ইসলামিক কথা

হজ্জ এর গুরুত্ব ও শিক্ষা এবং হজ্জ কি আপনার উপর ফরজ হয়েছে?

হজ্জ কি আপনার উপর ফরয হয়েছে? হজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত

 

হজ্জ কি?

হজ্জ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ সংকল্প করা ইচ্ছা করা বা প্রদক্ষিণ করা। পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনসমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র কাবাঘর ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহে বিশেষ কার্যাদি সম্পাদন করাকে হজ্জ বলে।

হজ্জের ফযীলত 

হজ্জের অসংখ্য ফযিলত রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো হজ্ব পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মুছে দেয়

আবু হুরায়রা (রা) বলেন আমি নবী করীম (ﷺ) বলতে শুনেছি

من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه.

যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভমিষ্ট হয়েছিল। (সহীহ বুখারী হজ্ব অধ্যায় ইফা হাদীস নং ১৪২৮)

হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান হল জান্নাত

আবু হুরাযরা রা হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন

العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة.

এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সমযরে গুনাহর ক্ষতি পূরণ হয়ে যায। আর হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাডা আর কিছুই নয। (সহীহ বুখারী উমরা অধ্যায় ইফা হাদীস নং ১৬৫৫)

নারী বৃদ্ধ দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের জিহাদ হল হজ্ব ও উমরাহ

উম্মুল মুমিনীন আযশো রা হতে বর্ণিত তিনি বলেন

يا رسول الله! نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد؟ قا: لكن أفضل الجهاد حج مبرور.

ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন না। বরং তোমাদের নারীদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্বে মাবরূর। (সহীহ বুখারী হজ্ব অধ্যায় ইফা হাদীস নং ১৪২৭)

হজ্জ জীবনে একবারই ফরজ

সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ মহিলার জন্য জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা ফরজ। বারবার হজ্জ আদায় করা মুস্তাহাব। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন
وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا الرَّبِيعُ بْنُ مُسْلِمٍ الْقُرَشِيُّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ فَحُجُّوا ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ رَجُلٌ أَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَسَكَتَ حَتَّى قَالَهَا ثَلاَثًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ – ثُمَّ قَالَ – ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلاَفِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَدَعُوهُ ‏”‏ ‏.‏
হে মানবমন্ডলী আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। কাজেই তোমরা হজ্জ করবে। তখণ এক ব্যক্তি বললো হে আল্লাহর রাসূল। প্রতি বছর কি হজ্জ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তাহলে তা (প্রতি বছরের জনেই) ফরয হয়ে যেত। কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হত না। তিনি আরো বললেন যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে কিছু বলিনি সে বিষয় সেরূপ থাকতে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা বেশী প্রশ্ন করার ও তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে। কাজেই আমি যখন তোমাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ দেই তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে আর যখন কোন বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ করবে। (সহীহ মুসলিম হজ্জ অধ্যায় হাদিস নং- ৩১২৩ ইফা)

হজ্জ দ্রত সম্পাদন করা উচিত 

অনেকে মনে করেন ছেলে মেয়েদের বিবাহ শাদী এখনও হয়নি অথবা হজ্জ তো বৃদ্ধ বয়সের বা শেষ জীবনের ইবাদত। হজ্জের পর আর কোন সাংসারিক কাজ করা যায় না। কিংবা অল্প বয়সে হজ্জ করলে মান রাখবে কিভাবে? চাকরীরর মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি ইত্যাদি। হজ্জ আদায়ের ক্ষেত্রে এধরনের কোন ওজরই শরীয়ত সমর্থন করে না। বরং দ্রুত হজ্জ সম্পাদনের জন্য হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে।

ইবনে আববাস রা বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন

تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له.

ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। (মুসনাদে আহমদ হাদীস ২৮৬৭ সুনানে কুবরা বাযহাকী ৪/৩৪০)

হজ্জ না করার পরিণাম

আবু সাঈদ খুদরী রা হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন

يقول الله عز وجل : إن عبدا صححت له جسمه، ووسعت عليه في المعيشة تمضي عليه خمسة أعوام لا يفد إلى لمحروم.

আল্লাহ তাআলা বলেন আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম তার রিযিক ও আয উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওযার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য বঞ্চিত। (সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৩৬৯৫ তবারানী হাদীস ৪৯০)

হজ্ব করার শক্তি সামর্থ্য ও অর্থবিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ্ব করে না তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে।

আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلاَ عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا وَذَلِكَ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ فِي كِتَابِهِ ‏:‏ ‏(‏وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً ‏)‏

কেউ যদি এতটুকু পাথেয় ও সফর সংক্রান্ত্রের অধিকারী হয় যা তাকে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে এরপরও যদি সে হজ্জ পালন না করে তবে সে ইয়াহুদী হয়ে মরল বা নাসারা হয়ে মরল এই বিষয়ে (আল্লাহর) কোন পরওয়া নেই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র কিতাবে ইরশাদ করেন

(وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً)মানুষের মাঝে যার সেখানে যাবার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য (সূরা আলে ইমরান ৯৭) (তিরমিযী হজ্জ অধ্যায় হাদিস নং ৮১২)

হজ্জ কখন কার উপর ফরয 

নিন্মলিখিত শর্তগুলো বিদ্যমান থাকলে হজ্জ ফরয হবে।

১ মুসলমান হওয়া সুতরাং অমুসলিমের ওপর হজ্জ ফরয নয়

২ স্বাধীন হওয়া সুতরাং গোলামের ওপর হজ্জ ফরয নয়।

৩ বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সুতরাং অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশুর ওপর হজ্জ ফরয নয়। তবে তাদেরকে হজ্জ করালে হজ্জ শুদ্ধ হবে। কিন্তু তার হজ্জের সাওয়াব পাবে তার অভিভাবক যিনি তাকে হজ্জ করিয়েছেন।

৪ জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া সুতরাং পাগলের ওপর হজ্জ ফরয নয়।

৫ মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া সুতরাং অসুস্থ ও রুগ্ন ব্যক্তির ওপর হজ্জ ফরয নয়।

৬ হজ্জের রাস্তা নিরাপদ হওয়া। অর্থাৎ যাতায়াতে কোন রকম বাধাগ্রস্থ না হওয়া তবে যদি কোন দেশের উপর অবরোধ অরোপিত থাকে বা যুদ্ধবিগ্রহ চলতে থাকে অথবা যানবাহন ধ্বংস করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের উপর হজ্জ ফরয নয়।

৭ দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হওয়া সুতরাং দৃষ্টিশক্তিহীন বা অন্ধ ব্যক্তির ওপর হজ্জ ফরয নয়।

৮ মহিলাদের সাথে স্বামী বা অন্য কোনো মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা ও ইদ্দত মুক্ত হওয়া।

৯ কোন ব্যক্তির প্রকৃত প্রয়োজন ও ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে এ পরিমাণ অর্থ থাকা যা তার পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত হজ্জে রওয়ানা থেকে শুরু করে বাড়ী ফেরা পর্যন্ত ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা থাকা।

হজ্জ্বের প্রস্ততি 

১ মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি

২ আর্থিক প্রস্তুতি (যেহেতু হালাল উপার্জন যে কোন আমল কবুলের শর্ত তাই হজ্জের ব্যয় নির্বাহের জন্য হালাল অর্থের সংস্থান করা)

৩ হজ্জ সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল জানা ; এই সংক্রান্ত বই-পত্র পড়া লেকচার শুনা

৪ ঋণমুক্ত হওয়া

৫ পারিবারিক ও বৈষয়িক বিষয়ে উপযুক্ত দায়িত্ব প্রদান

(যাতে হজ্জে যাওয়ার পর পারিবারিক কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে না হয় তা এমন সব বিষয় নিস্পত্তি করে যাওয়া কিংবা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাওয়া)

৬ পরিবারের লোকদের ওছিয়ত করা

৭ উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো মীমাংসা করা

হজ্জ কবুলের পূর্ব শর্ত

১ ইখলাছ
২ হালাল উপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা হজ্জ করা
৩ হজ্জের ফরয ওয়াজীবগুলো যথাযথভাবে আদায় করা
৪ হজ্জের নিষিদ্ধ ও মাকরুহ কাজগুলো বর্জন করা
৫ সকল প্রকার শিরক থেকে মুক্ত থাকা কারণ শিরক সকল আমল বিনষ্ট করে দেয়।

হজ্জের শিক্ষা 

হজ্জ আল্লাহর অনুপম আনুগত্যের মহড়া

হজ্জের সব কর্মকান্ডেই সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে ইসলামের প্রতি প্রবল আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ। যা মুসলিম মানসকে করে সমৃদ্ধ চেতনাকে করে অনুপ্রাণিত এবং আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যে পরিচালিত করে দৈনন্দিন জীবনকে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন

وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ

তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ্জ ওমরা পূর্ণ করো। (সূরা বাকারা ১৯৬)।

হজ্জের পবিত্র ভূমিতে এসেই ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ) তাদের নিজেদের এবং অনাগত প্রজন্মের জন্য অনুগত মুসলিম হওয়ার দোয়া করেছিলেন এভাবে-

رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ .

হে আমাদের রব আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা বাক্বারা ২ ১২৮)

বিশ্বভ্রাত্বত্ববোধের শিক্ষা 

সব সংকীর্ণতা সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন একটি ইবাদত হজ্জ। এখানে নেই কোনো বর্ণবৈষম্য বা বর্ণবাদী কার্জকলাপ। সাদা কালো ধনী গরিব আমির ফকির সবার জন্য একই পোশাক। থাকার জায়গাও এক। কার কত ক্ষমতা কার কত সম্পদ এর কোনো প্রতিযোগিতার স্থান এটি নয় বরং কে কত বেশি আল্লাহর আনুগত্য ও গোলামি করতে পারে তারই যেন প্রতিযোগিতা চলে। সবাই তার অক্ষমতা দীনতা-হীনতা তুলে ধরতে ব্যস্ত। কারও দিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। সব মুসলমান এক জাতি একই মায়ের সহোদর এটাই বারবার প্রমাণিত হয়।

কুরবানীর মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তিকে বিসর্জন 

হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা এবং কুরবানির ইত্যাদি সমস্ত কিছুই নবী হযরত ইব্রাহীম (আ) এর পবিত্র স্মৃতির স্মারক। প্রিয়তমের জন্য অন্য সবকিছু বিসর্জন দেওয়াই কোরবানির মূল প্রতিপাদ্য। পশু কোরবানি একটি প্রতীক মাত্র। আল্লাহ তায়লা বলেন

لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ

কোরবানির পশুর মাংস এবং রক্ত কোনোটাই কখনো আল্লাহর নিকট পৌছাঁয় না কিন্তু পৌঁছায় তোমাদের পক্ষ হতে তাকওয়া [সূরা হাজ্জ ২২ ৩৭]।

নিজের মনের মধ্যে যে পশুবৃত্তি বিদ্যমান রয়েছে তাকে পরাভূত ও পরাজিত করাই হলো পশু জবাই বা পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা। এর মাধ্যমে আপন মনের সব কুপ্রবৃত্তিত্তকে চিরতরে বিদায় করা এবং নিজ চরিত্রের সব কুস্বভাব পরিত্যাগ করাই আসল উদ্দেশ্য।

হজ্বের বৈশিষ্ট্য 

ক) লোক দেখানো ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতামুক্ত হজ্জ

খ) বৈধ উপার্জন দ্বারা হজ্জ পালন করা

গ) ধৈর্য তাকওয়া ও সদাচারে অনুশীলন হজ্জ পরবর্তী সময়ও ধরে রাখা

ঘ) দুনিয়া বিমুখতা ও আখেরাতপ্রীতি

ঙ) হজ্জের আগের অবস্থা থেকে পরের অবস্থার উন্নতি হওয়া

চ) আমল (হজ্জ) কবুল হওয়ার বিষয়ে আল্লাহর কাছে ভীত থাকা।

এক নজরে হজ্ব ও ওমরাহ্ (হজ্জের নিয়মকানুন)

হজ্জের ফরজ ৩টি 

১। ইহরাম বাধা ২। উকুফে আরাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত

হজ্জের ওয়াজিব ৬টি 

১। সাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।

২। অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।

৩। মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সম হকে পাথর নিপে করা।

৪। হজ্জে তামাত্তু ও ক্বিরান কারীগণ হজ্জ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।

৫। ইহরাম খোলার পর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।

৬। মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।

এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।

তালবিয়া 

লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক লাব্বাঈক লা শারীকা লাকা লাব্বাঈক ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক লা শারীকালাক।। 

অর্থ আমি হাজির হে আল্লাহ আমি উপস্থিত আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *