পহেলা বৈশাখ ও মেলা ২০২৫ । বাংলা নববর্ষ মেলায় গেলে কি ঈমান নষ্ট হয়ে যায়?
বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ মানেই বড় বড় স্পিকার মেলায় বাজবে-নাচ গান ও ভীড়ে ঠেলাঠেলিতে গিয়ে দেশীয় পন্য কেনা এবং খাওয়া দাওয়া-মোট কথা সম্প্রীতি বজায় রাখা নয়-ভিন্নধর্মীদের তৈরি মুড়ি মুরকি কেনা কাটা করা হয়–পহেলা বৈশাখ ও মেলা ২০২৫
বাংলা নববর্ষ মেলায় গেলে কি ঈমান নষ্ট হয়ে যায়? হ্যাঁ, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, নববর্ষ পালন করা কাট্টা, হারাম, কুফরী ও ঈমান নষ্টের কারণ। ইসলামে নববর্ষ পালন করা শরীয়ত সম্মত নয়। বহু হাদিসে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইসলামে গান গাওয়া এবং নাচ সম্পূর্ণ হারাম, তাই নববর্ষ উদযাপনও হারাম। সৌদি আরবের জ্ঞান গবেষণা ও ফাতাওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফতোয়ায় বলা হয়েছে, হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা জায়েজ নয়।বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ একটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। এটি ধর্মীয় সীমানা পেরিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের দ্বারা উদযাপন করা হয়।
বাংলা নববর্ষ ও ইসলাম কি সাংঘর্ষিক? হ্যাঁ। বলা যেতে পারে সাংঘর্ষিক। বাংলা নববর্ষ (পহেলা বৈশাখ) মূলত একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। এর উদযাপন মূলত গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতি, কৃষি চক্র, এবং নতুন বছরের শুভ সূচনা নিয়ে। এখানে গান-বাজনা, মেলা, হস্তশিল্প, খাবার, ইত্যাদি থাকে। ইসলামে কখনও বাংলা নববর্ষ পালিত হয়নি বা নবী কখনও এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন নি।ঈমান নষ্ট হয় কখন? ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী ঈমান নষ্ট (কুফরি বা শিরকে পরিণত হওয়া) তখনই হয়, যখন কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে। ইসলামের মৌলিক আকিদা (বিশ্বাস) অস্বীকার করে। ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামবিরোধী কোনো বিশ্বাসে যুক্ত হয়। কেউ বলেন তাহলে মেলায় গেলে কি সমস্যা? যদি মেলার মধ্যে ধর্মবিরোধী কার্যক্রম (যেমন: ভণ্ড তান্ত্রিকতা, শিরক, মূর্তি পূজা, ইত্যাদি) থাকে এবং কেউ তা বিশ্বাস করে বা অংশ নেয় – তাহলে সেটা ঈমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি শুধু সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মেলা উপভোগ করতে যায় (যেমন খাবার খাওয়া, হস্তশিল্প দেখা, বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটানো), এবং ইসলামি আকিদা অটুট রাখে – তাহলে সরাসরি ঈমান নষ্ট হয় না তবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে যাওয়া ইসলাম অনুমতি দেয় না।
মুসলমানদের মেলায় যাওয়ার বিষয়ে ইসলাম কি বলে?/ মেলা যদি সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে তবে সেটি ভিন্ন বিষয়
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে ইসলামসম্মতভাবে অংশ নিন – শালীন পোশাক, সংযত আচরণ, নামাজের প্রতি যত্ন রেখে। কোনো রকম ধর্মবিরোধী বিশ্বাস বা কাজে না জড়িয়ে নিজের নিয়ত ও বিশ্বাস পরিষ্কার রাখুন। বাংলা নববর্ষের মেলায় যাওয়া মানেই ঈমান নষ্ট হয়ে যায় না, যদি আপনি ইসলামি আকিদা অটুট রেখে, শুধু সাংস্কৃতিক উপায়ে এতে অংশ নেন। তবে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে যেন কোনো ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ডে আপনি যুক্ত না হন।
Caption: Ramna Botomul
বর্তমান পহেলা বৈশাখা উদযাপন ২০২৫ । এখনকার বাংলা নববর্ষের মেলায় যাওয়া কি অনুকরণে পড়ে?
- যদি কেউ নববর্ষকে ধর্মীয় রূপ দেয় বা মূর্তি পূজা/ভক্তিমূলক গানের মতো ধর্মীয় অনুষঙ্গ থাকে, এবং কেউ তা সম্মান জানায় বা মানে – তবে সেটা অনুকরণ বা বিদআতের মধ্যে পড়ে।
- কিন্তু কেউ যদি শুধুমাত্র সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ইসলামি সীমার মধ্যে থেকে অংশ নেয় – তখন সেটা সম্পূর্ণ গুনাহ বা কুফরি বলা কঠিন।
- নবী (সা.) কোনো নববর্ষ মেলায় যাননি, এমন কিছু পালনও করেননি।
- তিনি জাহিলি কালের উৎসব বর্জন করে ইসলামি উৎসব দিয়েছেন।
- মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত নিজের ইসলামি সংস্কৃতি বজায় রাখা, এবং অন্য সংস্কৃতি অনুকরণ না করা – বিশেষ করে যেখানে ধর্মীয় উপাদান থাকে।
নবী কি কোন নববর্ষ মেলায় যেতেন?
খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন — “নবী (সা.) কি কোনো নববর্ষ মেলায় যেতেন?” এই প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি আসলে জানতে চাইছেন, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ বা এমন উৎসব উদযাপন কতটুকু গ্রহণযোগ্য। নবীজি (সা.)-এর সময় কি “নববর্ষ” মেলার কোনো উদাহরণ আছে? না, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোনো নববর্ষ বা সনবর্ষ উদযাপন করতেন না, এবং তাঁর যুগে এমন কোনো মেলা বা উৎসব পালন করার প্রমাণ নেই, যা শুধু নতুন বছরের সূচনাকে কেন্দ্র করে হতো। তবে আরব সমাজে কি উৎসব ছিল? জি, ছিল। নবী (সা.)-এর হিজরতের পর মদিনায় এসে দেখলেন, মদিনার লোকেরা দু’টি উৎসব পালন করে (জাহিলিয়াত যুগের)। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এই দিনগুলোর মাহাত্ম্য কী?” তারা বলল, “আমরা এই দিনগুলোতে খেলাধুলা করি, আনন্দ করি।” তখন নবী (সা.) বললেন: “আল্লাহ তা’আলা তোমাদের এই দুই দিনের পরিবর্তে আরও উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১৩৪) এটা স্পষ্টভাবে দেখায়, ইসলামে নিজস্ব উৎসব আছে, আর অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতির উৎসব বা মেলা হুবহু গ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, বিশেষ করে যদি তাতে আকিদা বা ধর্মীয় অনুকরণ থাকে।
কি করলে ঈমান চলে যায়?
১. আল্লাহ্কে অস্বীকার করা ২. কুরআন বা ইসলামী শরীয়তের কোনো অংশ অস্বীকার করা ৩. শিরক করা (অন্যকে আল্লাহ্র সাথে অংশীদার করা) ৪. ধর্ম নিয়ে বিদ্রুপ বা উপহাস করা | ৫. ইসলামী ফরজ আমলকে অবহেলা বা অস্বীকার করা ৬. কুফরী বা শিরকি কাজকে হালাল বা বৈধ মনে করা ৭. ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মকে সমান সত্য বা পথ হিসেবে গ্রহণ করা ৮. নিজেকে ইসলাম থেকে আলাদা ঘোষণা করা |