ডেঙ্গুজ্বর কি? ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার কারণ কি কি? এবং প্রতিরোধ ও প্রতিকার কি ভাবে করতে হয়?

ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার কারণ কি কি?

এবং

প্রতিরোধ ও প্রতিকার কি ভাবে করতে হয়?

 

 

১. ডেঙ্গু কি

ডেঙ্গু বা ডেঙ্গি একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।

 

কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে। পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। কয়েক ধরনের টেস্টের মাধ্যমে, যেমন, ভাইরাসটি বা এর আরএনএ প্রতিরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি দেখেও ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যায়।

 

ডেঙ্গু ফিভার ভাইরাস (DENV) Flavivirus জিনের Flaviviridae পরিবারের একটি আরএনএ ভাইরাস। ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম (জিনগত পদার্থ) ধারণ করে প্রায় ১১০০০ নিউক্লিওটাইড বেস, যার কোড-এ আছে তিনটি ভিন্ন প্রকারের প্রোটিন অণু (C, prM এবং E) যা তৈরি করে ভাইরাস অণু এবং সাতটি অন্য প্রকারের প্রোটিন অণু (NS1, NS2a, NS2b, NS3, NS4a, NS4b, NS5) যা শুধুমাত্র আক্রান্ত ধারক কোষেই পাওয়া যায় এবং তা ভাইরাসের প্রতিরূপ বানাতে সাহায্য করে।  ভাইরাসের চারটি ভাগ আছে, এগুলিকে বলে সেরোটাইপ এবং এগুলির নাম হল DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। এই চারটি সেরোটাইপ মিলে রোগের পূর্ণ চিত্র তৈরি করে। একটি সেরোটাইপের সংক্রমণকে মনে করা হয় সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে জীবনভর প্রতিরোধ ক্ষমতা উৎপন্ন হল কিন্তু তা অন্যগুলির ক্ষেত্রে শুধু স্বল্পমেয়াদী প্রতিরোধ দেয়।

 

সেকেন্ডারী ইনফেকশনে প্রবল জটিলতা দেখা দেয় বিশেষ করে যদি কারুর আগে সেরোটাইপ DENV-1 হয় এবং তারপর সেরোটাইপ DENV-2 বা সেরোটাইপ DENV-3তে আক্রান্ত হয় অথবা যদি কেউ আগে DENV-3তে আক্রান্ত হয়ে পরে DENV-2তে আক্রান্ত হয়।

 

পলিমরফিজম (বহুরুপতা) কোন বিশেষ জিনে সংযুক্ত হলে প্রবল ডেঙ্গু জটিলতার বিপদ বাড়ে। উদাহরণ স্বরুপ, প্রোটিনের জিনের কোডিংকে বলে TNFα, মান্নান-বাইন্ডিং লেক্টিন, CTLA4, TGFβ,DC-SIGN, এবং বিশেষ করে হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন-এর গঠন। আফ্রিকাবাসীদের এক সাধারণ জিনগত অস্বাভাবিকতা, যাকে বলে গ্লুকোজ-6-ফসফেট ডিহাইড্রোজেনেস ডেফিসিয়েন্সি, বিপদকে বাড়িয়ে তোলে। ভিটামিন ডি রিসেপটর এবং FcγR-এর জিনের বহুরুপতা সেকেন্ডারী ডেঙ্গু সংক্রমণে রোগের প্রবলতার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।

 

২. চিহ্ন ও উপসর্গ

 

সাধারণভাবে, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তরা হয় উপসর্গবিহীন অথবা সাধারণ জ্বরের মত সামান্য উপসর্গ।  বাকিদের রোগ হয় আরো জটিল, এবং স্বল্প অনুপাতে এটি প্রাণঘাতী হয়।  ইনকিউবিশন পিরিয়ড (উপসর্গসমূহের সূত্রপাত থেকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময়) স্থায়ী হয় ৩-১৪ দিন, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয় ৪-৭ দিন। অতএব, আক্রান্ত এলাকা-ফেরত পর্যটকদের ডেঙ্গু হয় না যদি ঘরে ফেরার ১৪ দিনের বেশি পরে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ শুরু হয়। বাচ্চাদের প্রায়ই এই উপসর্গগুলি হয় যা সাধারণ সর্দি এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারাটাইটিস (বমি ও ডায়েরিয়া)র সমান, আর সাধারণত বড়দের চেয়ে উপসর্গের তীব্রতা কম হয়, কিন্তু রোগের জটিলতার শিকার বেশি পরিমাণে হয়। ডেঙ্গু উপসর্গের বৈশিষ্ট্য হলো হঠাৎ জ্বর হওয়া, মাথাব্যথা(সাধারণত‌ দুচোখের মাঝে), মাংসপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা, এবং র‍্যাশ বেরোনো। ডেঙ্গুর আরেক নাম হাড়-ভাঙা জ্বর (Break bone fever) যা এই মাংশপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা থেকে এসেছে। মেরুদণ্ড ও কোমরে ব্যথা হওয়া এ রোগের বিশেষ লক্ষণ। সংক্রমণের কোর্স তিনটি পর্যায়ে বিভক্তপ্রাথমিক, প্রবল এবং আরোগ্য।

 

প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে অত্যধিক জ্বর, প্রায়শ ১০৪ °ফা-র বেশি, সঙ্গে থাকে সাধারণ ব্যথা ও মাথাব্যথা; এটি সাধারণত দুই থেকে সাতদিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে ৫০-৮০% উপসর্গে র‍্যাশ বেরোয়। এটা উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে লাল ফুসকুঁড়ি হিসাবে দেখা দেয়, অথবা পরে অসুখের মধ্যে (দিন ৪-৭) হামের মত র‍্যাশ দেখা দেয়। কিছু petechia (ছোট লাল বিন্দু যেগুলি ত্বকে চাপ দিলে অদৃশ্য হয় না, যেগুলির আবির্ভাব হয় ত্বকে চাপ দিলে এবং এর কারণ হচ্ছে ভগ্ন রক্তবাহী নালী) এই জায়গায় আবির্ভূত হতে পারে,এবং কারোর মুখ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন থেকে অল্প রক্তপাতও হতে পারে।

কিছু লোকের ক্ষেত্রে অসুখটি চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যার কারণে প্রবল জ্বর হয় এবং সাধারণত এক থেকে দুই দিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে তরল বুক এবং অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটিতে বর্ধিত ক্যাপিলারি শোষণ ও লিকেজের কারণে জমে। এর ফলে রক্তপ্রবাহে তরলের পরিমাণ কমে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়। ফলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকলতা এবং প্রবল রক্তপাত হয়, সাধারণত গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক্টে হতে পারে। ডেঙ্গুর সব ঘটনার ৫%-এরও কম ক্ষেত্রে শক (ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) এবং হেমারেজ (ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার)ঘটে, তবে যাদের আগেই ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্যান্য সেরোটাইপ-এর সংক্রমণ ঘটেছে(সেকেন্ডারি ইনফেকশন) তারা বর্ধিত বিপদের মধ্যে রয়েছেন। ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভারকে আবার I–IV গ্রেডে উপবিভক্ত করা হয়। শুধুমাত্র কারুর জ্বরে সাধারণ কালশিটে বা পজিটিভ টুর্নিকোয়েট টেস্টে গ্রেড I-এর উপস্থিতি থাকে, গ্রেড II-এর উপস্থিতির ফলে ত্বক ও যে কোন জায়গা থেকে আপনাআপনি রক্তপাত হতে থাকে, গ্রেড III হল শক-এর ক্লিনিক্যাল প্রমাণ, এবং গ্রেড IV –এ শক এত প্রবল হয় যে রক্ত চাপ এবং পালস শনাক্ত করা যায় না। গ্রেড III ও IV ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নামে পরিচিত।

 

এরপর আরোগ্য পর্যায়ে বেরিয়ে যাওয়া তরল রক্তপ্রবাহে ফেরত আসে। এটি সাধারণত দুই থেকে তিনদিন স্থায়ী হয়। এই উন্নতি হয় চমকে দেবার মত, কিন্তু এতে প্রচণ্ড চুলকানি এবং হৃদস্পন্দনের গতি ধীরহতে পারে। আরেকরকম র‍্যাশও বেরোতে পারে ম্যাকুলোপাপুলার বা ভাস্কুলাইটিক রূপে, যার ফলে ত্বকে গুটি বেরোয়। এই পর্যায়ে তরলের অতিপ্রবাহ অবস্থা ঘটতে পারে। যদি এতে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় তাহলে সচেতনতার মাত্রা হ্রাস অথবা মূর্ছা যাওয়া হতে পারে। এর পর এক ক্লান্তির অনুভূতি অনেক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।

মাঝে মাঝে ডেঙ্গু অন্যান্য অনেক শরীরতন্ত্রকে আক্রমণ করতে পারে, আলাদা ভাবে অথবা চিরাচরিত ডেঙ্গু লক্ষণের সাথে।০.৫%-৬% চরম ক্ষেত্রে সচেতনতার মাত্রা হ্রাস পায় যার কারণ মস্তিষ্কে ভাইরাসের সংক্রমণ অথবা পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবনতি,উদাহরণস্বরূপ, লিভার।

ডেঙ্গুর সাপেক্ষে অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারের বিষয়ে জানা গেছে, যেমন ট্রান্সভার্স মায়েলিটিস এবং গুলেন-বারে সিনড্রোম। দুর্লভতর জটিলতার মধ্যে আছে হৃৎপিণ্ডে সংক্রমণ এবং অ্যাকিউট লিভার ফেইলিওর।

 

৩. রোগ নির্ণয়

 

ল্যাবোরেটরি পরীক্ষায় প্রাথমিক যে পরিবর্তন ধরা পড়ে তা হ’ল শ্বেত রক্তকোষ(WBC) কাউন্টে হ্রাস, যার পর হতে পারে অনুচক্রিকার (PLATELET)হ্রাস এবং মেটাবোলিক অ্যাসিডোসিস। প্রবল অসুখে, প্লাজমা লিকেজের কারণে হয় হেমোকন্সেন্ট্রেশন (হেমাটোক্রিট বৃদ্ধিতে বোঝা যায় ) এবং হাইপোঅ্যালবুমিনিমিয়া। প্লুউরাল ইফিউসন বা ascites বেশি হলে শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়, তবে আল্ট্রাসাউন্ড-এর মাধ্যমে ফ্লুইডের পরীক্ষা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের প্রাথমিক শনাক্তকরণে সহায়তা করতে পারে।

 

৪. ল্যাবোরেটরি টেস্ট

 

ডেঙ্গু জ্বরের রোগনিরূপণ মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেস্টিং-এ হতে পারে। PCR, ভাইরাল অ্যান্টিজেন শনাক্তকরণ (NS1) অথবা নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি (সেরোলজি) দ্বারা সেল কালচার, নিউক্লিক অ্যাসিড শনাক্তকরণ-এ ভাইরাসকে বিচ্ছিন্ন করে এটা হতে পারে। অ্যান্টিজেন শনাক্তকরণের চাইতে ভাইরাস বিচ্ছিন্নকরণ এবং নিউক্লিক অ্যাসিড শনাক্তকরণ আরো বেশি নির্ভুল, কিন্তু অধিক ব্যয়ের কারণে এই টেস্টগুলি সর্বত্র উপলভ্য নয়। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সব টেস্টগুলিই নেগেটিভ হতে পারে। প্রথম সাত দিনে PCR এবং ভাইরাল অ্যান্টিজেন (NS1) ডিটেকশন অনেক বেশি নির্ভুল।

ডেঙ্গু ভাইরাস-ভিত্তিক অ্যান্টিবডি, IgG ও IgM টেস্ট, সংক্রমণের পরবর্তী পর্যায়ে রোগনিরূপণকে দৃঢ়ীকৃত করতে কাজে লাগতে পারে। IgG এবং IgM উভয়ই ৫-৭ দিন পর উৎপন্ন হয়। IgM-এর উচ্চতম মাত্রা(titre)প্রাথমিক সংক্রমণের পরে শনাক্ত হয়, কিন্তু মধ্যম ও অন্তিম সংক্রমণেও IgM তৈরি হয়। প্রাথমিক সংক্রমণের ৩০-৯০ দিন পরে কিন্তু পরবর্তী পুনর্সংক্রমণের আগে IgMকে শনাক্ত করা যায় না। বিপরীত দিকে, IgG, ৬০ বছরেরও বেশি সময় শনাক্তযোগ্য থাকে এবং,   উপসর্গের অনুপস্থিতিতে অতীত সংক্রমণের এক প্রয়োজনীয় সূচক। প্রাথমিক সংক্রমণের পর রক্তে IgG ১৪-২১ দিন পর উচ্চতম মাত্রায় আরোহণ করে। পরবর্তী পুনর্সংক্রমণে মাত্রা আগেই উচ্চতম স্থানে চলে যায় এবং টাইটার (titres) সাধারণত

বেশি থাকে। IgG এবং IgM উভয়ই ভাইরাসের সংক্রমণকারী সেরোটাইপের সুরক্ষামূলক প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে। ল্যাবোরেটরি টেস্টে IgG এবং IgM অ্যান্টিবডি অন্যান্য ফ্লেভিভাইরাসের, যেমন- ইয়েলো ফিভার ভাইরাস সাথে ক্রস-রিঅ্যাক্ট করতে পারে, যার ফলে সেরোলজির পরিচয় জানা কঠিন হতে পারে। শুধুমাত্র IgG-র শনাক্তকরণ রোগনিরূপক ধরা হবে না যতক্ষণ না ১৪ দিন পর পর রক্তের সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং নির্দিষ্ট IgG-র চতুর্গুণের বেশি বৃদ্ধি শনাক্ত হচ্ছে। উপসর্গসহ কোন ব্যক্তির IgM শনাক্তকরণকে রোগনিরূপক ধরা হবে।

 

৫. ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার

 

ডেঙ্গু ধরা পড়লে,  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে ডেঙ্গু হলেই যে  হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে বিষয়টা এমন নয়। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে তাহলে বাড়িতে রেখে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

 

শিশুর মধ্যে যদি বিপদ চিহ্ন দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকরাই তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেবেন।

শিশুর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকরা সাধারণত কয়েক ধরণের রক্তের পরীক্ষা দিয়ে থাকেন – এগুলো হল কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC), এনএস ওয়ান(NS1) অ্যান্টিজেন, এসজিপিটি(SGPT) এবং এসজিওটি(SGOT)।

 

এসব পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলে প্রতিদিন একবার সিবিসি(CBC) পরীক্ষার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নতি নাকি অবনতি হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

 

শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিচের কয়েকটি উপায়ে জ্বরের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে 

 

. শরীরে যদি জ্বর থাকে, তাহলে পানি দিয়ে শরীর বার বার স্পঞ্জ করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

 

. পানি ও মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে তরল খাবার, বিশেষ করে খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের শরবত, স্যুপ ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।

 

. ডেঙ্গুর ধরণ বুঝে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল অথবা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে থাকেন।

 

. রক্তচাপ অস্বাভাবিক থাকলে স্যালাইন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

 

. যদি শরীরে প্লাজমা লিকেজের কারণে ফ্লুয়িড জমতে থাকে, তাহলে স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে অ্যালবোমিন প্রয়োগ করা হয়। রোগী শক সিনড্রোমে চলে গেলে এই চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে।

 

. এছাড়া  শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।

 

.  রক্তে প্লেটলেট যদি ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ এর নীচে চলে আসে বা রক্তরক্ষণ হয়, তাহলে শিশুকে আইসিইউ-তে রেখে প্লেটলেট দেয়ার প্রয়োজন হয়।

 

. রোগীর পরিস্থিতি গুরুতর হলে রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি বুকের এক্স রে, পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি, ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এছাড়া প্রস্রাব না হলে ক্রিয়াটিনিনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

 

৬. প্রতিরোধ

 

ডেঙ্গু ভাইরাসের কোন স্বীকৃত টিকা ভ্যাকসিন নেই। সুতরাং প্রতিরোধ নির্ভর করে জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ এবং তার কামড় থেকে সুরক্ষার উপর। A. aegypti কে নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক পদ্ধতি হ’ল এর বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা।  জলের আধার খালি করে অথবা কীটনাশক প্রয়োগ করে অথবা এইসব জায়গায় বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্টপ্রয়োগ করে, যদিও spraying with অর্গ্যানোফসফেট বা পাইরেথ্রয়েড স্প্রে করাকে খুব লাভজনক ভাবা হয় না। স্বাস্থ্যের উপর কীটনাশকের কুপ্রভাব এবং কন্ট্রোল এজেন্টের ব্যয়বহুলতার কথা মাথায় রেখে পরিবেশ শোধনের মাধ্যমে জমা জল কম করাটাই নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভাল উপায়। মানুষজন পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে, বিশ্রামের সময় মশারি ব্যবহার করে এবং বা কীট প্রতিরোধক রাসায়নিক (DEET সবচেয়ে কাজের)প্রয়োগ করে মশার কামড় এড়াতে পারে।

 

বিশেষ সতর্কতা 

এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায়। ফলে দিনের বেলায়ই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিভিন্ন স্থানে ৪/৫ দিন জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও পরিষ্কার পানি হল এডিস মশার বংশ বিস্তারের স্থান, তাই মশা বংশ বিস্তার বন্ধ করতে পারলে এ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনাও কমে যায়। এটি বর্ষা মৌসুমেই সাধারণত দেখা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *