নামাজ পড়ার নিয়ম ২০২৪ । কোন নামাজ কত রাকাআত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
নামাজ ফারসি শব্দ। আরবিতে একে সালাত বলা হয়। নামাজ বা সালাত যা-ই বলি, ইসলামি পরিভাষায় সেটা মূলত বোঝায় আল্লাহর নির্দেশে নির্ধারিত নিয়মে প্রতিদিন ৫ বার ইবাদত করার একটি পদ্ধতি। এটি একটি ফরজ ইবাদত। ফলে মুসলিমদেরকে প্রতিদিনই ৫ বার নামাজ আদায় করতেই হবে। নামাজকে মুসলিমদের মিরাজ বলা হয়। কেননা নামাজের মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহ তা’আলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়। নামাজের গুরুত্ব বলা শুরু করলে শেষ হবে না। মুসলিম হিসেবে নামাজের ফরজ কয়টি, নামাজ পড়ার নিয়ম কি, কোন নামাজ কত রাকাআত ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর জানা অবশ্য কর্তব্য।
২. নামাজ পড়ার গুরুত্ব
নামাজকে বলা হয় জান্নাতের চাবির মতো। শুধু যে পরকালীন সমৃদ্ধি রয়েছে নামাজ পড়াতে, তা কিন্তু নয়। স্বেচ্ছায় ও মনোযোগ সহকারে নামাজ পড়লে বান্দার মনে সবসময় আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের প্রতি সচেতনতা থাকে। ফলে একজন প্রকৃত নামাজী ব্যক্তি সর্বদাই নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং ভালো কাজ করতে চেষ্টা করেন।
ইসলামের ৫ টি স্তম্ভ আছে। যার মধ্যে একটি হলো, নামাজ। তাই নামাজ ছাড়া ইসলাম কল্পনা করা যায় না। এজন্যই নামাজ সঠিকভাবে আদায় করা জরুরি। সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের জন্য প্রয়োজন সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের নিয়ম জানা, কোন নামাজ কত রাকাআত জানা ইত্যাদি।
৩. নামাজ পড়ার নিয়ম
নিচে কোন নামাজ কত রাকাআত সে বিষয়ে আলোচনা করা আছে। আগে নামাজের নিয়মগুলো জেনে নিন। এখানে পুরো নিয়ম সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হলো
১. প্রথমে সঠিক নিয়মে অজু করে নামাজের প্রস্তুতি নিন।
২. এরপর নামাজের নিয়ত করতে হবে। এটা মুখে বা মনে মনে বলা বাধ্যতামূলক না। আমরা যে নামাজের জন্য দাঁড়াচ্ছি, এটাই নিয়ত হিসেবে প্রতীয়মান হবে।
৩. এরপর তাকবীর দিয়ে হাত বাঁধুন। প্রচলিত অনেক নিয়ম আছে। তবে, সবচেয়ে বেশি প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বাম হাতের উপর ডান হাত রাখুন।
৪. নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরজ। তবে, গুরুতর সমস্যা থাকলে বসে বা শুয়েও আদায় করা যায়। কিন্তু সমস্যা গুরুতর না হলে, কোনভাবেই বসে বা শুয়ে আদায় করা যাবে না।
৫. এরপর সানা বলুন (বাংলা উচ্চারণ) ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবা-র-কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গইরুকা। নাসাঈ, হাদিস- ৮৮৯
৬. এরপর পড়ুন- আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রযীম তাহাবি ১/৩৪৭
৭. তারপর পড়ুন- বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। তাহাবি ১/৩৪৭
৮.এবার সুরা ফাতিহা পড়ুন।
৯. সুরা ফাতিহা শেষ হলে একটি সুরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় পড়ুন। আবু দাউদ, হাদিস ৬৯৫]
১০. অতপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। আবু দাউদ, হাদিস ৭২৯
১১. রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। মুজামে সাগির ২/৪৯৭
১২. রুকুতে কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রব্বিয়াল আযীম পড়ুন। তিরমিজি, হাদিস ২৪২
১৩. এবার রুকু থেকে সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈস্বরে শুধু রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলুন। এরপর তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যান। সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৭৪৭
১৪. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে কপাল ও নাক মাটিতে রাখুন। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে ক্বিবলামুখী করে রাখুন। বুখারি, হাদিস ৭৮৫
১৫. সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রব্বিয়াল আলা পড়ুন। [তিরমিজি, হাদিস ২৪২]
১৭. এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়ুন।
১৮. স্থিরভাবে বসে দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়ুন।
৪. নামাজের ফরজ কয়টি?
নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী সেটা নিয়েই এই অংশটি। মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জানা জরুরি নামাজের ফরজ কয়টি। কেননা আমরা যদি না জানি যে, নামাজের ফরজ কয়টি তাহলে নামাজে ভুল হয়ে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে নামাজের ফরজ কয়টি না জানা থাকার ফলে নামাজই বাতিল হয়ে যায়। এখানে বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো
৫. নামাজের বাইরে ৭টি ফরজ
1. শরীর পবিত্র হওয়া। সুরা মায়িদা, আয়াত ৬; তিরমিজি, হাদিস- ১, ৩ (হাসান)
2. কাপড় পবিত্র হওয়া। সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪ তিরমিজি, হাদিস ১, ৩ (হাসান)
3. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। সুরা বাকারা, আয়াত ১২৫ তিরমিজি, হাদিস ১, ৩ (হাসান)
4. সতর ঢাকা (অর্থাৎ পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের চেহারা, দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ছাড়া গোটা শরীর ঢেকে রাখা। মনে রাখা আবশ্যক, পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভুক্ত)। সুরা আরাফ, আয়াত ৩১ সুরা নূর, আয়াত ৩১ আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৬ (হাসান), মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৬৭৫৬ (হাসান), তিরমিজি ১/২২২, হাদিস ১১৭৩, ৩৭৭ (সহিহ), আবু দাউদ ১/৯৪, হাদিস: ৬৪১ (সহিহ), ২/৫৬৭, হাদিস ৪১০৪ (গ্রহণযোগ্য), মারাসিলে আবি দাউদ ৮৬, হাদিস ২৮ (গ্রহণযোগ্য)
5. ক্বিবলামুখী হওয়া। সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪ বুখারি ২/৯২৪, হাদিস ৬২৫১
6. ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া। সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩ বুখারি ১/৭৫, হাদিস ৫২১
7. অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। বুখারি ১/২, হাদিস ১