মাত্র তিন মাসেই বেদখল জমি ফেরত ২০২৫ । দ্রুত বিচার নিশ্চিত করবে নতুন ভূমি আইন ও বিধিমালা!
বছরের পর বছর আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা পেরিয়ে জমির দখল ফিরে পাওয়ার অপেক্ষার অবসান ঘটাতে চলেছে সরকার। সদ্য কার্যকর হওয়া ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং এর আওতায় প্রণীত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা, ২০২৪ এর মাধ্যমে এখন মাত্র তিন মাসেই বেদখল হয়ে যাওয়া জমি ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে।
সরকার মনে করছে, এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ ভূমি সংক্রান্ত মামলার জট, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য এবং প্রশাসনিক দুর্নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনবে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষ দ্রুত, স্বচ্ছ এবং কার্যকর প্রক্রিয়ায় তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন।
⚖️ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ক্ষমতা: দীর্ঘসূত্রিতার অবসান
নতুন আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো— বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে এখন থেকে সরাসরি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করার সুযোগ। এর ফলে জমি জোরপূর্বক দখল হলে আর জজ কোর্টে মামলা করে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন হবে না।
- সরাসরি আবেদন: বেদখল হওয়া ব্যক্তি সরাসরি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্ধারিত ফরমে অভিযোগ জমা দিতে পারবেন।
- দ্রুত নিষ্পত্তি: বিধিমালায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটি সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে। এই সময়সীমার বাধ্যবাধকতা দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
- প্রাথমিক তদন্ত: অভিযোগ পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট দ্রুত প্রাথমিক তদন্ত করবেন এবং প্রয়োজনে পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারবেন।
📜 আবেদন প্রক্রিয়া: যা যা লাগবে
বিধিমালার ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, অবৈধভাবে দখলচ্যুত ব্যক্তিকে তার আবেদনের সাথে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এবং প্রমাণাদি সংযুক্ত করতে হবে:
- জমির তফসিল, খতিয়ান ও দাগ নম্বর
- জমির দলিল, নামজারি খতিয়ান, এবং কর পরিশোধের তথ্য
- জরিপ নথি
- ছবি বা ভিডিও প্রমাণ (যদি থাকে)
🚨 ১৫ দিনের নোটিশ ও জোরপূর্বক দখল পুনরুদ্ধার
আবেদন গৃহীত হওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাবে:
- ১৫ দিনের ব্যাখ্যা: ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের বক্তব্য বা ব্যাখ্যা জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করবেন।
- তদন্ত ও সিদ্ধান্ত: এরপর মাঠপর্যায়ের তদন্ত ও শুনানির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
- একতরফা আদেশ: প্রয়োজনে একতরফা আদেশ দিয়েও জমির দখল ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দখল ফিরিয়ে না দিলে, ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় জোরপূর্বক দখল পুনরুদ্ধার করার আদেশ দিতে পারবেন।
🚫 অবহেলায় শাস্তি ও ব্যতিক্রম
এই আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলদের জন্যও রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা:
- শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: দখল হস্তান্তরে বাধা দিলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
- বিভাগীয় ব্যবস্থা: প্রতিটি আবেদন সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে এবং দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে: তবে, যদি একই বিষয়ে কোনো মামলা দেওয়ানি আদালতে চলমান থাকে, সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা যাবে না। তবে আদালত চাইলে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সেই মামলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাতে পারবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই নতুন আইনি ব্যবস্থা ভূমি মালিকদের জন্য ন্যায়বিচারের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে—যেখানে দীর্ঘ আইনি জটিলতা নয়, বরং দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে মিলবে নিজের জমির ন্যায্য দখল।


