আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে পালিত হয়?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে বাংলা ভাষার জন্য ভাষা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩
কবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস? – একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
বঙ্গীয় সমাজে বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালির আত্ম-অম্বেষায় যে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটে, তারই সূত্র ধরে বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটায়।
ঐদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে।
ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি।
ভাষা দিবসে ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করা হয় / শহিদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ উদযাপন
১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে একাদিক্রমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এ সময় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি গানের করুণ সুর বাজতে থাকে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সেকশন ২, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬ কর্তৃক বরাদ্দ পত্র
ভাষা দিবস হিসেবে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কত টাকা ব্যয় করতে পারবে?
- একুশে ফেব্রুয়ারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দত্তরে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সূর্যোদয়ের সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সূর্যাস্তের সময় জাতীয় পতাকা নামাতে হবে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে:
- যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সংগতি রেখে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্ব-স্ব কর্মসূচি প্রণয়নপূর্বক দিবসটি উদযাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে প্রতিটি বিদ্যালয় স্লিপের ফরাদ্দকৃত অর্থ হতে অনধিক ৩,০০০.০০ (তিন হাজার) টাকা ব্যয় করতে পারবে;
- জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ, সংশ্লিষ্ট জেলা তথ্য অফিস হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোস্টার গ্রহণ, বিতরণ ও সাঁটানো নিশ্চিত করবেন:
- শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিশুদের নিয়ে আলোচনা সভাসহ চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, ছড়া পাঠ, কবিতা পাঠ, নান্দনিক হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে;
- ভাষা শহিদদের রুহের মাগফেরাতের জন্য মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপসনালয়ে দোয়া / প্রার্থনার আয়োজন করতে হবে;
- জেলা ও উপজেলা স্থানীয় জেলা প্রশাসন কর্তৃক গৃহীতব্য সকল কর্মসূচিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অংশগ্রহণ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কে?
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। পরে রফিক, আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড”-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর কানাডীয় দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করা হয়।
১৯৯৯ সালে তারা জোশেফের সাথে ও পরে ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন, আনা মারিয়া পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ – কানাডা , ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে। তারপর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দানে ২৯টি দেশ অনুরোধ জানাতে কাজ করেন।