মুসলিম ফারায়েজ হিসাব ২০২৩ । মুসলিম আইনে সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম জেনে নিন
মুসলিম আইনে কীভাবে সম্পত্তি বন্টন করবেন- ইসলামে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। মুসলিম আইনে পরিস্কার ভাবে বলা আছে মৃত ব্যক্তির সম্পদ তাঁর উত্তরাধিকারিরা কে কতটুকু সম্পত্তির অধিকারী হবেন। একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর এসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরই মৃত ব্যক্তির সম্পদ ভাগ করা যাবে। জমি ক্রয়ের বিস্তারিত নিয়মনীতি: বিপদে না পড়তে চাইলে পড়ুন
আলোচ্য সূচী
- সম্পত্তি বন্টনের আগে করণীয়
- উত্তোরাধিকারী কারা হবেন
- সম্পত্তি বন্টনের শর্তসমূহ
- উত্তরাধিকারীরা কে কতটুকু পাবেন
- মুসলিম আইনে সম্পত্তি বন্টন
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের আগে করণীয়
মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ বন্টনের আগে নিম্নের কাজগুলো করতে হবেঃ
- যদি মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকে তবে তাঁর সম্পত্তি থেকে প্রথমেই দাফন কার্য সম্পাদন করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির কোন প্রকার ঋণ থাকলে তাঁর সম্পত্তি থেকে তা পরিশোধ করা
- মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা বাকী থাকলে তা পরিশোধ করা
- মৃত ব্যক্তি কোন সম্পত্তি দান বা হেবা করে গেছে কিনা
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কারা হবেন
মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা:
১. শেয়ারার বা নির্দিষ্টাংশ ভোগীঃ যে সমস্ত ব্যক্তিদের অংশ কুরআনে সুস্পষ্টভাবে আছে তাদেরকে শেয়ারার বলে। সম্পত্তি সর্বপ্রথম এদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ১২ ধরনের ওয়ারিশ শেয়ারার আছে। যেমনঃ
ক) স্বামী, খ) স্ত্রী, গ) পিতা, ঘ) মাতা, ঙ) পুত্র , চ) কন্যা, ছ) দাদা, জ) নানী, দাদী, ঝ) আপন বোন, ঞ) সৎ বোন, ট) বৈপিত্রীয় বোন, ঠ) বৈপিত্রীয় ভাই।
এদের মধ্যে স্বামী বা স্ত্রী, পিতা-মাতা, পুত্র ও কন্যা সম্পত্তির দাবিদার হিসেবে কখনও বঞ্চিত হবেনা। অন্যান্য যারা আছে তারা সম্পত্তির অংশ নাও পেতে পারেন। জমি ক্রয়কালে ক্রেতাকে যা জানতে হবে।
২. অ্যাগনেটিক হিয়ার বা আসাবা/অবশিষ্টভোগী: এরা মৃত ব্যক্তির ঐ সমস্ত ওয়ারিশ, যাদের সাথে মৃত ব্যক্তির সম্পর্কের মাধ্যম হল পুরুষ, কোন মহিলা নয়। যেমন ভাই বাবার মাধ্যমে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ অবশিষ্টাংশভোগী পুরুষদের সম্পত্তি প্রদানের পর যদি সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে, তাহলে আসাবারা সম্পত্তি পাবে। অন্যথায় নয়। ছেলে ও মেয়ে একসাথে থাকলে তারা উভয়েই অবশিষ্টভোগী হয়। তাদের মাঝে বন্টনের অনুপাত ছেলে : মেয়ে= ২:১ অনুপাতে হয়।
৩. দূরবর্তী আত্মীয়: মৃত ব্যক্তির যদি শেয়ারার বা অ্যাগনেটিক হিয়ার না থাকে তাহলে দূরবর্তী আত্মীয়রা তার সম্পত্তি পাবে।
সম্পত্তি বন্টনের জন্য তিনটি পূর্ব শর্ত আছে। তা হল:
ক. সম্পত্তির মালিককে মৃত হতে হবে। জীবিত ব্যক্তির সম্পত্তিতে কোন উত্তরাধিকার নেই।
খ. মৃত ব্যক্তির কাছের বা দূরের জীবিত নিকটাত্মীয়/উত্তরাধিকারী থাকতে হবে।
গ. মৃত ব্যক্তিকে সম্পত্তি রেখে যেতে হবে।
মুসলিম আইনে সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম, কে কতটুকু পাবে
ওয়ারিশগণের মধ্যে সবাই একই হারে বা অনুপাতে সম্পত্তির ভাগ পাবেনা। এক্ষেত্রে মুসলিম আইনে যে বিধান রয়েছে সেই অনুপাতে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি বন্টন করতে হবে। যেমনঃ
১. স্বামীর অংশ : স্বামী ২ ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্বামী কখনো তাঁর মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে।
২. স্ত্রীর অংশ : স্ত্রীও ২ ভাবে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে থাকে। বিধবা স্ত্রী কোন ভাবে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা তাঁদের পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে। যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে তবে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও সবাই মিলে ১/৪ অংশ সমান ভাগেই পাবে। Dolil Form 2022 । দলিল লেখার নমুনা
৩. বাবার অংশ : বাবা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ৩ ভাবে হয়ে থাকে। যদি মৃত সন্তানের পুত্র, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যতই নিচের হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত সন্তানের পিতা পাবেন সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ। এই ক্ষেত্রে কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট যে সম্পত্তি থাকবে তাও পিতা পাবেন। আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র-কন্যা বা পুত্রের সন্তান কিছুই না থাকে তাবে বাকী অংশীদারদের তাঁদের অংশ অনুযায়ী দেয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকবে তার সবটুকুই বাবা পাবেন।
তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান ও বাবা কেউ না থাকলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর জীবিত ভাই বা ভাইরা পাবে। আবার ভাই না থাকলে তাঁর ভাইয়ের সন্তানরা পাবে। দলিল নমুনা ফরম ২০২২ । সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল Word Format সংগ্রহ করুন।
৪. মায়ের অংশ : মা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি পেয়ে ৩ ভাবে পেয়ে থাকে। – মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নেরই হোক থাকলে অথবা যদি মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইবোন থাকলে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন। ভূমি রেজিস্ট্রেশন ও জমি সংক্রান্ত আইনের বই-PDF সহ।
৫. পুত্র সন্তানের অংশ : মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি পায়। যে ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ছেলে বা ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাতা-পিতা ও স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরাই পাবে। ই নামজারি । e-Mutation Application process by online
৬. কন্যা সন্তানের অংশ : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতা পিতার সম্পত্তি পেতে পারে। একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ বা (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমানভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ বা (২/৩) অংশ পাবে। যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। যাহোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না।
এভাবেই মুসলিম আইনে ওয়ারিশগণদের মাঝে সম্পত্তি বন্টিত হয়।