Bangla QR পেমেন্ট। Bangla QR পেমেন্ট ব্যবহারের সুবিধা
Bangla QR বা বাংলা কিউআর ব্যবহারের সুবিধা
১. বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে Bangla QR বা বাংলা কিউআর প্রযুক্তি চালুর কারণ
ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে নগদ টাকার ব্যবহার, পেমেন্ট হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। বর্তমানে আমাদের দেশেও বড় লেনদেনগুলো ডিজিটাল মাধ্যমেই হচ্ছে। কেননা এটি সহজ, নিরাপদ আর দ্রুত কাজ করে। তবে কম পরিমাণের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল লেনদেন এখনও নগদ টাকাতেই সম্পন্ন হয় বেশি। নগদ টাকার এই ব্যবহার কমিয়ে আনতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হয়েছে নতুন পেমেন্ট সিস্টেম Bangla QR বা বাংলা কিউআর প্রযুক্তি।
স্মার্টফোনের এই যুগে আমরা অনেকেই কিউআর কোড সম্পর্কে জানি।
২. কিউআর এর পূর্ণ অভিব্যক্তি হল কি? ডিজিটাল পেমেন্ট
Quick Response Code (কুইক রেসপন্স কোড)। অর্থাৎ স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে একটি দৃশ্যমান কোড থেকে সহজে ও দ্রুত বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করা যায় এর মাধ্যমে। আর এটি খুব দ্রুত কাজ করে বলে পেমেন্টের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ব্যবহার হতে দেখা যায়। এই কোড ব্যবহার করে ক্যামেরার মাধ্যমেই দ্রুত পেমেন্ট করা যায় নির্ভুলভাবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্ট সেবাদাতা অনেক আগে থেকেই নিজস্ব কিউআর কোড ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত পেমেন্টের সুবিধা দিয়ে আসছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাংক ও এমএফএস সেবা দোকানে বা আউটলেটে পেমেন্টের ক্ষেত্রে নিজস্ব কিউআর ব্যবহার করে। ক্রেতাদের সুবিধার লক্ষ্যে এই বিভিন্ন কিউআর কোডের ব্যবহারকে একটি সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থাৎ একটি কিউআর কোড ব্যবহার করেই আপনি আপনার পছন্দের ব্যাংক, কার্ড বা এমএফএস থেকে যেন দ্রুত পেমেন্ট করে দিতে পারেন সেই সুবিধাই নিয়ে আসবে বাংলা কিউআর। এতে করে ভিন্ন ভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য আলাদা কিউআর ব্যবহার থেকে মুক্তি পাবেন গ্রাহকরা। আজকের পোস্টে বাংলা কিউআর নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। সেই সঙ্গে বাংলা কিউআর কীভাবে ব্যবহার করবেন সে বিষয়েও জেনে নিতে পারবেন পুরো পোস্ট থেকে।
৩.বাংলা কিউআর কী or What is Bangla QR?
বাংলা কিউআর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এসএসএল কমার্সের সহযোগিতায় ২০১৯ সালে তৈরি হয়েছে। বাংলা কিউআর এর মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সকল ডিজিটাল পেমেন্ট মাধ্যমকে একত্রে নিয়ে আসা। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই সকল ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমকে বাংলা কিউআর এর মধ্যে নিয়ে আসার নির্দেশনা প্রদান করেছে। ফলে একটি মাত্র প্ল্যাটফর্মেই যে কেউ পেমেন্ট গ্রহণ বা প্রদান করতে পারবেন।
বাংলা কিউআর একটি কিউআর কোড পেমেন্ট সিস্টেম। অর্থাৎ বাংলা কিউআর-এর কিউআর কোড স্ক্যান করে আপনি সহজেই আপনার পছন্দের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা থেকে পেমেন্ট করে দিতে পারবেন। এই কিউআর ব্যবহার করে আপনি যে ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসই ব্যবহার করুন না কেন সহজেই কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করে ফেলতে পারবেন।
তবে বর্তমানে বিভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস এখনও এই সেবা পুরোপুরি চালু করতে পারেনি। কাজেই এর পূর্ণ সুবিধা উপভোগ করতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়ার মতো বিভিন্ন ব্যাংকে এই সুবিধা চালু হয়েছে। এছাড়া ভিসা, মাস্টারকার্ড ও ইউনিয়নপের কার্ড দিয়েও পেমেন্ট করা যাচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস বিকাশও তাদের অ্যাপে এই সেবা যুক্ত করেছে। তবে খুব শীঘ্রই সকল ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিস এই সেবা চালু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
৪. Bangla QR এর সুবিধা
বাংলা কিউআর ব্যবহার করলে আপনাকে নির্দিষ্ট ওয়ালেটে ব্যালেন্স রাখতে হবে না। কার্ডের মাধ্যমেও এতে পেমেন্ট করা যায় বলে যে কোন কার্ড থেকেই আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন দ্রুত। তাছাড়া বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে থাকা অর্থ আপনি সহজেই যে কোন দোকানে ব্যবহার করতে পারবেন, অন্য কোন জনপ্রিয় ওয়ালেটে তা ট্রান্সফার করে নেয়ার দরকার পড়বে না। ফলে সকল রকমের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমেই লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। দ্রুত ও সহজে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ডিজিটাল পেমেন্ট করা যাবে। এর ফলে পেমেন্ট হবে নিরাপদ এবং টাকা হারিয়ে যাবার ভয়ও থাকবে না। সহজেই আপনি নগদ টাকা ছাড়াই যে কোন পণ্য কিনে ফেলতে পারবেন।
সবথেকে বড় ব্যাপার এই সেবা নিতে আপনাকে বাড়তি কোন চার্জ বা খরচ করতে হবে না। আপনার ব্যয়ের হিসাব রাখাও অনেক সহজ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থা হওয়ায় পেমেন্ট একদম নিরাপদ থাকবে, আপনার কার্ড বা ব্যাংকের তথ্য অন্য কেউ জানতে পারবে না। একই চ্যানেল ব্যবহার করে পেমেন্ট করায় নিজের পছন্দমত ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা রাখতে পারবেন।
বাংলা কিউআর যে শুধু গ্রাহকদের জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে তাই নয়, মারচেন্ট বা বিক্রেতাদের জন্যও এটি অনেক বড় সুবিধা দেবে। সকল ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস হতে প্রাপ্ত পেমেন্ট একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হিসাব রাখা যাবে এবং গ্রহণ করা যাবে। একই স্থানে সকল সেবা পাওয়ায় ডিজিটাল পেমেন্ট নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহাও কম দেখা যাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলা কিউআর-এর মাধ্যমে পেমেন্টের সীমাও উঠিয়ে নিয়েছে। ফলে যে কোন পরিমাণের পেমেন্ট এখন এই সেবার মাধ্যমে করা সম্ভব হবে। ডিজিটাল পেমেন্টের এই ব্যবস্থা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই বেশ সুবিধা দেবে।
বাংলা কিউআর দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে আলাদা একটি জোয়ার নিয়ে আসবে। কেননা খুব দ্রুতই সকল ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসকে এই সেবা প্রদান করতে হবে। এর ফলে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ডিজিটাল ব্যাংকিং গ্রাহকরা একই মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। যারা এতদিন ডিজিটাল পেমেন্টকে বাড়তি ঝামেলা মনে করতেন তারাও এটি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
৫. Bangla QR কীভাবে ব্যবহার করে?
বাংলা কিউআর ব্যবহার করা যাবে খুব সহজেই। প্রতিটি ডিজিটাল পেমেন্ট সেবাকেই এই কিউআর কোড সাপোর্ট দিতে হবে। ফলে এতদিন ধরে যেসব ডিজিটাল ব্যাংক আলাদা কিউআর সিস্টেম ব্যবহার করছিল তাদেরকে নতুন এই কিউআর সিস্টেম রাখতে হবে। ফলে যে কোন ব্যাংকের অ্যাপ বা এমএফএস অ্যাপে বাংলা কিউআর এর জন্য আলাদা অপশন থাকবে।
এটি ব্যবহার করতে আপনাকে প্রথমে স্মার্টফোনে এমন কোন অ্যাপ ইন্সটল করতে হবে, যা বাংলা কিউআর সাপোর্ট করে। এরপর সেই অ্যাপ হতে কোন দোকানে বা আউটলেটে থাকা বাংলা কিউআর কোডটি স্ক্যান করে নিতে হবে। এরপরই আপনি কতো টাকা পেমেন্ট করবেন সেটির ইনপুট প্রদান করতে পারবেন। এখান থেকে সামনে এগোলে আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি পাঠানো হবে পেমেন্ট নিশ্চিত হবার জন্য। ওটিপি কোডটি দিলেই দ্রুত পেমেন্ট সম্পন্ন হয়ে যাবে। মার্চেন্ট বা বিক্রেতা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন।