সর্বশেষ নিউজ

জমির রেকর্ড সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩ । জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হলে কি করব?

ভূমি রেকর্ড সংশোধনের জন্য আপনাকে ভূমি অফিসে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যুক্ত করে আবেদন বা মামলা দায়ের করতে হবে – জমির রেকর্ড সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩

রেকর্ড সংশোধনে কার নিকট আবেদন করবেন? –মালিকানা সংক্রান্ত জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে বা হাইকোর্টের আপিল বিভাগে মামলা দায়ের করতে হবে। এছাড়া জমি রেকর্ডের করণিক ভুলের জন্য উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করলেই সংশোধন করা যায়।

ভূমি মন্ত্রনালয়ের ‘আইন শাখা-০১’ এর সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রকাশিত ভূমি রেকর্ড সংশোধন আইন অনুযায়ী ৩ ধরনের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চূড়ান্ত জমির রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধন করা যায়।  প্রথম বা প্রারম্ভিক কর্তৃপক্ষ হচ্ছে সহকারি ভূমি কমিশনার যিনি আপনার উপজেলা বা জেলা শহরে ডিসি অফিসের পার্শ্বেই বসে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ সংশোধনের আবেদন করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, ভূমি আপিল বোর্ড- ভূমি আপিল বোর্ড একটি আধা-বিচার বিভাগীয় সরকারি সংস্থা যা বাংলাদেশে ভূমি পরিচালনার বিষয়ে দায়ের করা আপিল শুনানির জন্য দায়বদ্ধ। এজন্য ভূমি আপীল বোর্ড, ২য় ১২ তলা সরকারী ভবন (৮ম তলা), সেগুনবাগিচা, ঢাকা আবেদনের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে। তৃতীয়ত, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইবুনাল অথবা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ-জমি নিয়ে বিরোধের মীমাংসায় ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত জেলা জজকে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

সহকারী ভূমি কমিশনা কে? জমির রেকর্ডে করনিক ভূল হলে সহকারী ভূমি কমিশনার বা AC Land অফিসে আবেদন করে সংশোধন করা যায়। যেমন- নামের ভূল, অংশের পরিমান বসানোতে ভূল, দাগ নং অনুযায়ী ভূল, মানচিত্রের সঙ্গে রেকর্ডের ভূল, পিতা মৃত্যুবরন করলে সন্তানের নামে জমি রেকর্ড করার কথা থাকলেও সেক্ষেত্রে জরিপকারীদের ভূল লিপিবদ্ধ হয়ে বাবার নামেই রেকর্ড হলে ইত্যাদি সাধারন ভূল সংশ্লিষ্ট AC Land অফিস থেকে সংশোধন করা যায়। অন্যদিকে চূড়ান্ত রেকর্ডে প্রতারনামূলক বা ইচ্ছাকৃত ভূল হলে প্রজাস্বত্বা বিধিমালা ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর ৪ নং উপবিধি অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধন করতে রাজস্ব কর্মকর্তার (বর্তমানে – সহকারী ভূমি কমিশনারের) সাহায্যে আবেদন করা যায়।

ভূমি আপিল বোর্ড কোথায়? এটি ঢাকায় অবস্থিত। Board of Land Administration এর মাধ্যমে খতিয়ানে প্রকাশিত সেটেলমেন্ট রেন্ট-রোলে ভূল লিপিবদ্ধ হলে তা সংশোধন করা যায়। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৯ ধারার ৪ নং উপধারা মতে Board of Land Administration কে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে তা বিলুপ্ত হওয়ায় ভূমি আপিল বোর্ডের মাধ্যমে এ জাতীয় জমির রেকর্ড সংশোধন করা যায়।

ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইবুনাল অথবা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আবার কি? জমির মালিকানা সংক্রান্ত দাবিতে জমির রেকর্ড ভুল হলে এবং ভোগদখল থাকা সত্বেও অন্য কেউ সেই জমির রেকর্ড মালিকানা দাবি করলে তা সাধারনভাবে সংশোধন করা যায় না। এর জন্য ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল জমির রেকর্ড বিষয়ে যে কোন আদেশ প্রদান করতে পারে। জমির রেকর্ড জরিপ করে চূড়ান্ত প্রকাশনার পর যে কোন ধরনের সংশোধনের আবেদন থাকলে তা- ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইবুনাল অথবা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার করা হয়। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ভূলের ধরন অনুসারে ৩ ভাবেই ভূল সংশোধনের জন্য জমির রেকর্ড সংশোধন মামলা বা আপিল করতে হয়। এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য প্রদান করতে না পারলে কয়েকমাস থেকে কয়েক বছরও লাগতে পারে।

ছোটখাট করণিক ভুল সংশোধন সহজ হলেও, গুরতর বা বড় ধরনের ভুল সংশোধনের মামলায় কাল ক্ষেপন হয়ে থাকে

সকল কাগজপত্র নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে গিয়ে জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য সে বিষয়ে দক্ষ সিভিল এডভোকেট কে প্রয়োজনীয় খতিয়ান সংশোধানের দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড সংশোধনীর জন্য একটি “ঘোষণামূলক” মোকদ্দমা করবেন। প্রয়োজনীয় প্রমানপত্র সাথে থাকলে সঠিকভাবে কার্য পরিচালনা করলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি খতিয়ান সংশোধন হয়। জমির রেকর্ডে করনিক ভুল না হলে এবং জমির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিলে কিংবা জমি সরকারি জমির রেকর্ডে এন্ট্রি হলে AC Land অফিস তা সংশোধন করতে পারেনা। এক্ষেত্রে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে জমির রেকর্ড সংশোধন মামলা দায়ের করতে হয়। মোকদ্দমার ক্ষেত্রে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর সময় লেগে যায়।

জমির রেকর্ড সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩ । জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হলে কি করব?

Caption: Source of information

ভূমি রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া ২০২৩ । জমির রেকর্ড সংশোধন ধাপ গুলো দেখে নিই 

  • প্রথম ধাপ- AC Land অফিসে আবেদন করতে হবে- পূর্ববর্তী জরিপের কাগজপত্র, খাজনা বিবরনী, ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার সাক্ষরিত খতিয়ানের কপি সহ AC Land অফিসে সহকারী ভূমি কমিশনারের কাছে আবেদন প্রনয়ণ করতে হবে।
  • দ্বিতীয় ধাপ- ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রতিবেদন দাখিল করবে- AC Land এ আবেদনের পর আবেদনটি রেজিস্ট্রার করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরন করা হবে। ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা সরজমিনে সেই আবেদনের তদন্ত ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে একটি প্রস্তাব প্রতিবেদন তৈরি করবে এবং তা উপজেলা ভূমি অফিসে পাঠাবেন।
  • তৃতীয় ধাপ- সহকারী ভূমি কমিশনারের নোটিশ ও শুনানি জারি করবে। প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর সহকারী ভূমি কমিশনার আবেদনকারীর জমির রেকর্ডকৃত মালিক এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের শুনানির তারিখ ও সময় নির্ধারন করে নোটিশ প্রদান করবেন। এবং নির্দিষ্ট দিনে শুনানি ও দলিলাদি যাচাই-বাছাই করার পর কোন বিরোধ না থাকলে সহকারী ভূমি কমিশনার রেকর্ড সংশোধনের আদেশ দেন।
  • ৪র্থ ধাপ- জমির রেকর্ড সংশোধন হবে-আদেশ প্রাপ্তির পর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রস্তুতকৃত সংশোধিত ৫ কপি খতিয়ানের স্বাক্ষরের জন্য আবেদনকারীর থেকে প্রয়োজনীয় ফি আদায় করেন এবং খতিয়ানের কপি গুলো মূল নথি, জেলা রেকর্ড রুম, উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, আবেদনকারীর, রেজিস্টারে সংরক্ষন, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রেজিস্টার-২ প্রেরণ করা করা হবে। তথ্য পুনরায় হালনাগাদ প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং উর্ধতন প্রক্রিয়ায় এন্ট্রির মাধ্যমে জমির করনিক ভূল সংশোধন কার্যক্রম শেষ হবে

জমি রেকর্ড সংশোধন কি কত টাকা?

জমির করনিক রেকর্ড সংশোধন হতে প্রায় ৩০-৪৫ দিন সময় লাগে এবং নির্দিষ্ট পরিমান ফি প্রদান করতে হয়। যেমন-কোর্ট ফি- ২০ টাকা, জমির রেকর্ড সংশোধন ফি – ১০০০ টাকা, প্রতি কপি খতিয়ানের জন্য ১০০ টাকা করে ফি প্রদান করতে হয়।

জমির রেকর্ড সংশোধন করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগে? জমির রেকর্ডে করনিক ভূল সংশোধন করতে ও মামলা করতে ক্ষেত্র বিশেষে বেশ কিছু কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন পড়ে। চলুন জেনে নেয়া যাক কি কি কাগজপত্র লাগে?  সর্বশেষ নামজারি খতিয়ানের সত্যায়িত কপি। যেমন- সি.এস, আর.এস, বি.এস এস.এ খতিয়ান, মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি,  আবেদনের স্বপক্ষের প্রমানপত্র। যেমন- ওয়ারিশ সনদপত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, আবেদনকারীর সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, সংশ্লিষ্ট মৌজার বিএস ও এসএ মৌজা ম্যাপ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমানপত্র, আদালতের রায়/আদেশ থাকলে তার সার্টিফাইড কপি, বি এস জরিপের মাঠপর্চা এবং ডিপি খতিয়ান প্রয়োজন অনুসারে লাগতে পারে,  আবেদনকারীর পক্ষে স্বাক্ষী থাকলে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ছবি ইত্যাদি।

রেকর্ড সংশোধন সংক্রান্ত যে কোন সহযোগিতার জন্য কল করুন: ১৬১২২ (ভূমি সেবা)

জমির রেকর্ড সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩ । যে সকল ডকুমেন্ট লাগবে

admin

আলামিন মিয়া, একজন ব্লগার, ডিজিটাল মার্কেটার, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার। ব্লগিংকরছি প্রায় ৭ বছর যাবৎ। বিভিন্ন অনলাইন সেবা হাতের কাছে পেতে নির্দেশনা ও পদ্ধতি গুলো ব্যাখ্যা করা হয় যা আপনি খুব সহজেই এই ওয়েবসাইট হতে পেতে পারেন। যদি অতিরিক্ত কোন তথ্য প্রয়োজন হয় বা পরামর্শ থাকে তবে মেইল করুন admin@tricksboss.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *