ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ২০২৪ । নামাজে যাওয়ার সময় কি দোয়া পড়তে হয়?
ঈদের নামাজের সাথে জানাযার নামাজের বেশ মিল থাকায় অনেকেই তা গুলিয়ে ফেলে- তাই আজ আমরা ঈদের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় সেটি দেখে নিব –ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ২০২৪
ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব? হ্যাঁ। আল্লাহর নির্দেশ: আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, “তোমরা রমজান মাসের পূর্ণতা (ঈদুল ফিতর) যখন দেখবে, তখন রোজা রাখো এবং ঈদের দিন সালাত আদায় করো।” ([সূরা বাক্বরাহ, আয়াত: ১৮৫])। নবীর (সাঃ) ঐতিহ্য: নবী (সাঃ) ঈদের নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন এবং তাঁর সাহাবীগণও তাঁর অনুসরণ করতেন। মুসলিম উম্মাহর সকল আলেম ঈদের নামাজ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে একমত। ঈদের নামাজের ওয়াজিব হওয়ার ফলে: ঈদের নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। সে নবী (সাঃ) এর ঐতিহ্য অনুসরণ করে এবং সে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার লাভের আশা করতে পারে।
ঈদুল আযহার আমল কি?– ৮ জুন থেকে ১৭ জুন অর্থাৎ এই ১০ দিন কিছু আমল করতে হয়। জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল নবীজির সুন্নত হিসেবে পরিগণিত। মুসলমানগণ যারা নখ, চুল, কাটবেন ৭ জুনের মধ্যে কেটে ফেলবেন, ৮ জুন-১৭জুন কোরবানি শেষ করে নখ, চুল কাটবেন। ১৬ জুন ফজর থেকে ২০ জুন আসর পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের পর একবার “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ” বলা ওয়াজিব। ৯ দিন রোজা (অন্তত শেষের ২ দিন) রাখা সুন্নত। আওয়াল ওয়াক্তে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বেন। সামর্থ্য অনুযায়ী গোপনে দান সাদাকা করবেন। যথাসম্ভব নফল নামাজ পড়বেন। কমপক্ষে ১ পারা কুরআন তেলাওয়াত করবেন। ইস্তেগফার, তাসবীহ, দুরুদ পড়ার চেষ্টা করবেন। অধিক পরিমাণে তওবা করতে থাকবেন। অধিক পরিমাণে জিকির করবেন (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্, লা ইলাহা ইল্লালাহ, আল্লাহু আকবার, আস্তাগফিরুল্লহ, আল্লাহুম্মাগফিরলি, সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবাহানাল্লাহিল আজিম)। সুরা বাকারার শেষ ২আয়াত, সুরা মুলক পাঠ করা রাতে ঘুমানোর আগে পড়বেন।
আরাফার দিনে রোজা রাখার ফজিলত কি? ঈদুল আযহার আগের দিনকে ইওয়ামুল আরাফাহ বলা হয়। আরাফা’র রোযা সম্পর্কে রাসুল বলেন صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده অর্থাৎ ‘ইয়াওমুল আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করবেন। সুবহানাল্লাহ -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬২
ঈদ উল আযহা উপলক্ষ্যে সুন্নাহ অনুযায়ী সব কাজ করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ্ তা’ আলা আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুক।
হ্যাঁ, ঈদের নামাজ ওয়াজিব। প্রমাণ- হাদিস: নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈদের নামাজ ঈমানের সাথে এবং সঠিকভাবে আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল গুণাগুলি মাফ হয়ে যাবে।” ([সুনানে নাসায়ী, হাদিস নং: ১৫০৭])
Caption: EID Namaj rules
ঈদের নামাজের নিয়ম ২০২৪ । দ্বিতীয় রাকাতও কি অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিতে হয়?
- ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত বাংলায় দেওয়া হলো- আমি ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- ‘আল্লাহ আকবার’।
- ঈদের নামাজের প্রথম রাকাতের নিয়ম – প্রথম তাকবীর। হাত বেঁধে> সানা পড়বে> দ্বিতীয় তাকবীর>হাত ছেড়ে দিতে হবে> তৃতীয় তাকবীর> হাত ছেড়ে দিতে হবে> চতুর্থ তাকবীর>হাত বাঁধতে হবে এবং এরপর ঈমাম ক্বেরাত পড়বেন।
- নামাজের দ্বিতীয় রাকাতের নিয়ম (রুকুতে যাওয়ার আগে)-প্রথম তাকবীর> হাত ছেড়ে দিতে হবে> দ্বিতীয় তাকবীর> হাত ছেড়ে দিতে হবে> তৃতীয় তাকবীর
হাত ছেড়ে দিতে হবে> চতুর্থ তাকবীর> আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকু শেষে সিজদাহ শেষে করে দোয়া দরুন পড়ে সামাম ফিরতে হবে।
নবী কি ঈদের নামাজে শিশুদের নিয়ে যেতেন?
হ্যাঁ, নবী (সাঃ) ঈদের নামাজে শিশুদের নিয়ে যেতেন। কিছু হাদিস থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়, আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন: “নবী (সাঃ) আমাদের সাথে ঈদের ঈদগাহে বের হতেন। তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর ছোট ছেলে ইব্রাহিম। তিনি তাঁকে কাঁধে করে নিয়েছিলেন। যখন তিনি তাঁকে নামিয়ে রাখলেন, তখন তিনি তাঁকে তার গায়ের উপর চড়িয়ে নিলেন।” ([সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং: ১৬৯৭]) এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন: “আমি নবী (সাঃ) এর সাথে ঈদের ঈদগাহে যাচ্ছিলাম। তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর ছোট ছেলে ইব্রাহিম। তিনি তাঁকে কাঁধে করে নিয়েছিলেন। যখন তিনি তাঁকে নামিয়ে রাখলেন, তখন তিনি তাঁকে তার গায়ের উপর চড়িয়ে নিলেন।” ([সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং: ১৫০৮])। এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, নবী (সাঃ) ঈদের ঈদগাহে শিশুদের নিয়ে যেতেন। তিনি শিশুদের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদর্শন করতেন। তিনি শিশুদেরকে ঈদের আনন্দ ও উৎসবে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করতেন। তবে, কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত যে, ছোট শিশুদের ঈদগাহে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের যত্ন নেওয়া জরুরি। তাদের যেন ঈদগাহে বিরক্তিকর মনে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।