শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৩ । বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী কে ছিলেন?
১৪ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশীসংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করেন- শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৩
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে? –শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি বিশেষ দিবস। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এ কাজে বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে থাকায় স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ সনাক্ত করেন।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে একটি গণকবর- অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। যা থেকে হত্যার পূর্বে তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল সে তথ্যও বের হয়ে আসে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন।
বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’ (১৯৯৪) থেকে জানা যায়, ২৩২ জন বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছেন। তবে তালিকায় অসম্পূর্ণতার কথাও একই গ্রন্থে স্বীকার করা হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৮, মতান্তরে ২৯ তারিখে বেসরকারীভাবে গঠিত বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। এরপর “বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটি” গঠিত হয়। এই কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চলেনি। কারণ ফরমান আলীর লক্ষ্য ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।
বাংলাদেশে যে তারিখে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয় / কোন সরকার এটি সরকারি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে?
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হালি কুদ্দুস। ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয় যা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর নকশা করেন জামী-আল সাফী ও ফরিদউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ডাকবিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিটের সিরিজ প্রকাশ করেছে।
১৯৭১ সালে বছরব্যাপী পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরিকল্পিতভাবে ১৪ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশীসংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করেন।
জেলা ভিত্তিক হত্যা ১৯৭১ । শহীদ দিবসে ঠিক জন মারা হয়েছে?
জেলা ও বিভাগ | শিক্ষাবিদ | আইনজীবী | ||
---|---|---|---|---|
প্রাথমিক | মাধ্যমিক | কলেজ | ||
ঢাকা | ৩৭ | ৮ | ১০ | ৬ |
ফরিদপুর | ২৭ | ১২ | ৪ | ৩ |
টাঙ্গাইল | ২০ | ৭ | ২ | |
ময়মনসিংহ | ৪৬ | ২৮ | ১ | ২ |
ঢাকা বিভাগ | ১৩০ | ৫৫ | ১৭ | ১১ |
চট্টগ্রাম | ৩৯ | ১৬ | ৭ | ১ |
পার্বত্য চট্টগ্রাম | ৯ | ৪ | ১ | ১ |
সিলেট | ১৯ | ৭ | ২ | |
কুমিল্লা | ৪৫ | ৩৩ | ১ | ৪ |
নোয়াখালী | ২৬ | ১৩ | ৪ | ২ |
চট্টগ্রাম বিভাগ | ১৩৮ | ৭৩ | ১৩ | ১০ |
খুলনা | ৪৮ | ১৫ | ২ | ২ |
যশোর | ৫৫ | ৩১ | ৫ | ৪ |
বরিশাল | ৫০ | ২১ | ৪ | |
পটুয়াখালী | ৩ | ১ | ||
কুষ্টিয়া | ২৮ | ১৩ | ৪ | |
খুলনা বিভাগ | ১৮৪ | ৮১ | ১৫ | ৬ |
রাজশাহী | ৩৯ | ৮ | ৩ | ৫ |
রংপুর | ৪১ | ২২ | ৯ | ৪ |
দিনাজপুর | ৫০ | ১০ | ১ | ২ |
বগুড়া | ১৪ | ১২ | ২ | |
পাবনা | ৪৩ | ৯ | ১ | ২ |
রাজশাহী বিভাগ | ১৮৭ | ৬১ | ১৪ | ১৫ |
বাংলাদেশ | ৬৩৯ | ২৭০ | ৫৯ | ৪১ |
শহীদ শিক্ষাবিদের (বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) মোট সংখ্যা = ৯৬৮ | ||||
শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা = ২১ | ||||
শহীদ শিক্ষাবিদের মোট সংখ্যা = ৯৮৯ |
বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী কে ছিলেন??
বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ছিলেন ড. সৈয়দ মহম্মদ শামসুজ্জোহা। দিনটিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় সাথে পালন করে। সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা (১ মে ১৯৩৪ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯) ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং অধ্যাপক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (তৎকালীন রিডার) ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি।