জমির কাগজপত্র । জমি কিনতে কি কি কাগজ লাগে?

আপনাদের যাদের জমি বা Land রয়েছে আাজকের বিষয়টি তাদের জানা অতিব জরুরী। জমির মালিকানা দাবি করতে অবশ্যই কিছু কাগজপত্র আপনার থাকতে হবে। আমরা আজকে আলোচনা করবো জমির কি কি কাগজ থাকতে হয় বা জমির কি কি কাগজ সংরক্ষণ করতে হয়। তবে আসুন আমরা জেনে নেই আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।

আলোচ্য বিষয়ঃ

  1. জমি কিনতে কি কি কাগজপত্র লাগে
  2. জমির কোন কাগজপত্রগুলো সংরক্ষণ করতে হবে
  3. কেন জমির কাগজপত্র প্রয়োজন
  4. কিভাবে জমির কাগজপত্র সংরক্ষণ করবো
  5. খতিয়ান কি? কেন খতিয়ান করা হয়

বেশির ভাগ গ্রামের সহজ সরল মানুষ যাদের জমি আছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্রই তাদের কাছে নেই। এজন্য জমি ক্রয়-বিক্রয়ে তারা হরহামেশা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হয়। তখন কাগজপত্রের জন্য তাদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়। তাই আমাদের আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে হবে। জমি দখলের শাস্তি ২০২২ । সম্পত্তি বেদখল হলে আপনি কি করবেন?

আপনার জমির কি কি কাগজপত্র থাকতে হবে

দলিলঃ একটি জমির প্রধান/অন্যতম উপাদান হচ্ছে দলিল। আপনার জমির মূল ডকুমেন্টস হল এই দলিল। সাধারণত দলিল বলেই জমির মালিকানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দলিল আপনার নামে বা আপনার দাদার নামে বা আপনার বাবার নামে থাকতে পারে। আবার অনেক সময় দলিল নাও থাকতে পারে। শুধুমাত্র এস এ রেকর্ডভূক্ত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে এস এ রেকর্ডই দলিল হিসেবে মানা হয়। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার জমির মূলদলিল সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় এস এ রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। তবে অবশ্যই সাবরেজিস্টার অফিস থেকে আপনার দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করবেন।

খতিয়ানঃ খতিয়ান হচ্ছে সরকারী খাজনা আদায়ের মাধ্যম। এই খতিয়ানের মাধ্যমেই খাজনা আদায় করা হয়। জমির খতিয়ানে জমির প্রকৃত মালিকের নাম, জমির পরিমাণ, জমির প্রকৃতি বা ধরণ ও জমি সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য দেয়া থাকে। খতিয়ান সাধারণত ২ প্রকারঃ যথাঃ জরিপ খতিয়ান ও নামজারি খতিয়ান। আপনার জমির খতিয়ান অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। মৌজাভিত্তিক জমির বিভিন্ন খতিয়ান রয়েছে। ই নামজারি ফি ২০২২ । জমি খারিজ করার জন্য কত টাকা পেমেন্ট করতে হয়?

মৌজাভিত্তিক খতিয়ানগুলো হলঃ সিএস, এসএ, আরএস, বিএস।

সি এস খতিয়ান : ১৯১০-১৯২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিররণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত।

এস এ খতিয়ান : ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। তৎপর সরকারি জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা এসএ খতিয়ান নামে পরিচিত। কোনো অঞ্চলে এ খতিয়ান আর এস খতিয়ান নামেও পরিচিত। বাংলা ১৩৬২ সালে এই খতিয়ান প্রস্তুত হয় বলে বেশির ভাগ মানুষের কাছে এসএ খতিয়ান ৬২র খতিয়ান নামেও পরিচিত। জমি ক্রয়ের বিস্তারিত নিয়মনীতি: বিপদে না পড়তে চাইলে পড়ুন

আর এস খতিয়ান : একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তা আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। দেখা যায় যে, এসএ জরিপের আলোকে প্রস্তুতকৃত খতিয়ান প্রস্তুতের সময় জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে তদন্ত করেনি। তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। ওই ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই খতিয়ান আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। সারাদেশে এখন পর্যন্ত তা সমাপ্ত না হলেও অনেক জেলাতেই আরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি আমিনরা মাঠে গিয়ে সরেজমিনে জমি মাপামাপি করে এই খতিয়ান প্রস্তুত করেন বলে তাতে ভুলত্রুটি কম লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এই খতিয়ান বি এস খতিয়ান নামেও পরিচিত।

বি এস খতিয়ানঃ সর্বশেষ এই জরিপ ১৯৯০ সালে পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।

ম্যাপঃ প্রতিটি জমির জন্যই ম্যাপ রয়েছে। এলাকা ভিত্তিক এই ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের ভূমি রেকর্ড করা হয় এবং প্রতিটি রেকর্ডভূক্ত জমির এলাকা ভিত্তিক ম্যাপ রয়েছে। এই ম্যাপের মাধ্যমে আপনার জমির অবস্থান, খতিয়ান নং ও পরিমাণ জানতে পারবেন। যেকোন জমি মাপার ক্ষেত্রে এই ম্যাপ অবশ্যই লাগে। তাই জমির একটি ম্যাপ সংরক্ষন করে রাখবেন।

আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম জমির কি কি কাগজপত্র লাগে। জমির কোন কোন কাগজপত্র আমরা সংরক্ষণ করবো। জমির মূল দলিল যা আপনার মালিকানা নির্ধারন করে। খতিয়ান আপনার খাজনার রশিদ। আর ম্যাপ আপনার জমির অবস্থান ও সীমানা নির্ধারণ করে। তাই আপনার জমির মূল দলিল, খতিয়ান ও ম্যাপ সংরক্ষণ করতে হবে।

জমির বায়না করার নিয়ম ২০২৩ । বায়না করার সময় ক্রেতার করনীয় কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *