ইলেকট্রিক মোটরযান নীতিমালা ২০২৩ । ইজি বাইক বা রিক্স ইলেকট্রিক মোটরযানের আওতায় পড়বে না
দেশের মোট যানবাহনের ৩০% যানবাহন বৈদ্যুতিক বা বিদ্যুৎ চালিত করার উদ্দেশ্যেই মূল্যত এই আইনটি প্রনয়ন করা হয়েছে – ইলেকট্রিক মোটরযান নীতিমালা ২০২৩
ইজি বাইক কি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে? না । ‘ইলেকট্রিক মোটরযান’ অর্থ এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে চালিত যে-কোনো মোটরযান, যার চালিকা শক্তি উক্ত মোটরযানে বৈদ্যুতিক চার্জ অথবা সংযুক্ত রিচার্জেবল ব্যাটারি। বাইসাইকেল বা রিকশা এবং রিকশা ভ্যান এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইলেকট্রিক মোটরযান হওয়ার শর্ত কি কি ? ইলেকট্রিক মোটরযানের মোটর নষ্ট বা অকেজো বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে, তা প্রতিস্থাপন/বদল করা যাবে। এক্ষেত্রে সড়ক পরিবহণ বিধিমালা, ২০২২ অনুযায়ী একই ক্ষমতা, গঠন এবং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মোটর ব্যবহার করতে হবে।ইলেকট্রিক মোটরযানের চার্জিং সিস্টেম বাংলাদেশে প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের (ভোল্টেজ, ফ্রিকোয়েন্সি ইত্যাদি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগের বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশিকা (Electric Vehicle Charging Guideline, 2022) অনুসরণ করতে হবে।
ইলেকট্রিক মোটরযান নির্মাণ, সরঞ্জামাদি ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ ও সড়ক পরিবহণ বিধিমালা, ২০২২ (ইঞ্জিন সংশ্লিষ্ট বিধানাবলি ব্যতীত) প্রযোজ্য হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্রেকিং, স্টিয়ারিং, লাইটিং, সাসপেনশন, হর্ন ইত্যাদি সিস্টেম ইঞ্জিনচালিত অনুরূপ মোটরযানের সমতুল্য হতে হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের নিরাপত্তামান ( Safety standard) অনুরূপ ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের সমতুল্য হতে হবে। ইলেকট্রিক শক বা অন্য কোনো ঝুঁকি/বিপত্তি এড়াতে ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্যাটারি ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি/ব্যবস্থাদি এমনভাবে স্থাপন/সংস্থাপন করতে হবে যাতে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যাত্রীদের সুরক্ষা (Safety) নিশ্চিত হয়; লেডেন ওজন অবস্থায় সরকার/কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত গতিসীমায় বা আইনে উল্লিখিত গতিতে চলাচলের সক্ষমতা ইলেকট্রিক মোটরযানের থাকতে হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ওভারহ্যাঙ্গসহ অন্যান্য পরিমাপের (Dimension) ক্ষেত্রে প্রমিতমাণ বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ ও সড়ক পরিবহণ বিধিমালা, ২০২২ অনুযায়ী প্রযোজ্য হবে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের ইকনোমিক লাইফ কিভাবে নির্ধারিত হইবে? ‘ইকনোমিক লাইফ’ অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন প্রদান করতে হবে। ইলেকট্রিক মোটরযান বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের লাইফটাইম সরকার নির্ধারণ করবে এবং নির্ধারিত ইকনোমিক লাইফ শেষে ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং স্ক্র্যাপ করতে হবে।
স্টেজ ক্যারিজ বা কন্ট্রাক্ট ক্যারিজ হিসাবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক মোটরযানের ভাড়া সরকার নির্ধারণ/ পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে।
রুট পারমিট লাগবে? হ্যাঁ। ইলেকট্রিক মোটরযানের রুট পারমিট প্রদানের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ এবং রুট পারমিট-সংক্রান্ত প্রচলিত বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে এবং রুট পারমিট প্রদানের ক্ষেত্রে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটি/সংশ্লিষ্ট রুট পারমিট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্যাটারির চার্জ ধারণনক্ষমতা (একবার চার্জে সর্বোচ্চ কিলোমিটার চলাচলের সক্ষমতা), চার্জিং অবকাঠামোগত সুবিধা ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে।
ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ PDF Download
ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ২০২৩ । ইলেকট্রিক মোটরযান অগ্রাধিকার পাইবে
- ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের প্রচলিত রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অনুযায়ী ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
- ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ট্যাক্সটোকেন, রুটপারমিট যে ফরম্যাটে প্রদান করা হচ্ছে ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে একই ফরম্যাট ব্যবহারযোগ্য (ইঞ্জিনসম্পর্কিত বিষয়াদি ব্যতীত)।
- কর্তৃপক্ষ বা যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটি সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী ইলেকট্রিক মোটরযান (EV) রেজিস্ট্রেশন প্রদান করবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বা যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটি ইলেকট্রিক মোটরযানকে অগ্রাধিকার দিবে।
- বাজারজাতকরণ বা রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পূর্বে স্থানীয় প্রস্তুতকারী/ উৎপাদনকারী/ সংযোজনকারী/আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বিআরটিএ থেকে ইলেকট্রিক মোটরযানের মডেলভিত্তিক Complete Knock – Down (CKD) / Completely Built Up (CBU) যে-কোনো ধরনের মোটরযানের ক্ষেত্রে ‘টাইপ অনুমোদন’ নিতে হবে। টাইপ অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রচলিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
- রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত ডিলার/এজেন্ট/আমদানিকারক/স্থানীয় প্রস্তুতকারী/উৎপাদনকারী কর্তৃক ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ও মোটর সাইকেল ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করা যাবে না।
- ইলেকট্রিক মোটরযান (EV) রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার সংখ্যা, কিউবিক ক্যাপাসিটি (CC), অশ্বশক্তি (Horse Power), ইঞ্জিন নাম্বার, জ্বালানির স্থলে যথাক্রমে মোটরের সংখ্যা, মোটরের ক্ষমতা (কিলোওয়াট), ব্যাটারির ক্যাপাসিটি (kWh), মোটরের নম্বর, ইলেকট্রিসিটি উল্লেখ থাকতে হবে; এবং
- ইলেকট্রিক মোটরযান জনপ্রিয় করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করবে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ফি/চার্জ কেমন হবে?
ইঞ্জিনচালিত যেসব শ্রেণির মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ফি ইঞ্জিন সিসি-এর উপর নির্ধারিত আছে সেসব শ্রেণির ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে মোটরের ক্যাপাসিটি (kW)-এর ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আসন/ওজন-এর ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হবে। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ অর্থ বিভাগের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সড়ক পরিবহণ বিধিমালা, ২০২২ অনুসরণপূর্বক ইলেকট্রিক মোটরযানের ফি/চার্জ নির্ধারণ/পুনর্নির্ধারণ করবে এবং আগামী ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহণ খাতে ব্যবহৃত মোটরযানের ন্যূনতম ৩০% ইলেকট্রিক মোটরযান ক্যাটাগরিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকের জন্য অর্থ বিভাগ/জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন নম্বর কিভাবে নির্ধারিত হইবে? ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে মোটরযানের ধরন অনুযায়ী ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের ন্যায় রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রযোজ্য হবে। তবে যেসকল মোটরযানের সিরিজ সিসি-এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত রয়েছে বা আছে সেসব মোটরযানের জন্য সিসি-এর সমতুল্য কিলোওয়াট-এর ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বারপ্লেট, আরএফআইডি ট্যাগ, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি), স্টিকার/লেবেল ইত্যাদি প্রযোজ্য হবে; এবং ইলেকট্রিক মোটরযান শনাক্তকরণের লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশন সনদে মোটরযানের শ্রেণি/বডির ধরন বা উপযুক্ত স্থানে ‘Electric Vehicle (EV)’ সন্নিবেশিত করতে হবে।