জমির গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র পুনরুদ্ধার: কোথায়, কীভাবে পাবেন?
‘ভয় নয়, তথ্য নিয়ে এগোনোর’ পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের- জমি সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছেন? আপনার মূল্যবান খতিয়ান, দলিল বা মৌজা ম্যাপ হারিয়ে গেছে? জমি বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সঠিক সরকারি দপ্তরগুলো সম্পর্কে জানলে সহজেই জমির মূল কাগজপত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দালালদের ওপর নির্ভর না করে, নিজ উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য প্রধানত তিনটি মৌলিক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়: খতিয়ান, দলিল (রেজিস্ট্রি দলিল) এবং মৌজা ম্যাপ বা নকশা। এই কাগজগুলোর অনুপস্থিতি ব্যাংক ঋণ গ্রহণ, নামজারি বা আইনি প্রক্রিয়ায় মালিকানা প্রমাণকে কঠিন করে তোলে।
📌 কাগজপত্র সংগ্রহের স্থান ও প্রক্রিয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, জমির মালিকানা সংক্রান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করতে জনসাধারণকে ৪টি মূল দপ্তরে যেতে হবে:
১. খতিয়ান (CS, SA, RS, BS) সংগ্রহ:
জমির মালিকানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হলো ‘সার্টিফাইড খতিয়ান’।
| কাগজের প্রকার | দপ্তর | প্রাপ্তির ধরন |
| সার্টিফাইড খতিয়ান | জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিস | এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আইনিভাবে গ্রহণযোগ্য। |
| নতুন খতিয়ান ও ম্যাপ | সেটেলমেন্ট অফিস | সর্বশেষ জরিপ সম্পন্ন হওয়ার পর এখানে পাওয়া যায়। |
| খসড়া খতিয়ান | ইউনিয়ন ভূমি অফিস (তহশিল অফিস) | প্রাথমিকভাবে তথ্য জানতে ও খাজনা দিতে এখানে যেতে পারেন। |
টিপস: জমির খতিয়ান নম্বর না জানা থাকলে, প্রথমে তহশিল অফিস থেকে তা জেনে নিন।
২. দলিল (বায়া/রেজিস্ট্রি দলিল) সংগ্রহ:
জমি হস্তান্তরের আইনি প্রমাণ হলো দলিল। মূল দলিল বা তার নকল দুটি স্থানে পাওয়া যায়।
| কাগজের প্রকার | দপ্তর | প্রাপ্তির ধরন |
| পুরাতন/নতুন দলিলের সার্টিফাইড কপি | জেলা রেজিস্ট্রি অফিস (সদর রেকর্ড রুম) | দলিল হারালে বা পুরাতন দলিলের নকলের জন্য এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান। |
| নতুন দলিলের নকল | উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস | সদ্য রেজিস্ট্রি হওয়া দলিলের নকল এখানে পাওয়া যেতে পারে। |
৩. মৌজা ম্যাপ বা নকশা সংগ্রহ:
জমির অবস্থান, আকৃতি ও পরিমাপের জন্য মৌজা ম্যাপ অপরিহার্য।
-
জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিস
-
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর (DLR অফিস, তেজগাঁও, ঢাকা)
এই দপ্তরগুলো থেকে মৌজাভিত্তিক ম্যাপ এবং জরিপ কপি পাওয়া যায়।
💰 খরচের ধারণা ও সতর্কবার্তা
সরকারিভাবে এসব কাগজপত্র তোলার খরচ অত্যন্ত কম। উদাহরণস্বরূপ, সিটি জরিপ খতিয়ানের জন্য ফি মাত্র ১০০ টাকা। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে ‘অফ দ্য রেকর্ড’ বা অতিরিক্ত খরচ লাগতে পারে, যা স্থানীয় দালাল বা সিন্ডিকেটের প্রভাবে হয়ে থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: দালালদের পুরোপুরি ভরসা না করে, সরকারি নির্ধারিত ফি সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং সম্ভব হলে একজন আইনজীবী বা জমি বিষয়ক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
আইনজীবীরা বলছেন, একটি পুরাতন বিরোধ বা মালিকানার জটিলতা নিরসনে পর্যায়ক্রমে সব তথ্য জোগাড় করা বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন: কোনো পুরাতন দলিলের দাবি যাচাই করতে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশি করা এবং একই সাথে সেটেলমেন্ট অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট সময়ের খতিয়ান সংগ্রহ করে মালিকানা যাচাই করা—এভাবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সংক্ষেপে:
-
খতিয়ান তুলুন: ডিসি বা সেটেলমেন্ট অফিসে
-
দলিল তুলুন: সাব-রেজিস্ট্রি বা জেলা রেকর্ড রুমে
-
নকশা নিন: ডিসি অফিস বা DLR অফিসে

