তারাবির নামাজ কয় রাকাত । তারাবিহ নামাজ না পড়লে কি হয়?

রাসুল (সাঃ) এর ওফাতের পর, খলিফা হজরত আবু বকর (রাঃ) তারাবীহ নামাজের নিয়মিত জামাতের ব্যবস্থা করেন। খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর সময়, মদিনার মসজিদে নববীতে তারাবীহ নামাজের জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করা হয়। এর ফলে, মুসলিমরা জামাতে তারাবীহ নামাজ আদায় করতে শুরু করে – তারাবীহ নামাজের ইতিহাস

তারাবীহ নামাজ কিভাবে আসছে? তারাবীহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ নামাজ। এর ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ, এবং এর উৎপত্তি নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময় থেকে শুরু হয়। রাসুল (সাঃ) রমজান মাসে নিয়মিত তারাবীহ নামাজ আদায় করতেন। প্রথমে, তিনি একা একা নামাজ আদায় করতেন।ধীরে ধীরে, সাহাবাগণ তাঁর সাথে যোগদান করতে শুরু করেন। রাসুল (সাঃ) কখনোই তারাবীহ নামাজের জন্য বাধ্যতামূলক নির্দেশ দেননি। তবে তিনি এর فضيلة (উৎকর্ষতা) বর্ণনা করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেছেন।

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কত রাকাত তারাবীহ নামাজ পড়তেন?– নবী (সাঃ) তারাবীহ নামাজ কত রাকাত পড়তেন, এই বিষয়ে হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তবে বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায় যে, তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাকাত পড়েছেন। কিছু হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ৮ রাকাত পড়তেন।  আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) রমজান মাসে ৮ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। ([বুখারী ও মুসলিম]) এবং  আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) ৮ রাকাত তারাবীহ পড়তেন এবং বিতর ৩ রাকাত পড়তেন। ([মুসলিম])

নবী কি তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত পড়তেন? ১১ রাকাত: ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) রমজান মাসে ১১ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। ([মুয়াত্তা মালিক]) ২০ রাকাত: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। ([আহমাদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী]) উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদিসগুলোর সনদের বিষয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। রাসুল (সাঃ) তারাবীহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করে যাননি। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাকাত পড়েছেন, যা থেকে বোঝা যায় যে, রাকাত সংখ্যার বিষয়ে তিনি ছিলেন সাবলীল। সুতরাং, নবী (সাঃ) কত রাকাত তারাবীহ নামাজ পড়তেন, এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। তবে ৮, ১১ অথবা ২০ রাকাত পড়া – যেকোনো একটি বর্ণনার অনুসরণ করা যায়। মনে রাখা জরুরি যে, রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুসরণ করাই মূল উদ্দেশ্য। তাই, যেকোনো রাকাত সংখ্যা পড়লেই সওয়াব হবে, যদি তা আন্তরিকতার সাথে এবং সুন্নাহ অনুযায়ী পড়া হয়।

তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস । তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের দলিল

কিছু আলেম এই হাদিসগুলোকে দুর্বল বলে মনে করেন। তবে, অনেক আলেম এই হাদিসগুলোর উপর ভিত্তি করে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।

উপরোক্ত হাদিসগুলোর সনদের বিষয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে।
কিছু আলেম এই হাদিসগুলোকে দুর্বল বলে মনে করেন।
তবে, অনেক আলেম এই হাদিসগুলোর উপর ভিত্তি করে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।

Caption: Tarabi Namaj

তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত সম্পর্কিত হাদিস গুলো । তারাবীর নামাজ কয় রাকাত পড়বেন?

  1. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। ([আহমাদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী])
  2. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। ([মুসনাদ আহমাদ])
  3. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। ([মুসনাদ আহমাদ])

সারা পৃথিবীতেই কি তারাবীহ নামাজ পড়া হয়?

হ্যাঁ। সময়ের সাথে সাথে, তারাবীহ নামাজের রাকাত সংখ্যা ও নিয়মকানুন স্থির হয়ে যায়। বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে রাকাত সংখ্যা ও নিয়মকানুনের কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। তবে, মূল উদ্দেশ্য একই – আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা এবং রমজান মাসের পূর্ণ ফায়দা ভোগ করা। আজকের দিনে, বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ আদায় করে। এটি মুসলিমদের ঈমান ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তারাবীহ নামাজ মুসলিমদেরকে আল্লাহর কাছে আরও নিকটে যেতে সাহায্য করে।

তারাবীর নামাজ কি ২০ রাকাত পড়া ভাল?তারাবীহ নামাজের রাকাত সংখ্যা ৮, ১১, অথবা ২০ হতে পারে। সাধারণত, মসজিদে ইমামের সাথে জামাতে তারাবীহ নামাজ আদায় করা হয়। যারা মসজিদে যেতে পারে না, তারা ঘরে একা একা নামাজ আদায় করতে পারে। তারাবীহ নামাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট তাকবীর নেই। নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। তারাবীহ নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ, এবং এর فضيلة অপরিসীম। মুসলিমদের উচিত রমজান মাসে নিয়মিত তারাবীহ নামাজ আদায় করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা।

তারাবিহ নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে কিনা, এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। যারা মনে করেন তারাবিহ নামাজ ওয়াজিব। তাদের মতে, তারাবিহ নামাজ ফরজ নামাজের পর দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। তারাবিহ না পড়লে গুনাহ হবে এবং রমজানের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে। তবে, অসুস্থতা, ভ্রমণ, অথবা অন্য কোনো বৈধ কারণে তারাবিহ না পড়তে পারলে গুনাহ হবে না। যারা মনে করেন তারাবিহ নামাজ সুন্নত। তাদের মতে, তারাবিহ নামাজ ওয়াজিব নয়, বরং এটি একটি সুন্নত নামাজ। তারাবিহ না পড়লে গুনাহ হবে না, তবে এর ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে। তারাবিহ পড়া রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুসরণ করা, যা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। তারাবিহ নামাজ ওয়াজিব নাকি সুন্নত, এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও, সকলেই একমত যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ এবং এর ফজিলত অপরিসীম। যেহেতু রমজান মাসে আল্লাহর রহমত ও বরকতের বর্ষণ হয়, তাই সকল মুসলিমের উচিত তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তারাবিহ নামাজ আদায় করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *