ট্রিকস এন্ড টিপস

গরমে শিশুকে সুস্থ রাখার কিছু টিপস ২০২৩ । শিশুর প্রতি যে যত্নগুলো নেয়া জরুরি

গরমে শিশুকে সুস্থ রাখার কিছু টিপস ২০২৩।

গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড গরমে  নানা রোগে আক্রান্ত হয়। ঋতু পরিবর্তনের কারণে  এবং প্রচন্ড গরমের কারণে  শিশুরা ঠান্ডা, জ্বর, ডায়রিয়া, চিকেন পক্স এমন অনেক রোগে আক্রান্ত হয়। শিশুদের রোগ থেকে কিভাবে  সুস্থ রাখবেন, সেসব ব্যাপারে আজকে কিছু পরামর্শ ও টিপস নিয়ে আলোচনা করব

জলবসন্ত বা চিকেন পক্স

এ সময়টায় শিশুদের জলবসন্ত হয়ে থাকে। এটা সাধারণত ১-৫ বছরের শিশুদের বেশি হয়। তবে চিকেন পক্সের টিকা নেয়া থাকলে এ রোগটি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। এ অসুখের সময় শিশুর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তাকে নরম সুতি কাপড় পরাতে হবে। তরল বা নরম জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে। এর সঙ্গে অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।

চামড়ার র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি

শিশুদের ক্ষেত্রে এ সম্যাটা বেশি দেখা যায়। এটা সাধারণত ঘামাচি বা চামড়ার ওপরে লাল দানার মতো ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। এ র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি চুলকানোর কারণে শিশুকে অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল করিয়ে পরিষ্কার জামা পরাতে হবে। ফুসকুড়ির জায়গাগুলোয় বেবি পাউডার লাগাতে পারেন।এতে চুলকানি কিছুটা কমে যাবে। প্রতিবার কাপড় বদলানোর সময় শিশুকে নরম ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে পাউডার লাগিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় ডায়াপায়ের কারণেও হতে পারে তাই খেয়াল রাখতে হবে, ভেজা ডায়াপার যেন শিশুর গায়ে বেশিক্ষণ না থাকে। ডায়াপার নষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে নতুন ডায়াপার পরিয়ে দিন। তবে গরমের সময় বেশিক্ষণ ডায়াপার না পরিয়ে রাখাই ভালো। অনেক সময় র‌্যাশ বেশি হয়ে গেলে ঘা হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

পেট খারাপ

গরমের সময় সাধারণত বেশি হয়ে থাকে যা তা হচ্ছে পেট খারাপ। শিশুর পেট খারাপ হলে তাকে ঘন ঘন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে পানি অথবা ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। একইসঙ্গে তাকে তরল খাবারও দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর পায়খানা স্বাভাবিক না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এ নিয়ম মেনে চলতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুর পানিশূন্যতা না হয় এবং তার প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া শিশুর পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত যায় তবে অবহেলা না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ছয় মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এ সময় কোনো অবস্থায়ই মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। সেই সঙ্গে পানি ও অন্যান্য খাবারও দিতে হবে।

ঠান্ডার সমস্যা

গরমে শিশুদের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডার সমস্যাটাও বেশি হতে দেখা যায়। গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই শিশু ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর মুছে দিয়ে কাপড় বদলে দিতে হবে। গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং তাকে সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এ সময় ঠাণ্ডা লেগে  শিশুর মামস হতে পারে। মামস অনেক সময় অল্পদিনে সেরে যায়। কিন্তু বেশিদিন গড়ালে শিশুকে এমএমআর ইঞ্জাকশন দেয়া হয়। এছাড়া বিশেষজ্ঞের পরমার্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে।

গ্রীষ্মকালে  শিশুকে সুস্থ রাখতে যা যা পদক্ষেপ:

এছাড়া এ গরমে আপনার আদরের ছোট্টমণির চুলের দিকেও নজর দিতে হবে। গরমে চুলের ঘোড়া ঘেমে যায়, সঙ্গে ধুলাবালির আক্রমণ তো রয়েছেই। তাই রোগপ্রতিরোধে প্রথমেই শিশুদের চুলের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। অনেক সময় অতিরিক্ত গরমে চুলের ত্বকে খুশকি বা ঘামাচি বের হয়। তাই গরমের শুরুতেই শিশুর চুল ছেঁটে ছোট করে দিতে হবে।এতে চুলের গোড়া ঘেমে গেলেও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এক বছর বা তার কম বয়সে শিশুদের গরমের সময় মাথা অবশ্যই ন্যাড়া করে দিতে হবে। আর চুল একান্তই লম্বা রাখতে চাইলে তার প্রতি আরো একটু যত্নশীল হোন। গোসল করার পর চুল ভালোভাবে মুছে দিন। বড় ফাঁকওয়ালা চিরুনি দিয়ে চুলটা ঠিকভাবে আঁচরে  দিন। এরপর চুল শুকিয়ে গেলে তা ভালোভাবে বেঁধে দিন। শিশুর চুলে তাদের উপযোগী ও ভালোমানের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তাদের জন্য আলাদা চিরুনি ব্যবহার করা উচিত। সপ্তায় দুই দিন শিশুর চুলে শ্যাম্পু করা ভালো।

প্রয়োজনীয় কিছু পরমার্শ

১.গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং ধুলাবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।

২.বাইরে বের হলে শিশুর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে।

৩.শিশু ঘেমে গেলে ঘাম মুছে দিতে হবে। শরীরের ঘাম শুকিয়ে গেলে শিশুর ঠা-া লাগতে পারে।

৩.গরমে যতটা সম্ভব শিশুকে নরম খাবার খাওয়ানো ভালো।

৪.শিশুর ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে, যেন র‌্যাশ জাতীয় সমস্যা না হয়।

৫.গরমে শিশুকে প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে, যেন প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে।

৬.সদ্যজাত শিশুদের সবসময় ঢেকে রাখতে হবে, যেন তাদের শরীর উষ্ণ থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সে যেন ঘেমে না যায়।

৭.গরমের সময়টাতে মশা, মাছি, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড়ের প্রকোপ দেখা যায়। এগুলো আপনার শিশুর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। আপনার ঘরকে এসব পোকামাকড় মুক্ত রাখতে এরোসল বা অন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার শিশু যেন কোনভাবেই এগুলোর নাগাল না পায়।

গরমে শিশুর খাবার

গরমে বাচ্চার শরীরে ঘাম হবে এটাই স্বাভাবিক। এটা ধরে নিয়েই আপনাকে গরমের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রচণ্ড গরমের কারণে এই সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। শিশুকে এই সর্বনাশা রোগ থেকে বাঁচাতে নিয়মিত সাধারণ খাবারের সঙ্গে তরল খাবার খেতে দিন। সরাসরি স্যালাইন কিংবা তরল পানীয় খেতে না চাইলে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। এছাড়া বাজারে প্রচুর গ্রীষ্মকালীন ফল পাওয়া যাচ্ছে। আপনার বাচ্চা যে ফলটি পছন্দ করে, সেটাই তাকে খেতে দিন। বাজারে পাওয়া যাওয়া বোতলকৃত জুস কোনোভাবেই শিশুকে খেতে দেয়া উচিত নয়। জুস খেতে পছন্দ করলে ফল কিনে এনে বাড়িতে জুস তৈরি করে দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, জুসের সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে খাইয়ে কোনোভাবেই যেন বাবুর ঠাণ্ডা লেগে না যায়। অনেক শিশুই পুষ্টিকর খাবার ও শাকসবজি খেতে চায় না। না খেতে চাইলে জোর করে খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। চেষ্টা করুন একটু কৌশলে খিচুড়ি কিংবা পছন্দের খাবারের সঙ্গে মিক্স করে খাওয়ানোর।

শিশুদের গ্রীষ্মকালীন পোশাক:

গরমের সময় শিশুর পোশাক অবশ্যই আরামদায়ক হতে হবে। সিল্ক, জিন্স কিংবা লিলেন কাপড় এড়িয়ে চলুন। গরমের সময়ে নরম সুতি কাপড়ই শিশুদের জন্য উপযোগী। বাচ্চারা ঘামে বেশি, তাই খেয়াল রাখুন পোশাক যেন হয় ঢিলেঢালা এবং একটু খোলামেলা। যেন খুব সহজেই ঘাম শুকিয়ে যেতে পারে। সোনামণির পোশাকের রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সাবধান হতে হবে বাবা-মাকে। গাঢ় কোনো রঙ পছন্দ করার চেয়ে সাদা কিংবা হালকা গোলাপি অথবা উজ্জ্বল হালকা রঙের পোশাক বাছাই করুন। এ ধরনের পোশাকে গরম কম অনুভূত হয়। এই সময়ে বাচ্চাকে ফুলপ্যান্ট পরানো খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই ঢিলেঢালা হাফপ্যান্টই বাবুর জন্য নির্ধারণ করুন। এছাড়া ঢোলা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টও গরমে বাড়তি সুবিধা বয়ে আনবে।

শিশুর শরীরের যত্ন:

গ্রীষ্মকালে শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। ঠান্ডা বা সর্দি-কাশির ভয়ে অনেকে সন্তানকে গোসল করাতে চান না। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে শরীরের ঘাম জমে গিয়ে আরও অসুখ-বিসুখের শঙ্কা থাকে। গোসলের সময় শিশুর গায়ে সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তবে শ্যাম্পু বেশি ব্যবহার না করাই ভালো, সপ্তাহে দুদিনই যথেষ্ট। গোসলের পর শিশুর শরীর ও মাথা ভালো করে মুছে দিয়ে পাউডার লাগানো ভালো। এতে করে ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে শিশু থাকবে নিরাপদ। শিশুর ব্যবহৃত প্রসাধন সামগ্রী যেন অবশ্যই ভালো মানের হয়।

পোকামাকড়ের আক্রমন রোধের উপায়:

এছাড়া ঘরকে পোকামাকড় মুক্ত রাখতে আপনার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। ফুলের টবে বা অন্য কোথাও এমন কি বালতিতে পানি জমতে দেবেন না। কারণ এগুলো ডেংগু রোগবাহী মশার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন। শিশুর বিছানা পরিচ্ছন্ন রাখুন। শিশুর কোন রকম শারীরিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধের উপায়:

গ্রীষ্ম ও বর্ষায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব যায় বেড়ে। তাই সাবধান। খাওয়ানোর আগে শিশুর ব্যবহৃত বাটি, প্লেট সেদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। খাবার পানি ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। খাবার তৈরি ও পরিবেশনের আগে হাত ভালো করে ধুয়ে নিন।গ্রীষ্মের এই দিনগুলোতে আপনার শিশুর সুস্থতা আপনি নিজেই নিশ্চিত করতে পারেন এভাবে। তাই শিশুর যথাযথ যত্ন নিয়ে নিশ্চিত করুন তার সুস্বাস্থ্য এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *