সর্বশেষ নিউজ

MPH কি? MPH ভবিষ্যৎ কি? বাংলাদেশের MPH কি বিদেশে স্বীকৃত?

বাংলাদেশের MPH বিদেশে স্বীকৃত দেওয়া 

 

 

১। MPH কি?

MPH – Masters in Public Health. এটি স্নাতোকোত্তর একটি ডিগ্রী যা প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যাকে আলাদাভাবে চিন্তা না করে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করে সমাধানের পথ খুজে বের করে সবার জন্য। এই ডিগ্রীর মেয়াদ প্রতিষ্ঠান এবং কারিকুলাম ভেদে ১, দেড় বা ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

 

২। MPH কি চিকিৎসা সহায়ক ক্যারিয়ার?

MPH কি, কখন, কেন, কিভাবে, কোথায় 

বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত মিথগুলোঃ

1) এই ডিগ্রি করতে কস্ট কম, অল্প সময়ে ভালো টাকা কামাই করা যায়।

2) এই ডিগ্রি করলে চোখ বন্ধ করে বিদেশ চলে যাওয়া যায়।

3) এই ডিগ্রি করলে icddr,b তে চাকরি পাওয়া যায়।

4) এই ডিগ্রি করলে সরকারী প্রজেক্টের কাড়ি কাড়ি টাকা ভোগ করা যায়।

5) এই ডিগ্রীর দেশে কোন দাম নাই, বিদেশে কিছু দাম থাকতে পারে।

6) ডাক্তার হয়ে এই ডিগ্রি করার কোন মানে নাই। এটা তো নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, সোশাল সায়েন্সের লোকজনও করতে পারে, ডাক্তার হয়ে এই ডিগ্রি করা মেধার অপমান।

7) MPH মানে কমিউনিটি মেডিসিন, মানুষের পায়খানা, ল্যাট্রিন ঘাটাঘাটি করা।

 

৩। MPH কেন, কাদের জন্য

এই ডিগ্রীটা শুধু ডাক্তার নয়, নার্স, উকিল, ফিজিওথেরাপিস্ট, সোশাল সায়েন্স প্রফেশনাল ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজন করতে পারে। ডিগ্রিটা কাদের জন্য এটা নিয়ে একটা সরল ব্যখ্যা আছে। এমবিবিএস চলাকালীন সময়ে অথবা পাশ করার সাথে সাথে প্রথমে চিন্তা করে নিতে হবে আপনি ক্লিনিক্যাল লাইনে ক্যারিয়ার করবেন (অর্থাৎ ডাক্তারি ছোট ডাক্তার থেকে বড় প্রফেসর পর্যন্ত) কিনা নাকি নন ক্লিনিক্যাল (যেকোন বেসিক সাবজেক্ট) লাইনে ক্যারিয়ার করবেন। যদি উত্তর ক্লিনিক্যাল হয় সেক্ষেত্রে আরেকটি প্রশ্ন, আপনি কি শুধু সাধারন ফিজিশিয়ান হবেন নাকি মাঝে মাঝে টুকটাক গবেষনা ধর্মী কাজ করবেন এই যেমন ধরুন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট এর এই যুগে কোন এন্টিবায়োটিক কম্বিনেশন আপনার এলাকায় পেশেন্টদের নিউমোনিয়ার জন্য ভালো কাজ করে ইত্যাদি। এখানে উল্লেখ্য এফসিপিএস, এমডি, এমএস যেকোন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে আপনাকে রিসার্চ পেপার লিখতে হবে, সেটা দায়সারা এবং জীবনে একবারের মত করবেন নাকি ভালোভাবে এবং বার বার নিজ ইচ্ছায় করবেন? উত্তর যদি হয়, আপনি একজন ক্লিনিক্যাল রিসার্চার হতে চান তাহলে আপনি এই ডিগ্রিটা করে রাখতে পারেন অন্য যে কারো চেয়ে ভালোভাবে ইন্ডিভিজুয়াল এবং কমিউনিটি দুই লেভেলেই ট্রিটমেন্ট ও প্রিভেনশন নিয়ে কাজ করার জন্য।

এবার ধরে নিচ্ছি আপনি নন ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টে ক্যারিয়ার করতে চান। সেক্ষেত্রে কোন সাবজেক্টে ক্যারিয়ার করতে চান সেটা ঠিক করুন এবং সে পথে দেশে বা বিদেশে পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর স্টেপগুলো জেনে নিন। ধরুন আপনি পাবলিক হেলথে ক্যারিয়ার করতে চান না, অন্য কোন সাবজেক্টে রিসার্চ বেজড কাজ করতে চান, তাহলে এমপিএইচ করার গুরুত্ব আছে কিনা। হ্যা আছে, আপনি যদি দেশে বাইরে যেতে চান সেক্ষেত্রে সবার প্রথমেই রিসার্চ পেপার এবং রিসার্চ রিলেটেড কাজে এক্সপেরিয়েন্স দেখা হয়। আর পাবলিক হেলথ যেহেতু বারোয়ারী স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করে তাই এই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী এবং রিসার্চ পেপার আপনার কাংখিত বিষয়ে পিএইচডি অর্জনে সাহায্য করতে পারে।

এইসবগুলো গ্রুপের জন্যেই MPH ডিগ্রীটা প্রয়োজনীয়।

 

৪। MPH  কোথায় কোথায় কাজে লাগে

প্রথম প্রশ্ন আপনি কি সরকারি চাকরি করতে চান নাকি বেসরকারি। যদি সরকারি চাকরি করতে চান সেক্ষেত্রে পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজ করার জন্য কিংবা কমিউনিটি মেডিসিনে প্রফেসর হবার জন্য বিএমডিসি স্বীকৃত একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে NIPSOM, সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নী শেষ হবার ১ বছর পর এমডি/এমএস পরীক্ষার মত এডমিশন পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়। নিপসমে কোর্সের মেয়াদ ২ বছর, পূর্ণকালীন, অর্থাত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সপ্তাহে নূন্যতম ৫ দিন। এছাড়াও BSMMU, BDHS এই দুটি প্রতিষ্ঠানেও MPH করা যায়, কারিকুলাম নিপসমের মতই, ভর্তি পদ্ধতিও একই। খরচ নিপসমের চেয়ে একোটু বেশি।

এর বাইরে অন্য কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমপিএইচ বিএমডিসি স্বীকৃত না। এই মানদন্ডে সব বেসকারি প্রতিষ্ঠানের এমপিএইচ ডিগ্রী একই কাতারে ফেলা যায়, তবে ব্র্যাক-জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর MPH বাকি সবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এর মানের কারনে। তবে এখানে খরচ অনেক বেশি, ভাগ্য ভালো থাকলে স্কলারশিপ পাওয়া যেতে পারে, সপ্তাহে ৫ দিন সকাল বিকাল ক্লাস। এছাড়া AIUB, NSU, IUB, State University, BUHS বেশ ভালো মানের বেশি বাদে বাকি সব প্রতিষ্ঠানে কারিকুলাম প্রায় একই, সপ্তাহে ১ দিন বা দু-দিন ক্লাস নিয়ে দেড় বছর বা ১ বছরে কোর্স শেষ করা যায়। যারা চাকরির পাশাপাশি এই ডিগ্রী করতে চান তাদের জন্য এই ব্যবস্থাটাই ভালো। খরচ দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকার মত। যদি ডিগ্রীটা করে ফেলার ইচ্ছা থাকে তাহলে ইন্টার্নীর পরপরেই করে ফেলাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ (যদি সময় পাওয়া যায় এবং শরীরে কুলায়), পরবর্তীতে যেকোন সময়েই করা যেতে পারে তবে মাথা চালু থাকতে থাকতে করে ফেলাই মনে হয় ভালো।

 

৫। চাকরি ক্ষেত্র MPH গুরুত্ব কি?

১. সরকারিভাবে এডমিনিস্ট্রেটিভ, পাবলিক হেলথ, কমিউনিটি মেডিসিন ইত্যাদি সেক্টরে কাজ করা যায়

২. বেসরকারিভাবে icddrb, BRAC, USAID, UNICEF, UN, UChigao, OGSB, Damien foundation, CIPRB, ORBIS, Water Aid, ORBIS, Save the Children ইত্যাদি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে শুরু করে দেশি বিদেশি অজস্র NGO, রিসার্চ সেন্টারে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।

৩. দেশের বাইরে কিংবা দেশে একাডেমিক লাইনে যেমন কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক বা একাডেমিক রিসার্চার বা রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করা যায়।

৪. হসপিটাল এডমিনিস্ট্রেটর, ডিরেক্টর, ম্যানেজার, ইত্যাদি এডমিনিস্ট্রেটিভ চাকরি

৫. দাতা সস্থার অর্থে পরিচালিত বিভিন্ন সরকারি বেসকারি প্রজেক্টে কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে নিয়োগ

.রিসার্চ সায়েন্টিস্ট

. এপিডেমিওলজিস্ট, হেলথ রিসোর্স প্ল্যানিং,     হেলথ ইকনমিস্ট ইত্যাদি

 

৬। বাংলাদেশের MPH কি বিদেশে স্বীকৃত?

নিপসম, ব্র্যাক তো বটেই বাংলাদেশের যেকোন প্রতিষ্ঠান থেকেই আপনি এমপিএইচ ডিগ্রী করে PhD এর জন্য এপ্লাই করতে পারেন যেকোন দেশে। আপনার যোগ্যতা,অভিজ্ঞতা, পাবলিকেশন, জার্নাল, ক্ষেত্রে বিশেষে IELTS, GRE, ইত্যাদি বিবেচনা করে আপনাকে স্কলারশিপসহ বা ছাড়া এডমিশন নিয়ে নেবে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *