সারা দিনে কয়টা খেজুর খাবেন। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

নিয়মিত খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

আজকে আমরা জানবো বিস্তারিত ভাবে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম এবং সারা দিনে কয়টা খেজুর খাবেন এর সম্পর্কে যা আপনার শরীর উপযুক্ত ও রোগ মুক্ত রাখতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।

 

খেজুরের উপকারিতা

১। শরীরে শক্তি যোগায়।

২। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

৩। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

৪। ত্বক ভালো ও সুন্দর রাখে।

৫। হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখে।

৬। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

৭। গ্লুকোজের অভাব দূর করে।

৮। ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।

৯। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

১০। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 

০১। শরীরে শক্তি যোগায়

শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে খেজুরের উপকারিতা শুরু করা যাক। প্রতিদিন ৪/৫ টি করে খেজুর খেতে পারলে, শরীরের শক্তি দ্রুত বাড়তে শুরু করবে। এবং আপনার শারীরিক দুর্বলতা হ্রাস পেতে শুরু করবে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি, যার ফলে অনেক শক্তি ব্যয় হয়ে থাকে। তাই অবশ্যই শরীরের জন্য শক্তি যোগায় এমন খাবার খাওয়া উচিত। শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য সব খাবারের মধ্যে খেজুর হচ্ছে অন্যতম। কারণ এটিতে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, শর্করা, ফাইবার, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, লোহা, ফসফরাস, পটাশিয়াম সহ আরও অনেক কার্যকারী উপাদান রয়েছে। অর্থাত্‍ খেজুরে ক্যালরি রয়েছে পর্যাপ্ত, যার ফলে শরীরে যতেষ্ট শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটিতে রয়েছে এমন সব উপাদান যা তাত্‍ক্ষণিক শক্তি ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।

 

০২। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে

চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে খেজুর ফল অনন্য ভূমিকা রাখে। আমাদের অনেকেরই চোখে নানান সমস্যা হওয়ার কারণে দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়ে থাকে, এটি বাড়াতে খেজুর যতেষ্ট অবদান রাখে। অর্থাত্‍ প্রতিদিন খেজুর খেতে পারলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কারণ খেজুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, জিয়াজেন্থিন ও লিউটিন সহ আরও কিছু কার্যকারী উপাদান যা ম্যাকুলার ও রেটিনার স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। এর ফলে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এবং খেজুরে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগ ও প্রতিরোধ করে।

 

০৩। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

বর্তমানে অনেক মানুষ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যা শরীর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সরূপ। আর তারজন্য আমরা অনেক টাকা নষ্ট করে ফেলছি। কিন্ত আপনি ইচ্ছা করলে কিছু প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারেন। খেজুরও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে বিশেষ করে মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধেও এটি সহায়ক। তাই নিয়মিত খেজুর খান নিজেকে বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।

 

০৪। ত্বক ভালো ও সুন্দর রাখে

ত্বক সুস্থ, সুন্দর, উজ্জ্বল ও কোমল রাখতেও খেজুরের উপকারিতা অনন্য। প্রতিদিন সকালে খালী পেটে ৪/৫ টা খেজুর খেতে পারেন ত্বক সুস্থ, সুন্দর রাখার জন্য। কারণ খেজুর একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। এটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়ামসহ আরও আশ্চর্যজনক ও কার্যকারী উপাদান। যা বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ত্বক সুন্দর ও ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং যতেষ্ট উজ্জ্বল করে তুলে। তাই ত্বকের সুস্থতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য অন্যান্য খাবারের সাথে অবশ্যই খেজুর খেতে পারেন।

 

০৫। হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখে

নিয়মিত খেজুর খেলে হাড় সুস্থ ও মজবুত থাকে, এবং হাড়ের দুর্বলতা চলে যায়।। আমরা অনেকেই হাড়ের দুর্বলতা অনুভব করি। বিভিন্ন কারণে অনেকের হাড় অসুস্থ হয়ে যাই এবং কারও হাড় খুব নরম হয়ে থাকে। ফলে মাঝে মাঝে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যেমন- রীতিমতো চলাফেরা করা না, হাঁটা হাঁটি করা যায় না, এবং ব্যায়াম করতে ও সমস্যা হয়ে থাকে। তার জন্য অবশ্যই মানসম্মত খেজুর ধুয়ে পরিষ্কার করে প্রতিদিন খাওয়া উচিত। হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখতে ও খেজুরের উপকারিতা অতুলনীয়। এটিতে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়ামও প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই সকল মিনারেল বা খনিজ পদার্থ হাড়ের সুস্থতার জন্য অতুলনীয় ভূমিকা রাখে। তাই অবশ্যই ছোট-বড় সবার নিয়মিত খেজুর খাওয়া প্রয়োজন।

 

০৬। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে

সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান করতে চান? তাহলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ৪/৫ টি ভালোমানের খেজুর খান। খেজুরে থাকা বিভিন্ন কার্যকারী উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন অথবা রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পানি খেতে পারেন। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া সম্ভবনা কমে যাবে।

 

০৭। গ্লুকোজের অভাব দূর করে

শরীরে যেন গ্লুকোজের ঘাটতি না হয়, অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। এটির অভাবে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং স্বাস্থ্যের অবনতি করবে। তাই গ্লুকোজের অভাব কার্যকারী ভাবে দূর করে এমন খাবার খাওয়া উচিত, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খেজুর। অর্থাত্‍ খেজুর যতাযত ভাবে গ্লুকোজের অভাব দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রোজায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। আর খেজুর খাওয়ার পরে সে অভাব দূর হয়। তাই গ্লুকোজের ঘাটতি দূর করার জন্য নিয়মিত ৪/৫ টা খেজুর ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া উচিত।

০৮। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

খেজুর বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। যেমন হার্ট সুস্থ রাখতে ভুমিকা রাখে, ডায়াটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরে এল ডি এল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং সুস্থ ও ভালো থাকে। এছাড়া মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, হজমশক্তি বর্ধক, যকৃত্‍ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক করে, অ্যানিমিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখে, অ্যালার্জির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে এবং খেজুরে থাকা প্রচুর মাত্রায় প্রাকৃতির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা একাধিক রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই ছোট ফলটি গুণাগুণ কত বিশাল এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কি পরিমাণ কাজ করে থাকে। খেজুরের উপকারিতা আরও রয়েছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ গুলো দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *