জমির বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া ২০২৪ । কি কি উপায়ে জমির মালিক হওয়া যায়?
ভূমির মালিকানা ৭ ভাবে পাওয়া যায় এবং মালিকানা পরিবর্তন ও স্বত্ব দললের বিরোধ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে- জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়েই আজকের আলোচনা–জমির মালিকানা পরিবর্তন প্রক্রিয়া ২০২৪
আপনার ভোগদখলকৃত কৃষি জমিতে আপত্তি দিয়ে বিবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা হলে প্রথমে কি করবেন? আপনি প্রাথমিক অবস্থায় ইউনিয়নের অধিবাসি হলে ইউনিয়ন পরিষদে বা পৌরসভার অধিবাসি হলে পৌরসভায় প্রতিকার পেতে পারেন। অন্যথায় আইনের সহায়তা নিতে পারেন। অতপর ভূমি নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন জেলা জজরা। এছাড়া প্রয়োজনে সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজদের ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিচারক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।
খাস জমি কি জানেন তো? কোনো জমি যদি সরকারের হাতে ন্যস্ত হয় এবং সেই জমিগুলি যদি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সরকার,এই জমিগুলি সরকার কর্তৃক প্রণীত পদ্ধতি অনুযায়ী বন্দোবস্ত দিতে পারেন অথবা অন্য কোনো ভাবে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে উক্ত ভূমিগুলিকে খাস জমি বলে। ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৭৬ ধারার ১ উপধারায় খাস জমি সম্বন্ধে বলা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে,কোনো ভূমি যদি সরকারের হাতে ন্যস্ত হয় এবং সেই জমিগুলি যদি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে তাহলে সরকার,এই ভূমিগুলি সরকার কর্তৃক প্রণীত পদ্ধতি অনুযায়ী বন্দোবস্ত দিতে পারেন,অথবা অন্য কোনো ভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন উপরোক্ত ভূমিগুলিকে খাস জমি হিসাবে বুঝাবে। তবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের যথা বন বা পূর্ত কিংবা সড়ক ও জনপথ এর স্বত্বাধীন বা মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমিকে সরকারের খাস জমি হিসাবে গন্য করা যাবে না। (১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৭৬ ধারাএবং ৮৭ ধারা) (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদ)।
দখলাধিকার অর্জন হয় কিভাবে? রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ মোতাবেক আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে বা চুক্তিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোনো ব্যক্তি তাহার সেবার বিনিময়ে কৃষি বা বাগান অথবা বসতবাটির প্রয়োজনে অন্য ব্যক্তির অধীন ভূমি বিনা খাজনায় অধিকারে রাখেন যাহারা স্থানীয়ভাবে নানকর, চাকরান অথবা অনুরূপভাবে পরিচিত, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি এই আইন কার্যকর হইবার তারিখে অথবা তারিখ হইতে যাহার অধীন ভূমি অধিকারে রাখেন তাহাকে, যথাযথ ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা প্রদান সাপেক্ষে, উক্ত ভূমিতে দখলি স্বার্থ অর্জন করিবেন এবং বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন, ১৮৮৫ বা, ক্ষেত্রমত, সিলেট প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৩৬ এর বিধান যতটা দখলি রায়তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, ততটা তাহার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে। উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত যথাযথ ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা অর্থে এইরূপ খাজনাকে বোঝাইবে যাহা দখলদার রায়ত কর্তৃক প্রদত্ত অনুরূপ প্রকৃতি ও সুবিধা সংবলিত একই গ্রাম অথবা পার্শ্ববর্তী গ্রামের ভূমির জন্য উক্তরূপ প্রজা ও তাহার ভূস্বামীর মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে স্বীকৃত খাজনা বা চুক্তির অবর্তমানে প্রজা বা ভূস্বামীর আবেদনক্রমে কালেক্টর কর্তৃক নির্ধারিত প্রচলিত খাজনার হারের অধিক হইবে না।
নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করা ছাড়া কি দখল দাবি করা যায়? / দখলস্বত্ব দাবির ক্ষেত্রে জমির মালিকানা দলিল ও খাজনা পরিশোধ নিয়মিত করতে হয়
অনলাইনে আমার নামে কতটুকু জমি আছে আমি কি দেখতে পারবো? আপনার নামে কতটুকু জমি আছে, এটি ওয়েব সাইট থেকে জানার সুযোগ নেই, দুঃখিত। তবে আপনি আপনার সংরক্ষিত খতিয়ান/পর্চা / পর্চার কপি বা দলিল থেকে জানতে পারবেন। তবে অনলাইনে আপনি আপনার নামেন খতিয়ান/পর্চা বা পর্চা যাঁচাই করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে ভুমি সেবা হেল্প লাইন ১৬১২২ নম্বরে কল করুন।
ভূমি বা জমির মালিকানা স্বত্ব প্রাপ্তির প্রক্রিয়া ২০২৪ । জমির মালিকানা সূত্র কি কি হতে পারে?
- (১) ক্রয় সূত্র: প্রকৃত ভূমি মালিকের নিকট থেকে জমি দলিলমূলে ক্রয় করা হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
- (২) ওয়ারিস সূত্র: ভূমি মালিকের মৃত্যুর পর তাঁর জমিজমা উত্তরাধিকারীগণ প্রাপ্ত হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
- (৩) হেবা সূত্র: প্রকৃত ভূমি মালিক কর্তৃক কাউকে কোন জমি দান করা হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
- (৪) ডিক্রি সূত্র : বিজ্ঞ আদালতের রায় ডিক্রিমূলে কোন জমি প্রাপ্ত হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
- (৫) নিলাম সূত্র : সরকারি পাওনা অনাদায়ে রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতের আদেশে কোন দায়বদ্ধ জমি নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
- (৬) বন্দোবস্ত সূত্র: সরকারি খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ (সাধারণ ক্ষেত্রে ৯৯ বৎসরের জন্য) নেয়া হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
- (৭) অধিগ্রহণ সূত্র: সরকার বা ব্যক্তি উদ্যোগে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রত্যাশীর অনুকূলে কোন জমি অধিগ্রহণ করা হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
বাংলাদেশে সর্বোচ্চ কতটুকু জমির মালিক থাকা যাবে?
যদি আপনার ৬০ বিঘা কৃষি জমি থাকে, তাহলে নতুন করে আর মালিকানা নিতে পারবেন না। সেটা আপনি উত্তরাধিকার সূত্রে হোক বা নিজের কেনা হোক, ৬০ বিঘার বেশি আপনি আর মালিকানা নিতে পারবেন না। কারও ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমি থাকলে কী হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে মাহবুব হোসেন বলেন, “আইনে যে ধারাটা সংযোজন করা হয়েছে, সেটা হল- ৬০ বিঘার অধিক আপনি নতুন কোনও মালিকানা নিতে পারবেন না। বলা হয়নি এখানে ৬০ বিঘার বেশি থাকলে আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমি কেনার সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ দেখুন