ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে নতুন নির্দেশনা: আংশিক অর্পিত সম্পত্তি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তির নামজারি ও কর আদায়ে স্পষ্টতা আনল ভূমি মন্ত্রণালয়
ঢাকা, ২০ নভেম্বর ২০২৫ – কৃষি জমির অবাধ হস্তান্তর রোধ করে কৃষিজমির সংরক্ষণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমি মন্ত্রণালয় নতুন কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। গত ০৫ মার্চ ২০২৪ তারিখে জারি করা এক সার্কুলারে (স্মারক নং- ০১.০০.০০০০.০৪৮.৪২.০০৬.২৩-৬৩) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আংশিক ভূমি বা গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত অকৃষি ভূমি (যা আসলে কৃষি জমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়) কোনো শিল্পপতি, কর্পোরেট কোম্পানি, শিল্প গ্রুপ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারি (মিউটেশন) করা যাবে না।
সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ ধরনের জমি শুধুমাত্র প্রকৃত কৃষক, কৃষি শ্রমিক বা কৃষিনির্ভর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা যাবে। যদি কোনো কোম্পানি বা অকৃষক ব্যক্তি এ ধরনের জমি ক্রয় করে, তাহলে নামজারি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে এবং ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) আদায় করা হবে না। ফলে জমিটি আইনিভাবে তাদের নামে রেকর্ড হবে না, যা ভবিষ্যতে বিক্রি বা ব্যবহারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
সার্কুলারের মূল নির্দেশনাসমূহ:
- কৃষি মালিকানাধীন ডি-সি আর (অকৃষি) নামজারি প্রদান করা যাবে না যদি ক্রেতা শিল্পপতি/কোম্পানি হয়।
- উচ্চ দাম দিয়ে শিল্প গ্রুপের কাছে জমি বিক্রি করলেও নামজারি বন্ধ থাকবে।
- সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষক, ডাক্তারসহ অকৃষক পেশাজীবীদের নামেও এ ধরনের জমি নামজারি করা যাবে না (যদি না তারা প্রকৃতভাবে কৃষির সাথে জড়িত থাকেন)।
- সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড অফিসকে এ নির্দেশনা কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের কৃষিজমি রক্ষা করা এবং কর্পোরেট হাউসগুলোর হাতে কৃষিজমি কেন্দ্রীভূত হওয়া রোধ করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিল্পায়নের নামে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি হস্তান্তর হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল, যা খাদ্য উৎপাদন ও কৃষকদের জীবিকায় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত এই সার্কুলার ইতোমধ্যে সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে আগামীতে কৃষিজমির বাণিজ্যিকীকরণ অনেকটা রোধ হবে বলে ভূমি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “কৃষি আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এই জমি রক্ষা করা ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
যদি আপনার কোনো জমি ক্রয়-বিক্রয়ের পরিকল্পনা থাকে, বিশেষ করে কৃষি বা গ্রামের অকৃষি জমি, তাহলে অবশ্যই স্থানীয় এসিল্যান্ড অফিসে যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আংশিক ভিপি হলে কি নামজারি হবে?
হ্যাঁ, আংশিক ভূমি প্রকৃত কৃষক (আংশিক ভিপি) হলে নামজারি হবে – ভূমি মন্ত্রণালয়ের ০৫ মার্চ ২০২৪-এর সার্কুলার অনুযায়ী এটি সম্ভব।
স্পষ্ট ব্যাখ্যা:
সার্কুলারে যেখানে বলা হয়েছে যে, কৃষি জমি বা গ্রামের অকৃষি (যা আসলে কৃষি হিসেবে ব্যবহৃত হয়) জমি শুধুমাত্র প্রকৃত কৃষক/কৃষি শ্রমিক/কৃষিনির্ভর পরিবারের নামে নামজারি করা যাবে।
“প্রকৃত কৃষক” বলতে যাদের মূল পেশা বা জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল, তাদের বোঝানো হয়েছে। এর মধ্যে পড়েন:
- যারা আংশিক ভিপি (অর্থাৎ ভূমি সংস্কার আইনে খাসজমি বা বর্গা জমির আংশিক মালিকানা পেয়েছেন)
- বর্গাচাষী যাদের নামে ভিপি রেকর্ড আছে (পুরো বা আংশিক)
- যারা প্রকৃতভাবে চাষ করেন এবং কৃষি আয়ই তাদের প্রধান আয়
কী কী ক্ষেত্রে আংশিক ভিপি হলেও নামজারি হবে?
- যদি ক্রয়কৃত জমিটি কৃষি বা গ্রামের অকৃষি হয় এবং ক্রেতা আংশিক ভিপি হন → নামজারি হবে।
- এমনকি পুরো ভিপি না হয়েও যদি তার নামে কিছু পরিমাণ খাস/ভিপি জমি থাকে এবং তিনি প্রকৃত চাষি হন → সাধারণত নামজারি অনুমোদন হয়।
- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সনদে যদি স্পষ্ট লেখা থাকে যে “এই ব্যক্তি প্রকৃত কৃষক/ভিপি” → এসিল্যান্ড অফিসে নামজারি মঞ্জুর হয়।
কী কী ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে?
- যদি ক্রেতা শুধুমাত্র চাকরিজীবী/ব্যবসায়ী হন এবং আংশিক ভিপি থাকলেও তার মূল পেশা কৃষি না হয় → অনেক এসিল্যান্ড এখন নামজারি আটকে দিচ্ছেন।
- কিছু জেলায় অতি কঠোরভাবে চলছে – তারা শুধু “পূর্ণ ভিপি” বা “শুধু কৃষক”কেই অনুমতি দিচ্ছে।
বাস্তব অবস্থা (নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত):
অধিকাংশ জেলায় আংশিক ভিপি থাকলে এবং চেয়ারম্যানের সনদে “প্রকৃত কৃষক” লেখা থাকলে নামজারি হচ্ছে। তবে কিছু উপজেলায় (যেমন: কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, যশোরের কিছু অংশ) অতি কঠোরতার কারণে আংশিক ভিপিকেও আটকে দিচ্ছে।
পরামর্শ: জমি কেনার আগে স্থানীয় এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে মৌখিকভাবে জেনে নিন অথবা অভিজ্ঞ মিউটেশন উকিলের সাথে কথা বলুন। চেয়ারম্যানের সনদে যেন স্পষ্ট লেখা থাকে “প্রকৃত কৃষক ও ভিপি মালিক”।

