশন করা বাড়িতে যাওয়ার আগে এখানে কিছুদিন ছিল। পরে সেখানে স্থাপন করা হয় আনসার ক্যাম্প। সেজন্য এ ভবনটি একটা দুঃখের স্মৃতির স্মারকওসা

রাদেশের মধ্যে এ ভবনেই প্রথম রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনার এ আনসার ক্যাম্পেই ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থি যুবককে নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। প্রথম পর্যায়ে এ রাজাকার বাহিনী ছিল শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন। পরে ঐ সালের ১ জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স ৭১ জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। এর পরেও খুলনা শহরের রাজাকারদের সদর দফতর ছিল এই ভূতের বাড়ি। বর্তমানে এ ভবনে বিভাগীয় আনসার ক্যাম্প অবস্থিত। দেশের অন্যত্রও এ ধরনের ভূতের বাড়ির অস্তিত্বের কথা শোনা যায়।

২. কয়লাঘাটা কালীবাড়ি

শহরের কেন্দ্রস্থলে সাউথ সেন্ট্রাল রোড ও গগনবাবু রোডের সংযোগস্থলে ১০ কাঠা জমির উপর এ মন্দিরটি অবস্থিত। এ মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৯৩৪ সালের জুন মাসে। ঐ সময় এ মন্দির নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রভাসচন্দ্র চ্যাটার্জী, প্রসন্নরায় চৌধুরী, কুণ্ডুবিহারী মুখার্জী, পূর্ণচন্দ্র চ্যাটার্জী, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ। এ মন্দিরে দক্ষিণা কালী স্থাপন করা হয়। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে এ মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের পরে ধর্মপ্রাণ অক্ষয় চন্দ্র দত্তের উদ্যোগে ও স্থানীয় হিন্দুদের সহযোগিতায় এ মন্দিরের পুনপ্রতিষ্ঠা ঘটে।

৩. লাল দালান

লাল দালান বলে পরিচিত খুলনা জেলা স্কুলের প্রধান ভবনটিও শহরের আর একটি প্রাচীন ভবন। জেলা স্কুল খুলনা বিভাগের সবচেয়ে পুরানো সরকারি বিদ্যালয়। খুলনা শহরের দ্বিতীয় স্কুল। এখন এর বয়স প্রায় ১৩০ বছর। ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত তা বেসরকারি স্কুল হিসেবে চালু ছিল। ১৮৮৩ সালে হান্টার কমিশনের রিপোর্ট মোতাবেক ১৮৮৫ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন সরকার এর দায়িত্বভার গ্রহণ করে। তখন থেকে এর নাম হয় খুলনা জেলা স্কুল। ভিক্টোরিয়ান রীতিতে নির্মিত লাল দালান বলে পরিচিত এ ভবনটি স্কুলের আদি ভবন। এ ভবন নির্মাণে অর্থ সাহায্য করেন বেলফুলিয়া নিবাসী বাবু সাতুরাম মজুমদার। তিনি ছিলেন স্থানীয় কয়লাঘাটা নিমক চৌকীর দারোগা।

৪. চট্টোপাধ্যায় ব্রাদার্স 

বাড়ি নয় এই দোকানটি বিশেষ কারণে ঐতিহাসি গুরুত্বের দাবিদার। বর্তমানে এর নাম ফাতেমা জুয়েলার্স হলেও একসময় এর নাম ছিল চট্টোপাধ্যায় ব্রাদার্স। আর সে দোকানের উদ্বোধন ঘটে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর হাতে। শুধু উদ্বোধন নয়, দোকানটিও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। ত্রিশের দশকে কিছু আক্রমণাত্মক ঘটনায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এদেশের ইংরেজ শাসকেরা নানাবিধ দমননীতির মাধ্যমে বিপ্লবীদের অভ্যন্তরে নিক্ষিপ্ত হন। এ সময় আত্মগোপন করার জন্য কিছু কর্মী ব্যবসায়ী সেজে খুলনা শহরে ব্যবসা বাণিজ্য আরম্ভ করেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন খুলনার এক অসাধারণ বিপ্লবী নেতা।

এখানকার চট্টোপাধ্যায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। একসময় তিনি খুলনা

৫. শিববাড়ি শিব মন্দির 

উল্লেখ্য, নগরীর ভৈরব নদের তীরে ৫ নম্বর ঘাট এলকার রয়েছে প্রায় ৩শত বছরের পুরাতন জোড়া শিবমন্দির। মন্দিরে যেতে মানুষ এই মোড় ব্যবহার করতো। সে সময় থেকে সময় থেকে শিববাড়ি মোড় মোড় হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ এই নামকরণের ইতিহাস সুপ্রাচীন। ১৯৯৩ সালে স্থানটির নাম পরিবর্তন করে বাবরী চত্ত্বর করার দাবি জানিয়েছিলো একটি পক্ষ, কিন্তু আর এক পক্ষের বিরোধীতায় সেটি সম্ভব হয়নি। আর এখন খুলনা শহরের অধুনালুপ্ত শিব মন্দির একটা প্রাচীন শিব মন্দির। এর থেকেই কেডিএ ভবন সংলগ্ন এলাকার নাম হয়েছে শিববাড়ি সংলগ্ন মোড়ের নাম হয়েছে শিববাড়ির মোড়। এ যে খুব প্রাচীন তাতে সন্দেহ নেই। অনেকের মতে অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে জনৈক প্রসেস সার্ভেয়ার উমাচরণ দে এ মন্দির নির্মাণ করেন। বর্তমানে তার সংস্কার করে মূর্তি প্রতিষ্ঠাপূর্বক নিয়মিত পূজাঅৰ্চনা হচ্ছে।

৬. নীলকর চার্লির বাড়ি 

শহরের প্রাচীন বাড়ি হিসেবে প্রথমে নীলকর চার্লির বাড়িটি উল্লেখযোগ্য। এটা শহরের প্রথম পাকা বাড়ি। রেলওয়ে এলাকার মধ্যে অবস্থিত এ বাড়িটি বর্তমানে রেল কর্মচারীদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা নির্মিত হয় জনৈক চোলেট সাহেব বা চার্লির হাতে। তিনি ছিলেন খুলনার একজন নামকরা নীল কুঠিয়াল। অনেকের মতে তিনি ছিলেন স্থানীয় লবণ এজেন্সির প্রধান মি ইওয়ার্টের সহযোগী।

তিনি রেল স্টেশনের পূর্বদিকে এ বাড়ি নির্মাণ করেন। ঐ সময় অবশ্য রেল স্টেশন নির্মিত হয়নি। কলকাতা খুলনা রেল লাইন চালু হয় ১৮৮৪ সালে। তারপরই নির্মিত হয় এ রেল স্টেশন। এটাই ছিল শহরে নির্মিত প্রথম ইস্টক নির্মিত পাকাবাড়ি যা এখনও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে রয়েছে। চার্লি এ বাড়ির পূর্বদিকে একটা হাট বসান। এটাই ছিল প্রাচীন টালিগঞ্জের হাট যা পরে সাহেবের হাট নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

এছাড়া খুলনা জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো রয়েছে সে গুলো হল

১. খুলনার নাট্য নিকেতন ২. গান্ধী পার্ক বা শহিদ হাদিস পার্ক ৩. রূপসা ৪.ডেলটা ঘাট ৫. রুজভেল্ট জেটি ৬. জাতিসংঘ পার্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *