আকিদা কী? এবং ইসলামি ভাবে আকিদার গুরুত্ব কতটুকু?
ইসলামি ভাবে আকিদার গুরুত্ব
আকিদা বলতে কী বুঝায়?
আকিদা শব্দের অর্থ হল,মানুষ যা বিশ্বাস করে বা মেনে চলে। আকিদা ও ঈমান একই অর্থবোধক। অর্থাৎ বিশ্বাসের অপর নাম আকিদা। সুতরাং আকিদার গুরুত্ব কতটুকু তা সহজে অনুমেয়।
আল্লাহ বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ- مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ
এবং আমি জিন ও মানুষ জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট কোন জীবিকা চাইনা এবং চাইনা যে তারা আমাকে খাদ্য দান করুক। [সূরা যারিয়াত- ৫৬-৫৭]
তিনি আরও বলেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ
এবং তোমার প্রতিপালক চূড়ান্ত ফায়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না। [সূরা ইসরা- ২৩]
তিনি আরও বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
এবং আমি প্রত্যেক জাতির নিকট এ মর্মে রাসূল পাঠিয়েছে যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (তথা আল্লাহ ছাড়া যে সকল জিনিসের ইবাদত করা হয়) সেগুলো থেকে দূরে থাক। (সূরা আন নাহল- ৩৬)
উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, সমস্ত নবী-রাসূল এ আকিদার আহবান নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। সমস্ত আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল এ আকিদারই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য এবং এর বিপরীত সকল বাতিল বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণাকে অপনোদন করার জন্য।
সৃষ্টি জগতের মধ্যে যাদের উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য হয় তাদের প্রত্যেককে এই আকিদা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সুতরাং যে বিষয়টির এত বেশি গুরুত্ব ও মর্যাদা সেটি সব কিছুর আগে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি দরকার এ ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করার। কারণ,এর উপরই মানব জাতির দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য ও সাফল্য নির্ভর করছে। আল্লাহ বলেন,
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا
সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল সে যেন শক্ত হাতল মজবুত ভাবে ধারণ করল যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়। [সূরা বাকারা- ২৫৬]
একথার মানে হল, যে এ আকিদা হতে হাত গুটিয়ে নিবে সে অলীক-কল্পনা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। কারণ, সঠিক পথ ছেড়ে দিলে সেখানে গোমরাহি ছাড়া অন্যকিছু থাকতে পারে না।
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ
তা এ জন্যে যে, আল্লাহই তো প্রকৃত সত্য আর তাঁকে ছাড়া ওরা যা কিছু আহবান করে তা ভ্রান্ত। (সূরা হজ্জ: ৬৩)
আকিদার গুরুত্ব কতটুকু?
ঈমান-আকিদা শুদ্ধ না হলে নামায-রোযা সহ কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হবে না। যেমন কেউ যদি শিরকি আকিদা পোষণ করে তাহলে যত ইবাদতই করুক না কেন সব কিছুই বিফলে যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যদি শিরক করো তবে তোমার সকল আমল নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবে। [সূরা যুমার- ৬৫]
ঈমান, ইখলাস ও রাসুল সা. এর অনুসরণ (যেগুলো আকিদার মূল ভিত্তি) এর ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকবে আখিরাতে সকল নেক কাজ ধূলিকণার মত অর্থহীন হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُورًا
আমি তাদের কৃতকর্মের নিকট আগমন করে সেগুলোকে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব। (সূরা ফুরকান ২৫)
সঠিক আকিদা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের আবশ্যকতা-
জেনে রাখুন, (আল্লাহ আমাকে এবং আপনারকে তাওফিক দান করুন) ইসলামী আকিদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। আকিদা বলতে কী বুঝায়, আকিদার উপর আর কী কী জিনস নির্ভর করে, বিপরীত আকিদাগুলো কী কী, কী কারণে আকিদা নষ্ট হয় বা তাতে কমতি সৃষ্টি হয় যেমন- বড় শিরক, ছোট শিরক ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিটি মুসলিমের জানা বা শিক্ষা অর্জন করা অপরিহার্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ
অতএব, জেনে রাখ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নাই। এবং তোমার গুনাহর জন্য তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর
ইমাম বুখারি রহ. সহীহ বুখারিতে একটি অধ্যায়ের শিরনাম রচনা করেছেন এভাবে-
بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ