সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের বিষয়টি বর্তমানে এক জটিল মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। নবম পে স্কেল বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কমিশন গঠন করা হলেও, অর্থ উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলোর আল্টিমেটাম পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। এই অবস্থায়, পে স্কেল দ্রুত ও বৈষম্যহীনভাবে বাস্তবায়নের জন্য সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর একতা এবং দৃঢ় অবস্থান জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

🔥 উত্তপ্ত পরিস্থিতি: গেজেট প্রকাশের দাবি ও আন্দোলনের হুশিয়ারি

দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির (inflation) কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায়, নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জোরালো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে গত ২৭ জুলাই নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণের জন্য পে কমিশন গঠন করা হয়, যাকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে:

• কর্মচারী সংগঠনের আল্টিমেটাম: ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ’সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম পে স্কেলের গেজেট প্রকাশ এবং ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকারও হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

• অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ১২ নভেম্বর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নতুন পে স্কেলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়, বরং আগামী নির্বাচিত সরকার নেবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বেতন কমিশনের প্রতিবেদন (কাঠামো) চূড়ান্ত করে যাবে। তার এই মন্তব্য কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করেছে।

🤝 একতাই পথ: সবার জন্য সুফল নিশ্চিতকরণে ঐক্যের গুরুত্ব

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন হলে এর সুফল ভোগ করবেন প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে, পে স্কেল নিয়ে যে ধরনের জটিলতা এবং দোদুল্যমানতা তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কর্মকর্তাদের সকল গ্রেড এবং স্তরের একত্রিত হওয়া জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সুস্পষ্ট দাবির মাধ্যমে দ্রুত গেজেট প্রকাশ সম্ভব হতে পারে। অন্যথায়, শুধু নিম্ন বা উচ্চ গ্রেডের একক উদ্যোগে বৈষম্যমুক্ত পে স্কেল আদায় কঠিন হতে পারে। যেহেতু মূল্যস্ফীতি সকলের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়েছে এবং বিদ্যমান বেতন কাঠামো সকলের জন্যই অপর্যাপ্ত, তাই এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত বা গ্রেডভিত্তিক ভেদাভেদ ভুলে একটি শক্তিশালী যৌথ অবস্থান তৈরি করা আবশ্যক। মনে রাখা দরকার, নতুন স্কেলের সুফল ভোগ করবেন সবাই, তাই এটি দ্রুত বাস্তবায়নের সম্মিলিত দায়ভারও সকলের।

💰 নতুন কাঠামো কেমন হতে পারে?

যদিও অর্থ বিভাগ বেতন কাঠামোর অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানের জন্য আয়কর বাড়ানো ও সরকারি বাসাবাড়ির ভাড়া বৃদ্ধির মতো উৎসগুলোর দিকে নজর দিয়েছে, তবুও কমিশনের প্রাথমিক আলোচনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে:

• বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা: নতুন স্কেলে মূল বেতন দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে কিছুটা সহায়ক হবে।

• সর্বনিম্ন বেতন: নতুন কাঠামোতে সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি (কোনো কোনো প্রস্তাবে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত) হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।

• সুবিধা বৃদ্ধি: চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ানোর বিষয়েও কমিশন প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নির্ভর করছে কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেওয়া, গেজেট প্রকাশ এবং সরকারের আর্থিক সক্ষমতার ওপর।

নতুন পে স্কেল কেবল বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং সমাজে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায়, পে স্কেল বাস্তবায়নে সৃষ্ট সকল অনিশ্চয়তা দূর করে একটি ন্যায্য ও দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।