কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য এবং জবাই করার নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া কোরআন হাদিসের আলোকে

কোরবানির গরু জবাই করার নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া এবং কোরআন  হাদিসের আলোকে 

 

কোরবানির কি?

কোরবানি শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে এবং এর ইংরেজি অনুবাদ Qurbani বা Sacrifice। বাংলায় কোরবানি বলতে একটি পশুর যৌথ নিষ্ঠা মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রস্তুত করা কোনো আত্মসমর্পণ বোধ করানো হয়। ইসলামে কোরবানি হল আল্লাহর নির্দেশানুসারে একটি পশুর জীবন দান করা যা মুসলিম উম্মারের পুরোনো সুন্নত বা প্রথার একটি অংশ। কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তির আত্মসমর্পণ ও সদকা প্রদর্শন করা হয় এবং সাথে সাথে দরিদ্র বিদ্যার অভাবী মানুষদের উপর দয়া ও সাহায্যের প্রতীক হিসাবে আল্লাহর রাহমত ও কল্যাণের প্রভাব ফেলা যায়।

১.কার উপর কুরবানী ওয়াজিব? 

উত্তর জিলহজ্জ মাসের ১০ সুবহে সাদিক থেকে১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারো কাছে যদি নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে ৭ঃ৫ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।

কোরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া আরবি উচ্চারণ

اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

বাংলা উচ্চারণ

ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

আর যদি কোন ব্যক্তি উপরের এই দোয়াটি পাঠ করতে না পারেন তাহলে নিম্নের এই ছোট দোয়াটি পাঠ করতে পারেন।

কোরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া আরবি উচ্চারণ

بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

বাংলা উচ্চারণ

বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া

যদি কোনো মুসল্লি নিজের কোরবানির পশু জবাই করেন তখন ওই ব্যক্তি নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতে হবে।

আরবি উচ্চারণ

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم,

বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাণব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

অন্য কেউ কুরবানি বা অন্য কারো কুরবানি করলে এ দোয়া পড়া

যদি কোন মুসল্লী অন্য কারোর কোরবানির পশু জবেহ করেন তাহলে তার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতে হবে।

আরবি উচ্চারণ

اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم

বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা মিনকুম কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

কোরবানির পশু নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর যা অনেকেই জানে  না তা দেওয়া হল

২.নিছাবের মেয়াদ কত দিন?

উত্তর ৩ দিন জিলহজ্জ মাসের ১০,১১ এবং ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

৩. তিন দিনের মধ্যে কোন দিন কুরবানী করা উত্তম? 

উত্তর ১০ তারিখে প্রথম দিন।

৪.যদি নাবালক এর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি ? 

উত্তর না।

৫.বালেক সুস্থ মস্তিষ্ক না নিছাব পরিমাণ সম্পদ আছে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি ? 

উত্তর না

৬.যদি নাবালেক এর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকে এর পক্ষে থেকে কুরবানী দেওয়া কি? 

উত্তর ওয়াজিব না।

৭.দরিদ্র লোকের উপর কুরবানী কি ওয়াজিব?

উত্তর তবে যদি কুরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে। তখন সে পশু কুরবানী করা ওয়াজিব।

৮.কেউ যদি কুরবানির দিন গুলোতে কুরবানির দিতে না পারে তাহলে কি করবে যদি সে নিছাব পরিমাণ সম্পদ আছে কোন সমস্যায় দিতে পারে নি তাহলে কি করবে? 

উত্তর একটা ছাগল যে কুরবানী উপযুক্ত সে ছাগলের সমপরিমাণ টাকা সদকা করে দিবে ন এটা হলো যারা পশু ক্রয় করতে পারেনি তাদের জন্য।

কিন্তু যারা পশু কিনেছেন কিন্তু তিন দিনের মাঝে কুরবানী দিতে পারেন নি তাহলে তার জন্য করণীয় হলো সে পশু সদকা করে দেওয়া।

আবার যদি কেউ তিন দিন পর জবাই করে ফেলে তাহলে সে ঐ পশুর গোশত ওজন করবে তারপর যদি ঐ পশুর ক্রয়ের টাকা থেকে কম হয় তাহলে গোশত সহ

যতো টাকার গোশত কম হয়েছে পুরো টাই সদকা করতে হবে। ধরনে আপনি ২০ হাজার দিয়ে কিনেছেন ওজন দিয়ে দেখলেন ১৮ হাজার টাকার গোশত হয়েছে

গোশতের আরও ২ হাজার টাকা সদকা করতে হবে।

৯. প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে?

উত্তর যে এলাকায় জুমার নামাজ এবং ঈদের নামাজ ওয়াজিব সে এলাকায় ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করা জায়েজ নেই। তবে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটে গেলে

যদি ঈদের নামাজ না পড়া যায় তাহলে করনীয় হলো সূর্য মধ্যে আকাশ অতিক্রম করার পর কুরবানী করা জায়েজ হবে।

১০.রাতে কুরবানী দিলে কি হবে?

উত্তর ১০ এবং ১১ তারিখে রাতে দিলে হবে ১২ তারিখ রাতে দিলে হবে না।

১১.কোন কোন পশু দিয়ে কুরবানী দেওয়া জায়েজ?

উত্তর গরু উট মহিষ দুম্বা ছাগল এবং ভেড়া।

১২.পশু দের লিঙ্গ ভেদ করতে হবে কি?

উত্তর না পুরুষও মহিলা উভয় দিয়ে হবে।

১৩.পশুর বয়স সীমা কত?

উত্তর উট কম পক্ষে ৫ বছর গরু মহিষ ২ বছর

ভেড়া দুম্বা ছাগল ১ বছর।

ভেড়া এবং দুম্বা ১ বছর হয়নি তবে বলিষ্ঠ মনে হয়। এক বছর হয়েছে তাহলে এটা দিয়ে কুরবানী হবে। তবে ছাগল ১ বছরের নিচে কোন ভাবে হবে না।

১৪.শরীক সর্বোচ্চ কত জন হওয়া যাবে?

উত্তর উট গরু মহিষে সর্বোচ্চ ৭ জন কমে হলে সমস্যা নেই তবে একা দেওয়া উত্তম । ছাগল দুম্বা ভেড়া তে একজন।

১৫.গোশত ভাগে কম বেশি হলে? 

উত্তর কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

১৬. শরীকের মাঝে কেউ যদি গোশত খাওয়ার নিয়তে দেয় তাহলে? 

উত্তর কারো কুরবানী হবে না।

১৭.কুরবানীর পশুতে আকিকা দেওয়া যাবে? 

উত্তর হ্যাঁ তবে উট গরু এবং মহিষে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *