ইসলামিক কথা

ফরজ গোসল নিয়ম ২০২৪। ফরজ গোসলের পরে কি আলাদাভাবে অযুর প্রয়োজন আছে?

ফরজ গোসল এর সঠিক নিয়ম

 

 

১। গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি?

গোসলের ফরজ মোট ৩টি

১.রোজাদার না হলে,গড়গড়ার সহিত কুলি করা।

২.নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।

৩.পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ধোয়া।

মহিলাদের নাকের ও কানের ছিদ্রেও পানি পৌঁছাতে হবে।

 

২। গোসল করার সুন্নতী নিয়ম

গোসল করার পূর্বে শরীরে যয়তুনের তেল দেয়া সুন্নত। মাথায় তেল দেয়ার নিয়ম হলো- প্রথমে ডান ভ্রুতে তারপর বাম ভ্রুতে, তারপর ডান চোখের পাতায়, তারপর বাম চোখের পাতায়। অতপর মাথার ডানদিক হতে প্রয়োজনমতো তেল দেয়া। আর দাড়িতে তেল দেয়ার নিয়ম হলো- প্রথমে ডান ভ্রুতে তারপর বাম ভ্রুতে, তারপর নিম দাড়িতে। অতপর দাড়ির ডান দিক হতে তেল দিতে হবে। তেল দেয়ার সময় সর্বক্ষেত্রে ডান দিকের অংশ আগে শুরু করতে হবে।

তেল লাগানো শেষ হলে মিসওয়াক করে নিতে হবে। অতপর ডান হাতে পানি নিয়ে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতে হবে এবং শুধুমাত্র পা ধোয়া ছাড়া নামাযের ওযূর মতো ভালভাবে ওযূ করে নিতে হবে। ওযূ কালীন রোযাদারের ভিতরে যাতে পানি প্রবেশ না করে, সেজন্য রোযাদার যেন গড়গড়ার সাথে কুলি না করে ও নাকে পানি দেয়ার সময় সতর্কতা বজায় রাখতে নাক নিচের দিকে নামিয়ে রাখতে হবে। ওযূ করা শেষ হলে প্রথমে মাথায় পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভালভাবে আঙ্গুল দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। পুরুষের বাবরী চুল থাকলে ও মহিলাদের বেনী বা খোঁপা থাকলে চুলের গোড়া ভালভাবে পানি পৌঁছাতে হবে।

অতপর ডান কাঁধে, অতপর বাম কাঁধে তিনবার করে এমনভাবে পানি ঢালা, যেনো সমস্ত শরীরে পানি বয়ে যায়। নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। হাতে আংটি থাকলে সেখানেও পানি পৌঁছাতে হবে। প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময় ধুন্দলের ছোবড়া ব্যবহার করা সুন্নত। আর পা ঘষার সময় ঝামা পাথর ব্যবহার করা সুন্নত। এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল শেষ করা সুন্নত। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।

সমস্ত শরীরে পানি ঢালা শেষ হয়ে গেলে গোসলের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং সারা গা মুছতে হবে। মাথায় তেল দেয়া সুন্নত। মাথায় তেল দেয়ার নিয়ম হলো- আগে দুই ভ্রুতে তেল লাগাতে হয়, অতঃপর দুই চোখের পাতায় তেল দিয়ে মাথায় তেল দিতে হয়।

 

৩। ফরজ গোসল এর সঠিক নিয়ম কি?

যেসব কারনে গোসল ফরজ হয়

১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।

২. নারী-পুরুষের মিলনে (সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক)।

৩. মেয়েদের হায়েয-নিফাস শেষ হলে।

৪. কেউ ইসলাম গ্রহন করলে।

 

৪। ফরজ গোসল এর সঠিক নিয়ম

ফরজ গোসলের নিয়ম সহিহ হাদিস অনুসারে সংক্ষেপে দেওয়া হল-

১।মনে মনে গোসলের নিয়ত করা (নিয়ত পড়া নয়)।

২।বিসমিল্লাহ বলে গোসল শুরু করা।

৩।দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোওয়া (বুখারী ২৪৮)।

৪।পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা(বুখারী ২৫৭)।

৫।বাম হাতটি ভালভাবে ঘষে ধুয়ে নেওয়া (বুখারী ২৬৬)।

৬।নামাজের ওজুর মতো ভালভাবে পূর্ণরূপে ওজু করা।(দুই হাত তিনবার ধোওয়া,কুলি করা,নাকে পানি দেওয়া,মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধোওয়া।মাথা মাসেহ করতে হবে না।)এক্ষেত্রে শুধু পা দুটো বাকি রাখলেও চলবে,যা গোসলের শেষে ধুয়ে ফেলতে হবে।(বুখারী ২৫৭, ২৫৯,২৬৫)।

৭।মাথায় পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভালভাবে আঙ্গুল দিয়ে ভিজানো। (বুখারী ২৫৮)।

মহিলাদের বেনী না খুলেও গোড়া ভালভাবে ভিজলেই হবে।(মুসলিম ৩৩০)।

৮।পুরো শরীরে পানি ঢালা প্রথমে ডানে, পরে বামে। (বুখারী ১৬৮)।

৯।গোসলের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ধোওয়া।(বুখারী ২৫৭)।

 

৫। ফরজ গোসলের জন্য কি কি মনে রাখতে হবে

১. পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে।

২. মহিলাদের শুধু চুল ভেজানোই যথেষ্ট।

৩. এ নিয়মে গোসলের পরে নতুন করে ওজুর দরকার নেই যদি ওজু ভেঙ্গে না যায়।

৪. শরীরের কোন অংশ যেন শুকনো না থাকে।

আল্লাহ আমাদের সঠিক ভাবে কুর’আন ও সহীহ সুন্নাহ মেনে চলার তাওফীক দিন এবং পুর্বের না জেনে ভুল গুলোকে ক্ষমা করুন আমিন।

 

৬। ফরজ গোসলের পরে কি আলাদাভাবে ওযুর প্রয়োজন আছে?

গোসলের শুরুতে অজু করা সুন্নত। গোসলের মাধ্যমে যেহেতু অজু হয়ে যায় ,তাই গোসলের পর ওযু ভঙ্গের কারণ পাওয়া না গেলে নতুন করে ওযু করতে হবে না।

উম্মুল মুমিনি আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) গোসলের পরে নতুন করে অজু করতেন না ।

(জামে তিরমিজি, হাদিস – ১০৭)

এছাড়াও সমাজের বহু মানুষকে দেখা যায় গোসল শেষ করার পর আবার পুরো অজু করেন। অজু কেন করলেন জানতে চাইলে বলেন, নামাজ পড়ব। তার কথার অর্থ দাঁড়ায় নামাজ পড়ার জন্য গোসল করা যথেষ্ট নয়। তাই নামাজের জন্য আবার অজু করতে হলো। এটা একটা ভুল আমল।

জেনে রাখা ভালো যে, গোসল করার পর অজু করার কোনো বিধান নেই। ফরজ গোসল হলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ফরজ এবং পরিপূর্ণ অজু করে নেওয়া সুন্নত, যা গোসলেরই অংশ। আর গোসল ফরজ না হলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত এবং পরিপূর্ণ অজু করা মুস্তাহাব। তাই যথাযথভাবেগোসল করার পর নতুন করে আবার অজু করা ঠিক নয়।(সহিহ বুখারি, হাদিস -২৪৮)

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *