সরকারি ন্যায়পাল নিয়োগ ২০২৪ । বাংলাদেশের অন্যায়ের বিরূদ্ধে কাজ করবে ন্যায়পাল?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অদ্যবধি ন্যায়পাল নিয়োগ প্রদান করা হয়নি- সংবিধানের ৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকলেও কোন সরকারই তা প্রতিষ্ঠা করেনি –সরকারি ন্যায়পাল নিয়োগ ২০২৪
নতুন সরকার কি ন্যায়পাল পদ পূরণ করবে? হ্যাঁ। দূর্নীতি প্রতিরোধে এবং অন্যায় রোধে বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যায় পাল নিয়োগ দিবে এমন সিদ্ধান্তই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানিয়েছেন। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছে এবং সরকার কি করবেন বা না করবেন সে বিষয়ে রূপকল্প প্রকাশ করেছে। সেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
ন্যায়পাল কি? ন্যায়পাল বলতে এমন একজন সরকারী মুখপাত্র বা কর্মকর্তাকে বোঝায়, যিনি সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করেন। সরকারি আমলা ও সাধারন নাগরিকদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী সরকারি এজেন্ট হিসেবে তিনি থাকেন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৭নং অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
সংবিধানে ন্যায়পাল সম্পর্কে কি বলা হয়েছে? ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৭নং অনুচ্ছেদে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে। এই অনুচ্ছেদের আলোকে ১৯৮০ সালে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির জন্য আইন গৃহীত হয়, যদিও তা এখনও কার্যকর হয় নি। সেখানে এভাবে বলা হয়েছে যে- (১) সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ-প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করিতে পারিবেন। (২) সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালকে কোন মন্ত্রণালয়, সরকারী কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের যে কোন কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ যেরূপ ক্ষমতা কিংবা যেরূপ দায়িত্ব প্রদান করিবেন, ন্যায়পাল সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবেন। (৩) ন্যায়পাল তাঁহার দায়িত্বপালন সম্পর্কে বাৎসরিক রিপোর্ট প্রণয়ন করিবেন এবং অনুরূপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত হইবে।
বাংলাদেশে সংবিধানে ন্যায়পাল সম্পর্কে ১ম পরিচ্ছেদে বলা হয়েছ / অদ্যবধি এ পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি
ন্যায়পাল শব্দটির প্রথম উৎপত্তি ঘটে সুইডেনে ১৮০৯ সালে।সুইডিশ শব্দ ombudsman অর্থ প্রতিনিধি বা মুখপাত্র। ন্যায়পাল এমন ব্যক্তি যিনি ন্যায়ের পক্ষে অন্যের জন্য কথা বলেন। বাংলাদেশের ৭২ সংবিধানেরমূল বিষয়টি ছিল ন্যায়পাল কেন্দ্রিক। প্রশাসনের অনিয়ম, অব্যবস্থা দূর করতে সংবিধানে ন্যায়পালের বিষয়টি সংযোজিত হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
ন্যায়পাল নিয়ে বাংলাদেশ সংবিধান । স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দী পার হলেও ন্যায়পাল নিয়োগ দেয়া হয়নি আজ পর্যন্ত
- সংবিধানের ৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদের( ১) এ বলা হয়েছে সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করিতে পারিবেন।’
- (২) বলা হয়েছে, সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালকে কোনো মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যেকোনো কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ যেরূপ ক্ষমতা কিংবা যে রূপ দায়িত্ব প্রদান করিবেন, ন্যায়পাল সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবেন।’
- (৩.) বলা হয়েছে, ‘ন্যায়পাল তাহার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বাৎসরিক রিপোর্ট প্রণয়ন করিবেন এবং অনুরূপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত হইবে।’
- সংবিধানের এই আইনটি দীর্ঘকাল বাক্সবন্দী থাকার অর্থই হচ্ছে, এ যাবৎ যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের দ্বারা সম্পাদিত অনিয়মগুলো যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য তারা কেউই এই আইনকে কার্যকর করেনি। সরকারের কার্যক্রমের জবাবদিহিতার মধ্যে কোনো প্রকার স্বচ্ছতা আসুক, সম্ভবত এটা কোনো সরকারই চায়নি নিজ স্বার্থেই।
ন্যায়পাল কি সরকারি কর্মকর্তা?
হ্যাঁ। ন্যায়পাল’ বলতে এমন একজন সরকারি মুখপাত্র বা প্রতিনিধি কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে বোঝায়, যিনি সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করবেন। আমলা ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ন্যায়পাল থাকবেন স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অভিগম্য। বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে কার্যকর হয়েছিল। সেই সংবিধানে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু পদ থাকলেও ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এ নিয়ে। ন্যায়পাল ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার জন্য সংসদে এ সংক্রান্ত আইন তৈরি ও পাস করা হয়নি। ১৯৮০ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার এই মর্মে একটি আইন তৈরি এবং সংসদে পাস করান। তবে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০বছরে কোনো সরকারই তা কার্যকর করেনি। এর অর্থ এমনই করা যেতে পারে যে, আজ অবধি কোনো সরকারই আমলা শ্রেণীর অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সাহসী হয়নি।
কেন সরকার ন্যায়পাল নিয়োগ দেয়নি? এমন ভীতিও রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের থাকতে পারে যে, আমলাদের বিষয় নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হলে পেছনে থেকে তারা নিজেরা যে ভূমিকা রাখেন, সেটা বেরিয়ে এলে আমলাদের সাথে তারাও বিপদগ্রস্ত হতে পারেন। আমাদের দেশে সরকারের রাজনৈতিক যে কর্তৃপক্ষ, তারা নিজেরাই স্বচ্ছ নয় বলে কোনো ধরনের জবাবদিহির সম্মুখীন হতে তাদের প্রচণ্ড অনীহা। আর এসব কারণেই বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও এর কোনো প্রতিবিধান কোনোদিন হয় না।
দুর্নীতি রোধে ন্যায়পাল কি ভূমিকা রাখে? প্রতিটি দল নির্বাচনের আগে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়ে থাকে। অথচ নির্বাচন শেষে এসব প্রতিশ্রুতির কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া হয়। যদি তাই না হতো, এ দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেগবান আন্দোলন সৃষ্টি এবং ন্যায়পাল গঠনের ক্ষেত্রে সরকারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি হতো। ন্যায়পালের ধারণা বিকশিত না হওয়ার মধ্য দিয়ে এটাও প্রমাণ হয় যে, দেশে আইনের শাসন প্রাধান্য লাভ করুক সেটাও রাজনীতিকেরা চান না।
আগেই বলা হয়েছে যে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সংবিধান রচনার সময়ই সংবিধানে ন্যায়পাল সংযোজিত হয়। ন্যায়পালের দফতর বস্তুত দেশের প্রশাসনে জবাবদিহিতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই করা হলেও আজ অবধি তা কার্যকর হয়নি। আর বাংলাদেশের আমলাদের দক্ষতা নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, অপশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পক্ষপাতদুষ্টতার বহু নজির রয়েছে।