ওয়ারিশ বন্টন সম্পর্কে ইসলামের ইতিহাস । মা বাপের বাড়ি থেকে সম্পদ আনবে না করনীয় কি
ওয়ারিশ সম্পত্তি মেয়েদের বুঝিয়ে দেয়া বা বুঝে নেয়ার ব্যাপারে আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি রয়েছে- কিছুটা নিয়মেও পরিনত হয়েছে-ওয়ারিশে ইসলামিক অধিকার সম্পর্কে নারী ও পুরুষ উভয়ই সচেতন নয়-ওয়ারিশ বন্টন সম্পর্কে ইসলামের ইতিহাস
মা যদি নানীর বাড়ির সম্পত্তি আনতে না চায়? হ্যাঁ। এটিই প্রচলিত নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। মেয়ে বা কন্যা সম্পত্তি অধিকার বুঝে নিলেই যেন সম্পর্ক চুকে গেল বা ভাই বোনের সম্পর্ক আর থাকে না। ইসলামিক ওয়ারিশান আইন না জানার কারণে ভাইয়ের নিকট হতে পিতা মাতার সম্পত্তি বুঝে নেয়াটা কিছু পাপের বিষয় মনে করে। অনেকে মহিলাদের সম্পত্তি বুঝে নেয়াকে লোভ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। কোরআন শরীরে সূরা বাকারা-তে মহিলাদের সম্পত্তি অধিকার নিয়ে বিস্তারিত বলা বয়েছে। একটু কষ্ট করে হকের বিষয়টা পড়েন। আপনার হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে গুগল করলেই বিস্তারিত পেয়ে যাবেন। সন্তানদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার জন্য কুরআনে কড়াকড়ি নির্দেশ আছে। মাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন।
মায়ের সম্পত্তি কিভাবে বুঝে নেয়া যায়? অনেকেই বলেছে পরের সম্পদে লোভ করা ভাল না। ঐ সকল ব্যক্তিগুলো চরম লেভেলের ধূর্ত এবং ইতোমধ্যে অনেক নারীর হক নষ্ট করেছে। প্রতিটি নারী সম্পদের অংশ পাবে এটা যেমন আল্লাহর আইন তেমন বাংলাদেশের ও আইন। আপনার মা যদি সম্পত্তি নেয়ার পর আবার তার ভাইদেরকে লিখে দেয় সেইটা হিসাব আলাদা। তবে সম্পত্তি যদি আপনি নিতে চান তাহলে অবশ্যই নিতে পারবেন। সর্ব প্রথমে গ্রাম সরকারের কাছে একটি সালিশ ডাকতে হবে এবং সেই সালিশের কপি দিয়ে পরবর্তীতে আদালতে বন্টন মামলা করতে পারবেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন হয়ে যাবে।
সম্পত্তি বন্টন নিয়ে কোরআনে কি বলা আছে? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিস হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নিসা ১১)
জমি বা সম্পত্তি অধিকার নারী অংশ / প্রত্যেক ভাইকে নারীর বা বোনের অংশ বুঝিয়ে দিতে হবে।
একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পূর্বে তার সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ অংশ অসিয়ত করতে পারেন। অসিয়ত অবশ্যই উত্তরাধিকারীদের অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে না।
Caption: Uttaradhikar Ongsho । Download Uttaradhikar App
মহিলাদের উত্তরাধিকার আইন । মা বা কন্যার সম্পত্তি অংশ কতটুকু পায়?
- পুরুষদের অংশ মহিলাদের অংশের দ্বিগুণ।
- পিতামাতা, স্ত্রী, সন্তান, ভাইবোন, দাদা-দাদী – এদের মধ্যে কে মারা গেলে কে কতটা সম্পত্তি পাবে তার বিস্তারিত নিয়ম বর্ণিত আছে।
- কেউ যদি নিঃসন্তান মারা যান, তাহলে তার সম্পত্তি ভাইবোনদের মধ্যে বন্টন হবে।
- ঋণ পরিশোধ করে, তারপর উত্তরাধিকার বন্টন করতে হবে।
মৃত ব্যক্তি কাফনের খরচ কে দিবে?
মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে। তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে। তার স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে। মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে। উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। আজকে আমরা আলোচনা করবো বাবা মারা গেলে সন্তানরা বাবার সম্পত্তি কীভাবে বণ্টন করবে।
নারীকে কি সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা যাবে? না। মহিলাদেরও সম্পত্তি অর্জন, রাখা এবং ব্যয় করার অধিকার আছে। মহিলাদের মাহর, বিধবা ভাতা, উত্তরাধিকারের অংশ পেতে হক আছে। কোন নারীকে তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কোন ভাই যদি তারা বোনের সম্পত্তি মেরে খায় বা বুঝিয়ে না দেয় তবে তাকে আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে।