ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের উৎপত্তি ও ইতিহাস এবং বিশ্বকাপ ফুটবল কে কতবার কাপ নিয়েছে

ব্রাজিল ফুটবলের উৎপত্তি ও ইতিহাস

 

 

 

১। ব্রাজিল রং হলুদ 

ব্রাজিল বৈচিত্র্যময় উৎসব এবং সুন্দরী নারীর জন্য বিখ্যাত ব্রাজিল। তবে দেশটিকে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এবং সম্মান এনে দিয়েছে ফুটবল। প্রথম দু’টি ধারণা তাদের পূর্বেকার ঐতিহ্যগত এবং সাংস্কৃতিক মূল থেকে আসা। তবে তৃতীয়টি সাম্প্রতিক এবং তরতাজা।

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারের স্বাদ পেয়েছিলো ব্রাজিল। যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের হার দিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করেছিলো। অপর ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে জয় পেলেও সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। ইতালিতে অনুষ্ঠিত পরের আসরটিও ভুলে যেতে চাইবে ব্রাজিল। ১৯৩৪ সালে প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে ফিরে আসতে হয় মার্টিম মার্সিও ডি সিলভেইরাদের।

 

২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রাজিল ফুটবল কোথায় ছিল

তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে শেষ বিশ্বকাপে সম্মান ফিরে পায় সেলেসাওরা। ১৯৩৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলে ব্রাজিল।ইতালির বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিলেও লিওনিডাস ডি সিলভার নেতৃত্বে সুইডেনকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের তৃতীয় হয়।

ব্রাজিলে প্রথম ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবার মাত্র ৫৬ বছর পর দেশটিকে বিশ্বকাপের আয়োজকের মর্যাদা দেয় ফিফা। ১৯৫০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের গৌরব অর্জন করে ব্রাজিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বন্ধ থাকার এক যুগ পর ব্রাজিলের মাটিতেই বিশ্বকাপের প্রত্যাবর্তন। যুদ্ধ-ঝঞ্ঝার পর ফিফা চাচ্ছিলো দ্রুতই টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে। অথচ জার্মানি, ইতালি, জাপানের মতো দেশ তখনও দলখকৃত। তাই এসব দেশ ব্রাজিলের টিকেটই পায়নি। সেবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিলো ভারত। তবে ফ্রান্সের সঙ্গে তারাও শেষ পর্যায়ে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।

 

৩। ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস এবং নতুন করে ফুটবলের শহর বলা ইতিহাস

আমেরিকা জয়ী ব্রাজিলকে নিজের মাঠে শিরোপার দাবিদার হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছিলো। সমর্থকদের উৎসাহ উদ্দীপনাও ছিলো ব্যাপক। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই সমর্থকদের প্রত্যাশার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছিলেন জিজিনহো, আদিমিরদের মতো তারকারা। প্রথম রাউন্ডে চমৎকার ফুটবল প্রদর্শনীর পর ফাইনাল রাউন্ডে সুইডেন এবং স্পেনকে যথাক্রমে ৭-১ এবং ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠে ব্রাজিল। প্রথমবারে মতো বিশ্বকাপ ঊঁচিয়ে ধরার দ্বারপ্রান্তে সেলেসাওরা। উরুগুয়ের বিপক্ষে উজ্জীবিত ব্রাজিল। প্রথমার্ধে ফ্রিয়াকার গোলে এগিয়েও যায় ব্রাজিল। তবে শেষ পর্যন্ত মারাকানাকে স্তব্ধ করে দেন সাইফিনহো এবং ঘিগ্গিয়া। সেই মারাকানাজো বা মারাকানা নকআউট- ব্রাজিলের ফুটবলে যা আজও ট্রাজেডি হয়ে আছে। ১৯৫৪ বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্নকে আরও চার বছরের জন্য বিলম্বিত করে দেয়ে। সুইজারল্যান্ডে কোয়ার্টার ফাইনালে হাঙ্গেরির কাছে ৪-২ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়। প্রথম শিরোপার জন্য ২৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ব্রাজিলকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৮ সালে ফুটবলের রাজা হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ব্রাজিলিয়ানরা। বিশ্বের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হয় দেশটির। পেলে, গ্যারিঞ্চার মতো তরকায় ভরা অদম্য ব্রাজিল ইউরোপে সাম্বা দেখিয়ে বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরে ফেরে। স্বাগতিক সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঊচিয়ে ধরার সময় পেলের বয়স ছিলো মাত্র ১৭ বছর। ফাইনাল ম্যাচে দুইটি গোলও করেন তিনি। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়েন ফুটবলের এ কালো মানিক।

এসময় প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে ব্রাজিল। ইউরোপের বাঘা বাঘা দলগুলো এক কথায় পাত্তাই পেতো না গিলমার, মাওরো, ভাভা, জোজিমো, নিলটন সান্তোসদের সামনে। দলের মধ্যমণি হয়ে উঠেন পেলে। প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পরবর্তী চার আসরের মধ্যে তিনটিতেই শিরোপা জেতে। ১৯৬২ সালে ব্রাজিল চিলিতে যায় বলতে গেলে শিরোপাজয়ী ওই দলটাকে নিয়েই। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে, দলের সেরা খেলোয়াড় পেলে দ্বিতীয় ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়ে যায়। সেটা অবশ্য ব্রাজিলের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানো সেলেসাওরা ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখে।প্রত্যাশার পাহাড়সম চাপ, অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির কারণে পরের আসরে হতাশ হতে হয় ব্রাজিলকে। এছাড়া ১৯৬৬ সালের বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকেই বেশিরভাগ খেলোয়ড়কে পাঠিয়েছিলো ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়াকে হারলেও হাঙ্গেরি এবং পর্তুগালের বিপক্ষে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়।

১৯৭০ সালে মেক্সিকোয় পুরো রূপে ফেরে ব্রাজিল। পেলের ক্যারিয়ার তখন তুঙ্গে। যদিও গ্যারিঞ্চার মতো মহারথীরা ততদিনে বিদায় নিয়েছেন ফুটবল থেকে। তবে কার্লো আলবার্তো, রিভেলিনো এবং জার্জিনহোর মতো সহযোদ্ধাদের পেয়ে গেছেন পেলে। ফাইনালে মজবুত ডিফেন্সের ইতালিকে হারতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি তাদের। ৪-১ গোলে জয়ে ব্রাজিলকে তৃতীয় শিরোপার স্বাদ দেন পেলে। তিন বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বিশ্বকাপের সেই ট্রফিটি জলে রিমে ট্রফি একেবারেই দিয়ে দেয়া হয় ব্রাজিলকে। তৈরি করা হয় নতুন ট্রফি। ১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ওই দলটিকে সর্বকালের সেরা একাদশ হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকেই।

ব্রাজিলের স্বর্ণালী যুগে ঝড়ের মতো আবির্ভাব ঘটে নতুন এক ধরণে ফুটবলের। যা পুরো বিশ্বকে ভড়কে দেয়। ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানিতে টোটাল ফুটবলর দর্শন নিয়ে হাজির হয় জন ক্রইফের নেদারল্যান্ডস। এদিকে অবসরে চলে গেছেন পেলে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওয়েস্ট জার্মানি এবং আর্জেন্টিনাকে হারালেও ডাচ টোটাল ফুটবলের কাছে মার খায় ব্রাজিলিয়ান সাম্বা। ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় সেবার। এরইমধ্য দিয়ে শেষ হয় ফুটবলের একটি যুগের।

১৯৭৮ বিশ্বকাপে কোন ম্যাচ না হেরেই বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলকে। টুর্নামেন্টের ফরম্যাট অনুযায়ী, দুই গ্রুপ থেকে শীর্ষ একটি করে দল সরাসরি ফাইনাল খেলার সুযোগ পায়। সমান পয়েন্ট নিয়েও স্বাগতিক আর্জেন্টিনার চেয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিদায় নেন জিকো, রিভেলিনো, অস্কাররা।

এরপরের দশকটাও ব্রাজিলের ছিলো না। জিকো, সক্রেটিস, ফ্যালকাওদের মতো তারকা থাকার পরেও সেমি ফাইনালে ইতালির কাছে ২-৩ গোলে হেরে স্পেন থেকে ফিরে আসতে হয় ব্রাজিলকে।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে ক্যারিকার মতো তারকাকে নিয়েও সফলতা মেলেনি। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে টাইব্রেকারে হেরে যায়।১৯৯০ সালে রোমারিও, ক্যারেকা, বেবেতোর মতো এক ঝাঁক তরকা নিয়েও ব্রাজিলকে ফিরতে হয় খালিহাতে। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেরে বিদায় নিতে হয়। তবে ১৯৯৪ সালে খালিহাতে ফেরেননি রোমারিও, বেবেতোরা। দুই যুগ পর মার্কিন মুলুকে সাম্বার হারানো রূপ দেখে গোটা বিশ্ব। ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে ইতালিকে হারিয়ে চতুর্থ বারের মতো বিশ্বসেরার মুকুট পরে ডুঙ্গার ব্রাজিল। ১৯৯৮ সালেও ফাইনালে উঠে ব্রাজিল। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে সৌভাগ্যও তাদের সহায় ছিলো। রোনালদো, কাফু, কার্লোস, রিভালদোর মতো প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় থাকার পরেও জিদান, অরিদের ফ্রান্সের সঙ্গে পেরে উঠেনি ব্রাজিল। ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে ৩-০ গোলে হেরে বিদায় নেয়।

চার বছর পর এশিয়ার মাটি আবারও কেঁপে উঠে সাম্বায়। রোনালদো, রিভালদোদের সঙ্গে যোগ হয় রোনালদিনহোর মতো তারকারা। বাছাইপর্ব টেনেহিঁচড়ে পার করলেও পুরো টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়ে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে ব্রাজিল। ৮ গোল করে টুর্নামেন্টেসর্বোচ্চ গোলদাতা হন রোনালদো।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *