পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও নিয়ম

তাহাজ্জুদ অনেক ফজিলতপূর্ণ নামাজ। পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব, ফজিলত,তাহাজ্জুদ পড়ার সময় এবং নিয়ম সংক্রান্ত অনেক আলোচনা এখানে করা হয়েছে। পুরো লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইলো। আপনাদের কাজে লাগবে ইনশাআল্লাহ।

হাদীসের আলোকে তাহাজ্জুদ এর ফজিলত-

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমি নবী কারীম (সা) কে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সমস্ত নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার নামাজ হল রাতের গর্ভের নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুতের নামাজ ) (মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ)

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা । আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হল তাহাজ্জুদের নামাজ ।

( সহীহ মুসলিম ও নাসায়ী )

হযরত আবু মালেক আশআরী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন ,জান্নাতে এমন কিছু (সুন্দর) কক্ষ আছে যার ভিতর থেকে বার দেখা যায় আর বার থেকে ভেতর দেখা যায় । আল্লাহ তাআলা সেগুলো ওইসব লোকদের জন্য তৈরি করেছেন যারা মেহমানদারি করে, বেশি বেশি সালাম করে এবং রাতের বেলায় নামাজ পড়ে যখন অন্য মানুষ ঘুমন্ত থাকে ।

(সহীহ ইবনে হিব্বান)

হযরত আবু উমামা বাহিলী রাদিআল্লাহু তা’আলা বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন ,তোমরা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো । কেননা তাহাজ্জুদের নামাজ হলো তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের তরীকা এবং তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তোমাদের নৈকট্য লাভের উপায় । আর তোমাদের গুনাহ মোচনকারী ও গুনাহ থেকে বাধা দানকারী ।

(মুসতাদরাকে হাকেম)

হযরত আবু সাঈদ ও হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুমা বলেন, যে রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতে জাগ্রত হয় এবং নিজের স্ত্রীকে জাগ্রত করে দেয় । অতঃপর উভয়ে একত্রে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তাদের উভয়কে অধিক জিকিরকারীদের তালিকাভুক্ত করা হয়। (আবু দাউদ)

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা প্রতিরাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন যখন এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে (অন্য এক বর্ণনামতে যখন এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয় )অতঃপর বলতে থাকেন কে আছে আমার কাছে দোয়া করবে আমি তা দোয়া কবুল করবো ! কে আছে আমার কাছে আবেদন করবে আমি তাকে দান করব! কে আছে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব । এক বর্ণনায় আছে এভাবে ফজর পর্যন্ত আল্লাহপাক বলতে থাকেন । (বুখারী ও তিরমিযী )

রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ এতোই মর্যাদাবান যে, এ নামাজ পড়া মুসল্লির দোয়া বা চাওয়া-পাওয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ পড়া ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন। দোয়া ও মনের আশা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময়-

তাহাজ্জুদ নামাজ রাতে পড়তে হয়। এটি এশার নামাজ আদায় করার পর থেকে ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ অর্ধ বা দ্বিপ্রহরের সময় পড়া ভালো। সর্বোত্তম হচ্ছে রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে এর পর ঘুম থেকে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়া ।

তাহাজ্জুদ নামাজ কতো রাকাত –

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতের পার্থক্য থাকলেও অধিকাংশ স্কলারের মতে, তাহাজ্জুদ সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ আট রাকাত। এর বেশিও পড়া যাবে। নবিজী (সা)কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকত এবং কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। কিন্তু যদি কেউ রাতে ইশার পর থেকে শেষ রাতের মধ্যে ২ রাকাত নামাজ পড়ে তবে তা তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম –

তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা বা নিয়ম নেই। অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজের মতো রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ পড়তে হয়। সূরা ফাতেহার সঙ্গে যে কোনো সূরা মিলিয়ে এ নামাজ পড়া যায়। তবে উত্তম হলো দীর্ঘ বা লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। যদি কারো বেশি আয়াত বা লম্বা সুরা মুখস্ত থাকে তবে তাদের জন্য লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম। কারণ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত আদায় করা উত্তম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *