রাতে ঘুম না হলে করনীয় ২০২৩ । অনিদ্রার কারণ ও এর সমাধান দেখে নিন
আমরা অনেকেই অনিদ্রায় ভুগি। এর ফলে দিনের বেলায় হাই তুলতে থাকি, কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়, সারাদিন মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। আজকের এই আলোচনায় অনিদ্রার কারণ এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে ।
চা,কফি, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন-
কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চা, কফি, কোমল পানীয় আর এনার্জি ড্রিঙ্কস। কারণ এগুলোতে আছে ক্যাফেইন। আচ্ছা ক্যাফেইন কী করে? ঘুম আসতে দেয় না, ঘুম আসলেও গভীর হতে দেয় না। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে এগুলো না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে ঘুমের ৬ ঘণ্টা আগে এগুলো খাওয়া যাবে না।
গরম দুধ পান করুন-
যদি আপনার হজম জনিত সমস্যা না থাকে তাহলে ঘুমের কাছাকাছি সময়ে গরম দুধ পান করতে পারেন। কারণ দুধে আছে ট্রিপ্টোফ্যান। গবেষণায় দেখা গেছে এটা ভালো এবং লম্বা সময় ধরে ঘুম হতে সাহায্য করে।
১ ঘন্টা Relax করুন-
অনিদ্রার রোগীদের চিকিৎসায় আরেকটা পদ্ধতি শেখানো হয়, যেটা আপনারও উপকারে আসতে পারে। তা হল ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ ঘণ্টা Relax করা। দিনের ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তা গুলো থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে আনতে এই সময়টা ব্যবহার করতে বলা হয়।এই এক ঘণ্টায় যেসব কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়, সেগুলো হল- বই পড়া, ডাইরি লেখা, গরম পানি দিয়ে গোসল করা, মনে প্রশান্তি আনে এমন শ্রুতিমধুর কিছু শোনা। যেমন- ধর্ম গ্রন্থ বা কবিতা আবৃতি, গান। যেটা আপনার জন্য কার্যকর হয়। যেসব কাজ করতে মানা করা হয় সেগুলো হল- ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। কারণ এই যন্ত্রগুলোর স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
ঘুম না আসলে শুধু শুধু শুয়ে থাকবেন না-
যাদের বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম না আসার সমস্যা আছে, তাদের জন্য চিকিৎসক দের বেশ কয়েকটা নির্দেশনা আছে। তার মধ্যে একটা হল ঘুম না আসলে জোর করে বিছানায় শুয়ে না থাকা। যদি ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় ধরে শুয়ে থেকে ঘুম না আসে, তাহলে বিছানা থেকে উঠে পাশের রুমে যাবেন। রিলাক্স লাগে এমন কিছু কাজ করবেন যতক্ষণ ঘুম না আসে। তারপর ঘুম আসলেই কেবল বিছানায় ফেরত যাবেন। পাশের রুমে কী কী করতে পারেন? হাল্কা আলোতে বই পড়তে পারেন, গান শুনতে পারেন। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না, কারণ ফোনের উজ্জ্বল আলো ঘুম আসতে বাধা দিতে পারে।
বিছানাকে শুধুমাএ ঘুম এর জন্য নিদিষ্ট করুন-
অনিদ্রার চিকিৎসা পরামর্শের আরেকটি নির্দেশনা হল বিছানা শুধু ঘুমের জন্য ব্যবহার করা। বিছানায় অন্য কাজ না করা। আমরা অনেকেই বিছানায় খাবার খাই, পড়াশুনা করি, মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করি। বাসায় থাকলে দিনের অনেকটা সময় বিছানায় কাটাই। ঘুমের সমস্যা কমাতে চাইলে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। বিছানাতে শুধু মাএ তখনই যাবেন যখন আপনার ঘুমের সময় হবে।
ঘুমের আগে ভাড়ি খাবার পরিহার করুন-
ঘুমানোর আগে আগে অনেক বেশি করে খেলে কারো কারো ঘুম ভালো নাও হতে পারে। যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঘুমানোর ৩-৪ ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার সেরে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
ধূমপান কে না বলুন –
ঘুমে অনিয়ম দেখা দিলে ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ নিকোটিন একটি উত্তেজক পদার্থ। যারা ধূমপান করে তারা সহজে ঘুমাতে পারে না, ঘন ঘন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে, এবং প্রায়ই তাদের ঘুম ব্যাহত হয়। একদম সম্পূর্ণ ভাবে পরিহার করা সম্ভব না হলে অন্তত ঘুমানোর ৬ ঘণ্টা আগে ধূমপান থেকে বিরত থাকবেন।
নিয়মিত শরীর চর্চা করুন-
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। আপনি যদি সারাদিন বসে বসে কাজ করেন তাহলে আপনার কোন শারীরিক পরিশ্রম হচ্ছে না। এই কারণে চিকিৎসকরা নিয়মিত শরীর চর্চা করার পরমর্শ দেন। যাকে করে আপনার শরীর ক্লান্তি অনুভব করে। শরীর সচল রাখলে রাতে ঘুম ভালো হয়। তবে ঘুমানোর ৩ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম পরিহার করতে হবে।
নিদিষ্ট সময় ঘুমাতে যান-
শরীরকে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো আর ঘুম থেকে জেগে ওঠা প্রয়োজন। যেমন- আপনি যদি ঠিক করেন যে প্রতিদিন রাত ১১টায় ঘুমাতে যাবেন আর সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠবেন, তাহলে এই রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সময়ে আপনার শরীর একটা ভালো ঘুম দিতে অভ্যস্ত হয়ে পরবে। জেগে ওঠার সময়টা প্রতিদিন একই রাখার চেষ্টা করবেন। শুক্রবারে বা ছুটির দিনে আমরা একটু দেরি করে উঠতে পছন্দ করি। এটা পরিহার করতে হবে।
দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম পরিহার করুন-
অনিদ্রার চিকিৎসায় দিনের বেলায় ঘুমাতে নিরুৎসাহিত করা হয়। দিনের বেলা যদি ঘুমাতেই হয়, তাহলে দুপুরে আগে আগে ঘুমিয়ে নিবেন, তাও ২০-৪০ মিনিটের বেশি নয়।
এখানে অনিদ্রার জন্য দায়ী ১০ টি কারণ এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একেকজনের জন্য একেটা হতে পারে। আমি যে ১০ টি কারণ ও তার সমাধান বলেছি তার সবগুলো আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে না। তবে যেটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুধু সেটাই আপনি পালন করবেন। যদি এসব ব্যবস্থা নিয়েও ঘুমের সমস্যার সমাধান না হয়, ঘুমের অভাব নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তবে ডাক্তারের সহায়তা নিবেন। নিজে নিজে ঘুমের ঔষধ খাবেন না।