History of Tangail । টাঙ্গাইল জেলার দর্শনীয় স্থান ও বিশেষ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানুন
টাঙ্গাইল ঢাকা বিভাগের বৃহত্তম জেলা যেখানে রয়েছে ঐতিহ্য ও বিখ্যাত সুনামধন্য ব্যক্তি জন্ম ও আর্বিভাব – টাঙ্গাইল জেলার দর্শনীয় স্থান ও বিশেষ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানুন
টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কি? – বীর প্রসবিনী ও স্বর্ণ প্রসবিনী টাঙ্গাইল। এই টাঙ্গাইল যুগ যুগান্তর ব্যাপী জন্ম দিয়েছে অনেক কৃতিবিদ, ধারণ করেছে অনন্য সমৃদ্ধিশালী ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভান্ডার। দেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিগণ ভিন্ন ভিন্ন বিশেষণে বিশ্লেষিত করেছেন টাঙ্গাইলকে। কারণ ফকির-সন্ন্যাস বিদ্রোহ, কৃষক প্রজা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে রয়েছে এই অঞ্চলের সন্তানদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা।
যে কোনো ভালো, উল্লেখযোগ্য, ব্যতিক্রমধর্মী ও অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ খেতাব বা পুরস্কার প্রদানের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। খেতাব রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় বা সরকারী পর্যায়ের হতে পারে আবার বেসরকারী পর্যায়েরও হতে পারে। জনগণের রায়ে এক ধরণের খেতাবের প্রচলন দেখা যায়, ঐতিহ্যগত ভাবে খেতাব প্রাপ্ত পদক ও রিবন পরিধানের মাধ্যমে নামের প্রথমে বা শেষে খেতাব উল্লেখ করে খেতাব প্রাপ্তির প্রমাণ দিয়ে থাকে। পদক প্রবর্তন হওয়ার আগে অন্য অনেক কিছুর মাধ্যমেও পুরস্কার বা খেতাবের স্বীকৃতি দেয়া হতো। এছাড়াও অতীত থেকেই খেতাব প্রাপ্তরা বিভিন্ন ধরণের সম্মান ও বৈষয়িক সুবিধা পেয়ে আসছে।
খেতাব বিভিন্ন কারণে প্রদান করা হয়। শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সাহস বা বীরত্ব, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সমাজসেবা, দেশ সেবা, সুশাসন ইত্যাদি যে কোনো ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য খেতাব বা পুরস্কার দেয়া হয়।১ মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য টাঙ্গাইল জেলার যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের নিয়েই এই প্রবন্ধ। টাঙ্গাইলের কাদের বাহিনীর সদস্যদের বীরত্ব সূচক খেতাবের জন্য একটি তালিকা ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি সদর দপ্তর এফ.জে সেক্টর, প্রযতেœ ৯৯এপিও (ভারতীয় সেনা বাহিনী) থেকে সদর দপ্তর বাংলাদেশ বাহিনীতে প্রেরণ করা হয়। পত্রে স্বাক্ষর করেন ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং। খেতাব প্রাপ্তের জন্য পত্রের সাথে কাদের বাহিনীর ১৩৪ জনের একটি তালিকা সংযুক্ত ছিলো। পত্রে উল্লেখ ছিলো যে, কাদের বাহিনীর এ সমস্ত সদস্যদের সুপারিশ নামায় কাদের সিদ্দিকী লিখবেন।
টাঙ্গাইলের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব / যারা টাঙ্গাইলে গর্ব এবং দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছেন
আবদুল হামিদ খান ভাসানী, (ডিসেম্বর ১২, ১৮৮০-নভেম্বর ১৭, ১৯৭৬) – ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক।
সূত্র: তথ্য সংগ্রহ উইকিপিডিয়া
টাঙ্গাইলের ১৭ জন বিশেষ ব্যক্তি । টাঙ্গাইলের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ও সংক্ষিপ্ত তথ্য জানুন
- সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, (২৯ ডিসেম্বর, ১৮৬৩ -১৭ এপ্রিল, ১৯২৯) – ধনবাড়ীর নবাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
- আবদুল হামিদ খান ভাসানী, (ডিসেম্বর ১২, ১৮৮০-নভেম্বর ১৭, ১৯৭৬) – ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক।
- অমৃতলাল সরকার (১৮৮৯ – ৪ এপ্রিল, ১৯৭১) –ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব, বিপ্লবীঅনুশীলন দলের সভ্য।
- প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, (১৮৯৪ – ২৯ মার্চ, ১৯৭৮) – শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী, রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক।
- দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা (নভেম্বর ১৫, ১৮৯৬ – মে ৭, ১৯৭১) বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর।
- বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা, (১৮৯৯ – ২১ অক্টোবর, ১৯৭৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলমান ছাত্রী ও ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
- সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী, (১৯১০ – ৩০ মে , ১৯৮১) বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র।
- প্রতুল চন্দ্র সরকার, (২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩ – ৬ জানুয়ারি ১৯৭১) ভারতবর্ষের বিখ্যাত জাদুকর। তিনি অন্যতম একজন আন্তর্জাতিক জাদুকর ছিলেন যিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তার জাদু দেখিয়েছেন।
- শামসুল হক, (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ – ১৯৬৫) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ।
- আবু সাঈদ চৌধুরী, (জানুয়ারি ৩১, ১৯২১ – আগস্ট ১, ১৯৮৭) বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি।
- কানাইলাল নিয়োগী (১৯২৪ -১৯ মে ১৯৬১) ভারতের বরাক উপত্যাকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনেনিহত ব্যক্তি।
- প্রতিভা মুৎসুদ্দি (জন্মঃ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৩৫)বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ ও ভাষা সংগ্রামী। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
- রফিক আজাদ, (জন্ম: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪১) একজন বাংলাদেশী কবি, মুক্তিযোদ্ধা ও সম্পাদক।
- বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (জন্ম: ১৯৪৭) ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাঘা কাদের নামে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনীগড়ে ওঠে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক।
- মামুনুর রশীদ, (২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৮) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃত।
- মান্না, (১৯৬৪ – ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০০৮ বাংলাদেশেরএকজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন।
- ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য – বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ,রিসার্চ ফেলো অব সিপিডি।
টাঙ্গাইলের ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা কে কে?
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে কাদের বাহিনীর সদস্যদের সুপারিশ নামা ৩০ জুলাই ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রচারিত সুপারিশ নামা ফর্মের পরিবর্তে সাদা কাগজে বাংলায় হাতে লিখে পাঠানো হয়। কাদের বাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ কাদের সিদ্দিকীসহ কয়েক জনের সুপারিশ নামায় ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং স্বাক্ষর করেন। বাকি সকলের সুপারিশ নামায় কাদের সিদ্দিকী স্বাক্ষর করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর ৬৭৬ জনকে বীরত্ব খেতাব প্রদান করেন। তাদের মধ্যে ৭ জনকে বীর শ্রেষ্ঠ। ৬৮ জনকে বীর উত্তম। ১৭৫ জনকে বীর বিক্রম এবং ৪২৬ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন। টাঙ্গাইল জেলায় কেউ কোন বীর শ্রেষ্ঠ খেতাব পাননি। বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন একজন। তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ৯ জন। এই ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন- ১. হাবিবুর রহমান হাবিব বীর বিক্রম, ২. আবদুস সবুর খান বীর বিক্রম, ৩. আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম, ৪. শহীদ সিপাহী খন্দকার রেজানুর হোসেন বীর বিক্রম, ৫. শহীদ মনিরুজ্জামান খান বীর বিক্রম, ৬. শহীদ আবদুর রকিব মিয়া বীর বিক্রম, ৭. মোহাম্মদ আবদুর রহমান আবিদ বীর বিক্রম, ৮. শহীদ লেফ্টেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলাম বীর বিক্রম, ৯। আবদুস সালাম বীর বিক্রম।
বীর বিক্রমদের মধ্যে তিনজন কাদের বাহিনীর। এই তিনজন হলেন- হাবিবুর রহমান বীরবিক্রম, আব্দুস সবুর খান বীরবিক্রম ও আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম। একজন খেতাব প্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা ই.পি.আর ছিলেন। তিনি হলেন- শহীদ মনিরুজ্জামান খান বীরবিক্রম। তিনি ই.পি.আরের সুবেদার ছিলেন। ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করে খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন। দুইজন নৌ-কমান্ডার ছিলেন টাঙ্গাইলের সন্তান। এরা হলেন- মোহাম্মদ আবদুর রহমান আবিদ বীরবিক্রম এবং শহীদ মোহাম্মদ আবদুর রকিব মিঞা বীরবিক্রম। এই দুইজন খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ১০ নম্বর সেক্টরের নৌ-কমান্ডার ছিলেন। তাছাড়া শহীদ সিপাহী রেজানূর হোসেন বীরবিক্রম, শহীদ লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলাম বীরবিক্রম ও আব্দুস সালাম বীরবিক্রম সেনা সদস্য ছিলেন। টাঙ্গাইলের ৯ জন বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে চারজন বীরমুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ মাতৃকার জন্য শহীদ হয়েছেন।
টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান কি কি? ভারতেশ্বরী হোমস, মহেড়া জমিদারবাড়ি / পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, পাকুল্লা মসজিদ, আরুহা-শালিনাপাড়া কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, আতিয়া মসজিদ, দোখলা ভিআইপ রেস্ট হাউস, পীরগাছা রাবারবাগান, ভূঞাপুরের নীলকুঠি, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, শিয়ালকোল বন্দর, ধনবাড়ী মসজিদ ও ধনবাড়ী নবাব প্যালেস, নথখোলা স্মৃতিসৌধ, বাসুলিয়া, রায়বাড়ী, কোকিলা পাবর স্মৃতিসৌধ, মধুপুর জাতীয় উদ্যান, যমুনা বহুমুখী সেতু, যমুনা রিসোর্ট, আদম কাশ্মিরী-এর মাজার, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার, পরীর দালান, খামারপাড়া মসজিদ ও মাজার, ঝরোকা, সাগরদীঘি, গুপ্তবৃন্ধাবন, পাকুটিয়া আশ্ৰম, নাগরপুর জমিদারবাড়ি, পুন্ডরীকাক্ষ হাসপাতাল, উপেন্দ্র সরোব, গয়হাটার মঠ, তেবাড়িয়া জামে মসজিদ, পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি, এলেঙ্গা রিসোর্ট, কাদিমহামজানি মসজিদ, ঐতিহ্যবাহী পোড়াবাড়ি, করটিয়া জমিদার বাড়ি, কুমুদিনী সরকারি কলেজ, বিন্দুবাসিনী বিদ্যালয়, ফালুচাঁদ চীশতি-এর মাজার, ২০১ গম্বুজ মসজিদ, সরকারি সা’দত কলেজ |
টাঙ্গাইল কত নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত ছিল? স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল জেলা ১১ নং সেক্টরের অধীন ছিল। কিশোরগঞ্জ মাহকুমাবাদে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ও টাঙ্গাইল নিয়ে ১১ নং সেক্টর গঠিত হয়। ১১ নং সেক্টরের কোন স্থায়ী সদর দপ্তর ছিল না। যুদ্ধকালীন মেজর আবু তাহের নভেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যস্ত এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ হামিদ উল্লাহ খান নভেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ হতে ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমা-ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ পরিচালনা সুবিধার জন্য ১১ নং সেক্টরকে ৬ টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়। মানকার চর, মহেন্দ্রগঞ্জ, পুরাখাসিয়া, ঢাল,ু রংরা, বাগমারা সাব সেক্টর ছিল। যুদ্ধকালীন লেফটেন্যান্ট আবদুল মান্নান, লেফটেন্যান্ট হাসমী, শামসুল আলম, মোস্তফা কামাল, লেফটেন্যান্ট সৈয়দ কামাল উদ্দিন, ক্যাপ্টেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, সাব-সেক্টর কমা-ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিস্তারিত তথ্য দেখুন যা উইকিপিডিয়াতেও পাবেন না: ডাউনলোড